ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাবলিক টয়লেটভীতি দূর হলো নারীদের

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

পাবলিক টয়লেটভীতি দূর হলো নারীদের

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে মেঝে। চারদিকে ঝলমলে আলো। দু’জন নারী কর্মচারী সার্বিক কর্মকা- তদারকি করছেন। কিছুক্ষণ পরপর মেঝে পরিষ্কারের কাজেও ব্যস্ত থাকছেন তারা। ১২ ঘণ্টা করে দুই শিফটে মোট ৪ জন নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। এটি রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার আধুনিক পাবলিক টয়লেটের নারী অংশের দৃশ্য। বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে এটি একটি পাবলিক টয়লেট। রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ফার্মগেট এলাকার পার্ক সংলগ্ন আধুনিক পাবলিক টয়লেটটি সরেজমিনে এমনটিই দেখা গেছে। সাধারণ পথচারীদের ব্যবহারের পরও এই পাবলিক টয়লেটটি রয়েছে অত্যন্ত ঝকঝকে। এর প্রতিটি কক্ষে রয়েছে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও উন্নত মানের হাই ও প্লেন কমোড। রয়েছে প্রতিবন্ধীদের টয়লেট ব্যবহারের সুব্যবস্থা। পাঁচ টাকার রসিদ সংগ্রহে মিলবে এ টয়লেটের সেবা। তবে প্রতিবন্ধীরা এ টয়লেট সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন এ বিশাল ঢাকা নগরীতে প্রায় ৫০ লাখ ভাসমান নাগরিকের চলার পথে টয়লেট ব্যবহারের সুবিধার্থে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নারীবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটিতে আরও বেশকিছু পাবলিক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। গত ১০ নবেম্বর ফার্মগেট সংলগ্ন এই আধুনিক পাবলিক টয়লেটটি উদ্বোধন করেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। এসব টয়লেটই দেশের প্রথম নারী শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পাবলিক টয়লেট। নির্মাণের পর পরিবশে ও ব্যবস্থাপনা দেখে এসব টয়লেট ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নারী পথচারীরা। সূত্র জানায়, রাজধানীবাসীর স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতেই এ পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে ৫টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট। এছাড়া আরও কয়েকটি স্থানে টয়লেট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। টয়লেটের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, এসব টয়লেটে নারী-পুরুষদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পৃথক লকার ও হাত ধোয়ার জন্য পৃথক স্থানসহ লিক্যুইড হ্যান্ডওয়াশ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে প্রতিবন্ধীবান্ধব উন্নত ব্যবস্থা। ইচ্ছে করলেই যে কোন প্রতিবন্ধী খুব সহজেই এসব টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিবন্ধীদের টয়লেট ব্যবহারের জন্য পৃথক ঢালু সিঁড়ি (র‌্যাম্প) রয়েছে। রয়েছে আধুনিক বিশেষ কমোড। তবে পাবলিক টয়লেটের সেবার মান আগামীতে এ রকমই থাকবে, না-কি অতীতের মতো নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, সাধারণ মানুষের মনে এখন এমনই প্রশ্ন। এ বিষয়ে টয়লেট ব্যবহারকারী নাসরীন আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, এর আগে রাজধানীতে যেসব পাবলিক টয়লেট ছিল সেগুলোতে প্রবেশ তো দূরের কথা চেহারা দেখলেই ভয় করত। কি নোংরা পরিবেশ ও দুর্গন্ধ! এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। আগামীতে দেশ আরও উন্নত হবে। পাবলিক টয়লেট উন্নত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে। তবে কিছুদিনের জন্য দৃশ্য পাল্টালে হবে না বরং এসবের পরিচর্যা করতে হবে। প্রতিটি টয়লেটের দরজার সামনেই দেখা গেলো স্যান্ডেল রাখা। টয়লেট ব্যবহারের জন্যই দরজার সামনে রাখা হয়েছে কয়েক জোড়া স্যান্ডেল। আধুনিক টয়লেট ব্যবহার করতে আসা পথচারীরা নিজেদের স্যান্ডেল বা জুতা রেখে দরজায় রাখা স্যান্ডেল পড়ে ভেতরে যাচ্ছেন। নিয়মিত এসব স্যান্ডেল পরিচ্ছন্ন করছেন কর্তব্যরতরা। এ বিষয়ে পারিছন্নকর্মী মর্জিনা বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, পাবলিক টয়লেটটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাই আমাদের কাজ। পরিষ্কার থাকলে ব্যবহারকারীরাও নোংরা করবে না। ব্যবহারকারীদের মধ্যেও সচেতনতা থাকা উচিত। অনেকেই আছেন ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা করেন। এই মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। জনসাধারণকে সিøপ সংগ্রহ করে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে। নির্ধারিত মূল্য দেয়া আছে পাঁচ টাকা। দেয়ালে টানানো নির্দেশনায় লেখা রয়েছে ‘লকার সুবিধার পেতে ৩০ টাকা জমা দিন। টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় লকারের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে ২৫ টাকা ফেরত নিন। টয়লেট ব্যবহাকারীদের লকারে ব্যাগ রাখার সুবিধা রয়েছে। তবে এই লকার ব্যবহারের জন্য আলাদা কোন টাকা দিতে হবে না। ৩০ টাকা জমা দিলে পাঁচ টাকা টয়লেট ব্যবহারের জন্য কেঁটে রেখে যথারীতি সিøপ দেয়া হবে। নগরীর এসব পাবলিক টয়লেটের আশপাশের পরিবেশ নিরাপদ রাখতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সিসি ক্যামেরা বিশেষ নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখছে। পাবলিক টয়লেটে প্রবেশ পথে রয়েছে দুটি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। এছাড়া জনসচেতনতায় টয়লেটের ভেতরে কিছু নির্দেশনাও দেয়া রয়েছে। একজন ব্যবহারকারী যাতে এই নির্দেশনাগুলো দেখেই সহজে টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের সময় পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ভাবেন। টয়লেটের ভেতরে দেয়ালে ৩টি করে নির্দেশনা রয়েছে। সাদা-লাল রঙের এই বোর্ডে লেখা রয়েছে ‘পানি ঢালুন’, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন টিস্যু পেঁচিয়ে ঝুড়িতে ফেলুন’, ‘হাত ধুয়ে নিন।’ টয়লেটের ভেতরে দেয়ালে রয়েছে, ৪টি সচেতনতামূলক নির্দেশনা। হাত ধুয়েছেন কি?, থুথু ফেলবেন না, মেঝে শুকনা ও পরিচ্ছন্ন রাখুন ও ধূমপান নিষেধ। অপরদিকে বেসিনের উপরে লেখা রয়েছে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। নিরাপদ খাবার পানি, বোতল না থাকলে কাউন্টার থেকে গ্লাস কিনে নিন, এখানে হাত-মুখ ধোয়া নিষেধ। পরিচ্ছন্নকর্মী সুফিয়া বেগম বলেন, এখানে যে নির্দেশনাগুলো লেখা আছে, যদি ব্যবহারকারীরা মেনে চলেন তবে তারা নিজেদের বাসা-বাড়ির টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিন অর্ধকোটি মানুষ চলাচল করেন। নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে দরকার অত্যাধুনিক এসব পাবলিক টয়লেট। ইতিমধ্যে রাজধানীর ১২টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। শীঘ্রই এগুলোর কাজ শেষ হবে এবং জনস্বাস্থ্যে এগুলো ব্যবহৃত হবে। ফার্মগেটের পাশাপাশি মহাখালী, শ্যামলী, বাহাদুর শাহ পার্ক ও সিআর দত্ত রোডের সামনের পাবলিক টয়লেটে দেখা মিলেছে নারীবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পাবলিক টয়লেটের। অচিরেই পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে রাজধানী। এজন্য দরকার প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা।
×