ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় দিবস তায়কোয়ান্দো

যেখানে সফল প্রবীণ ও নবীন তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়...

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

যেখানে সফল প্রবীণ ও নবীন তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা বিখ্যাত গানের কলির প্রথম অন্তরাটি এরকম, ‘তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা’ ... তবে গত ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ালটন বিজয় দিবস তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা’য় দেখা গেছে ব্যতিক্রমী দৃশ্য। এখানে সন্ধান পাওয়া যায় এমনই এক তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়ের (ঢাকা ক্লাবের হয়ে ৬০ কেজি ওজন শ্রেণীতে তিনি স্বর্ণপদক জয় করেন), যার বয়স শুনলে পাঠকরা রীতিমতো ভিমরি খাবেন। তার নাম ফজলুল করিম চৌধুরী। ডাকনাম জাহাঙ্গীর। তার বয়স? ৬৩। যে বয়সে তার বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেবার কথা, সে বয়সে এসেছেন মার্শাল আর্টের এই খেলাটি খেলতে। স্বভাবতই কৌতূহল জাগলোÑ তিনি যদি এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হন, তাহলে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়টি কে? অনেক খুঁজে পাওয়াও গেল তেমনই একজনকে। তার নাম প্রিন্স আইমান। বয়স মাত্র সাড়ে ছয় (যদিও ক্যারিয়ার শুরু মাত্র চার বছর বয়সে)। ফজলুলের প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু করা যাক। নোয়াখালীর মাইজদিতে পৈত্রিক নিবাস হলেও ঢাকায় জন্ম নেয়া ফজলুলের প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু করা যাক। রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ১৯৭৮ সালে তৎকালীন জার্মানিতে চলে যান। তখন তার বয়স ৩৮। সেখানকার ফ্রাঙ্কফুটের একটি কারাতে ক্লাবে ভর্তি হন। নয় মাস প্রশিক্ষণ নেন এবং গ্রিন বেল্ট লাভ করেন। ১৯৮৫ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন, বিয়ে করেন (তার এক ছেলে ব্যাংকার ও এক মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার, স্ত্রী নীপা চৌধুরী গৃহবধূ) এবং বিভিন্ন ব্যবসা করেন (এখন কিছু করেন না, লালবাগে একটি বাড়ির মালিক। ভাড়া দিয়ে বেশ ভালই আয় করেন)। মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ বিদেশে গিয়ে তায়কোয়ান্দো শিখে আসলেও এত বছর দেশে আয়োজিত কোন টুর্নামেন্টেই অংশ নেননি ফজলুল। সেই হিসেবে ‘ওয়ালটন বিজয় দিবস কারাতে প্রতিযোগিতা’ দিয়েই তার অভিষেক হলো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বয়স বেড়ে যাচ্ছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ায় শরীরটা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। ভাবলাম শরীর ঠিক রাখতে শিখে রাখা বিদ্যাটা আবার কাজে লাগাই না কেন। এজন্য আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ তায়কোয়ান্দো এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সোলায়মান শিকদারের কাছে। তিনিই আমাকে তায়কোয়ান্দোতে ফেরার সব ব্যবস্থা করে দেন। গত মার্চে ভর্তি হই আজিমপুর বেঙ্গল তায়কোয়ান্দো সংস্থায়। নয় মাস প্রশিক্ষণের পর প্রথমে গ্রিন ও পরে রেড বেল্ট পাই। এখন ব্ল্যাক বেল্ট পাবার অপেক্ষায় আছি। বয়স ষাটের বেশি, বিজয় দিবস তায়কোয়ান্দোতে খেলতে গেলে ব্যথা পেতে পারেন, এমন ভয় নেই? ‘মোটেই না। ভয় পাব কেন? আর ব্যথাই বা পাব কেন? সব টেকনিক শিখে খেললে এগুলো কোন সমস্যাই না। এখানে মনোবলটাই আসল। তবে একটু সাবধানে খেলতে হবে আর কি।’ ফজলুলের দৃঢ় কণ্ঠস্বর। প্রিন্স আইমানের বাবা প্রিন্স নান্নু নিজেও একজন উশু এবং তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় এবং কোচ (মিরপুর তায়কোয়ান্দো এ্যাসোসিয়েশন, এই ক্লাবের সভাপতিও বটে)। ৩৮ বছর বয়সী নান্নু জাতীয় পর্যায়ে খেলেছেন। উন্মুক্ত উশু চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম হন ২০০৮ সালে। সার্বিকভাবে ক্যারিয়ারে জিতেছেন দুটি স্বর্ণ এবং তিনটি তাম্রপদক। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে আইমান পড়ে ক্লাস ওয়ানে। বিজয় দিবস তায়কোয়ান্দোতে সে অংশ নেয় তার বাবার ক্লাবের হয়েই মাইনাস ২০ কেজি ওজন শ্রেণীতে এবং স্বর্ণপদকও জেতে। এর আগে আইমান ২০১৪ সালে বাংলাদেশ কাপে অংশ নিয়ে স্বর্ণ জিতেছিল (মাইনাস ১৪ কেজিতে)। সেটাই ছিল তার অভিষেক টুর্নামেন্ট। নান্নুর মেয়ে নাফিসা প্রিন্সেসও তায়কোয়ান্দো খেলে। জাতীয় পর্যায়ে খেলে সে এ পর্যন্ত পাঁচ স্বর্ণ জিতেছে। এবারের আসরে সে ৫৫ কেজিতে জেতে রৌপ্যপদক। ‘তায়কোয়ান্দো খেলতে অনেক ভাল লাগে। ব্যথা পাব, এগুলো চিন্তা করি না। এই টুর্নামেন্টের জন্য বাবা আমাকে দুইমাসের ট্রেনিং দিয়েছে। বড় হয়ে আমি দেশের এক নম্বর খেলোয়াড় হতে চাই।’ এক নিঃশ^াসে আইমানের ভাষ্য। আগামীতে আইমানের স্বপ্ন সফল হয় কি না এবং বর্ষীয়ান ফজলুল আর কতদিন তায়কোয়ান্দো খেলতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×