ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছর মেয়াদী ক্যালেন্ডারের প্রথম বর্ষ শুরু

নতুন বছরে কি কথার সঙ্গে কাজে মিল থাকবে বাফুফের?

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

নতুন বছরে কি কথার সঙ্গে কাজে মিল থাকবে বাফুফের?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত বছরের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ফল রচিত হয়। ‘এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে অফ-২’এ ভুটানের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। ফলে আগামী তিন বছর বাংলাদেশ ফিফা ও এএফসি স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের ফুটবলের এই অধঃপতনের দায়ভার কোনভাবেই এড়াতে পারে না বাফুফে। তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং অদূরদর্শিতায় দেশের ফুটবলের এ অবস্থা। ফুটবল উন্নয়নে তৃণমূলে যেতে হবে, নতুন খেলোয়াড় তুলে আনতে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে জোর দিতে হবে। অথচ কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের আমলে তৃণমূল ফুটবল বলতে গেলে নির্বাসনেই চলে যায়। গত নয় বছরে সালাউদ্দিন পাত্তাই দেননি তৃণমূল এবং বয়সভিত্তিক ফুটবলকে। মজেছিলেন জাতীয় দল এবং পেশাদার লীগ নিয়েই। পাইপলাইনে দক্ষ ফুটবলার না থাকার পরিণাম এই নয় বছরে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই বিপর্যয়ের পর গত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হুঁশ ফিরে বাফুফের। প্রণয়ন করে একটি ৪ বছর মেয়াদী (২০১৭-২০) পূর্ণাঙ্গ ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো বিশ্বের সব ফুটবল ফেডারেশন যেমনটা পালন করে। যেমন লীগ এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। অন্যটি হলো সার্বিক ফুটবলের উন্নয়নের দায়িত্ব নেয়া। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০১৭, অর্থাৎ নতুন বছরে বাফুফের কার্যক্রমগুলো কি কি? এ মাসেই ৫ বিভাগে ৭ দিন করে খেলোয়াড়দের ট্রায়াল হবে। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ এবং বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগের দলবদল শুরু হবে এক সঙ্গে, আগামী এপ্রিল থেকে। মে মাসে হবে ফেডারেশন কাপ। পেশাদার লীগ জুনে শুরু হয়ে শেষ হবে অক্টোবরে। বরাবরের মতো দল বদলের সেকেন্ড উইন্ডোও থাকছে। সেটি হবে আগস্ট মাসে। যাতে করে প্রিমিয়ার লীগ বা চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রয়োজনীয় ফুটবলার নেয়া যেতে পারে। মে মাসে হবে ফেডারেশন কাপ। বিপিএল এবং বিসিএলসহ মোট ১৬ দল অংশ নেবে ফেডারেশন কাপে। স্বাধীনতা কাপ দিয়ে নবেম্বরে শেষ হবে মৌসুম। টুর্নামেন্টটি শেষ হবে ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে। তাছাড়া বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা স্কুল ফুটবল। ফেব্রুয়ারিতে হবে সোহরাওয়ার্দী কাপ। তবে নাম বদলে জাতীয় জেলা চ্যাম্পিয়নশিপ অনুর্ধ-১৮ টুর্নামেন্ট নামে। এজন্য জেলাগুলোকে ৫ মাস সময় দেয়া হবে। জেলা লীগ শেষে হবে শেরেবাংলা কাপ। তবে এই টুর্নামেন্ট এর ও নাম বদলেছে। নতুন নাম জাতীয় অ-১৮ জেলা লীগ। মার্চে এএফসির আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থাকায় এবার আন্তর্জাতিক আসর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সূচীতে পরিবর্তন আসতে পারে। বছরের শেষে অনুর্ধ-১৮ দলগুলোকে নিয়ে টুর্নামেন্ট হবে। পরবর্তীতে এই টুর্নামেন্টই লীগ আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে বাফুফের। সাধারণত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ছেলেদের সাফ টুর্নামেন্ট থাকে। যেহেতু বছরের শেষ দিকে সাফ এবং শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ থাকে, সেজন্য ওই সময়ে জাতীয় দলের দেড় থেকে দুই মাসের ক্যাম্প হবে। এছাড়া বছরের শুরুতেই স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপ, ফেব্রুয়ারিতে পাইওনিয়ার লীগ হবে। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগের খেলাগুলো বছরের বিভিন্ন সময়সূচী অনুযায়ী আয়োজিত হবে। গত বছরের চেয়ে এ বছরের ক্যালেন্ডারের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে শেখ কামাল ক্লাব কাপ অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ যেহেতু মার্চ মাসে রাখা হয়েছে এবং ওই সময় বিভিন্ন দেশের এশিয়ান কাপে খেলা রয়েছে, তাই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সূচীতেও পরিবর্তন আসতে পারে। অনেকেই বলেন, সালাউদ্দিন যে কোন কাজই শুরু করেন ঢাকঢোল পিটিয়ে, মহাসমারোহে। কিন্তু তার কাজের শেষটা আর দেখা যায় না। এখন দেখার বিষয়, তার নতুন এই মহাপরিকল্পনা দিয়ে দেশের ফুটবলের আদৌ কোন উন্নয়ন ঘটাতে পারেন কি না, নাকি এটাও হয়ে থাকবে নিছকই তার আরেকটা স্টান্টবাজি!
×