ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নগরে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

নগরে দুর্ভোগ

ঢাকার যানজট সমস্যা বহুল আলোচিত একটি বিষয়। গত দুই দশকে ঢাকার যানজট নিরসনে বহু সরকারী প্রতিশ্রুতি শোনা গেছে। বহু পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। ঢাকার যানজট সমস্যা নিয়ে গবেষণাও কম হয়নি। কার্যত যানজটের চিরচেনা চিত্রের তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। বুধবার রাজধানীর যানজট নাগরিক জীবনে স্মরণাতীতকালের দুঃস্মৃতি বহন করেছে। এদিন ছিল ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র সোহরাওয়াদী উদ্যানে অনুষ্ঠানটি হওয়ায় থমকে দাঁড়ায় ঢাকা। শহরের প্রধান সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যানবাহনের জটলা বাধে সরু রাস্তা ও অলিগলিতে। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোর যানবাহন চলাচলেও। এতে সমস্যায় পড়তে হয় অসংখ্য মানুষকে। এমনিতে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই ঢাকার জন্য কর্মব্যস্ত দিন। স্বাভাবিক যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো সমাবেশ কেন্দ্রিক যানজট। তুলনামূলক কম হলেও একই অবস্থা ছিল পহেলা জানুয়ারি। এদিন সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশ এবং বিকেলে সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিপাকে ফেলে নগরবাসীকে। অনেকটা একই অবস্থা দেখা গেছে বৃহস্পতিবার ৫ জানুয়ারি উদযাপনকে কেন্দ্র করে। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র রক্ষা দিবস অন্যদিকে বিএনপির বিক্ষোভ দিবস। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক কারণের এই যানজট নগরবাসীর জন্য দুর্ভোগই বয়ে আনে। এমনিতে প্রতিদিনই রাজধানীবাসীর জীবন থেকে মূল্যবান কর্মঘণ্টা কেড়ে নিচ্ছে অসহনীয় যানজট। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, শুধু যানজটের কারণে প্রতিমাসে ২২৭ কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। যা বছরে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকায়। রাজধানীতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষের চাপ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, অপর্যাপ্ত ও অনুন্নত সড়ক ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন চলাচল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাসের অপ্রতুলতা, অবৈধ ফুটপাথ দখল, রিক্সা ও অন্য ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের অবাধ চলাচলের মতো কারণগুলো প্রধানত যানজটের জন্য দায়ী। প্রায় দুই কোটি বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে বাড়িঘর, হাট-বাজার। দ্রুত বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু সে অনুপাতে রাস্তাঘাট বাড়ানো যাচ্ছে না। সঙ্কীর্ণ রাস্তাঘাটে ছুটে চলছে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন। ঢাকার নাগরিক সমস্যা নিরসনে নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও সে বিষয়ে কোন উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে কখনও দেখা যায়নি। ঢাকা শহরের যানজটসহ বহুবিধ এবং নাগরিক সমস্যা হয়ত রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে নগরীর সেবা সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয় করা সম্ভব হলে অর্ধেক কমে আসতে পারে। ইতোমধ্যে নগরীর দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদ্বয় সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। সেই সঙ্গে নগরীর শিল্প-কারখানা ও প্রশাসনিক কর্মকা-ের বিকেন্দ্রীকরণের বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে। যানজটমুক্ত, নিরাপদ, গতিশীল ও পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে হলে আধুনিক ও দীর্ঘমেয়াদী নগর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে। আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা যেতে পারে। ওয়ার্কিং ডে তথা কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোন রাজনৈতিক সমাবেশ বা বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন না থাকলে এই ধরনের নাগরিক দুর্ভোগ খানিকটা হলেও লাঘব হতো। এই বিষয়টি রাজনীতিবিদরা ভেবে দেখতে পারেন। যেহেতু জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি তাই জনদুর্ভোগ বাড়ায় তেমন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী কারও কাম্য হওয়া উচিত নয়।
×