ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাবিতে চারুকলা প্রদর্শনী চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের বিশাল ভা-ার, মুগ্ধ দর্শনার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

রাবিতে চারুকলা প্রদর্শনী চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের বিশাল ভা-ার, মুগ্ধ দর্শনার্থী

মামুন-অর-রশিদ রাজশাহী, কায়কোবাদ খান, রাবি ॥ নবীন শিল্পীদের নান্দনিক সব শিল্পকর্মের বিপুল সমাহার নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদে আয়োজন করা হয় ৯ দিনব্যাপী চারুকলা প্রদর্শনী। চারুকলা অনুষদ ভবনের ছয়টি কক্ষের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পায় শিক্ষার্থীদের আঁকা পেইন্টিং। মেঝেতে সারি সারি সাজানো হয় ভাস্কর্য ও মৃৎশিল্প। বৈচিত্রে ভরা এসব শিল্পকর্ম মুগ্ধ করেছে শিল্পপ্রেমীদের। গত ২৯ ডিসেম্বর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে নয় দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। প্রদর্শনীতে চারুকলা অনুষদের তিন বিভাগের ২৮৮ শিক্ষার্থীর ৩৭৯ শিল্পকর্ম স্থান পায়। এগুলোর মধ্যে ৭১টি চিত্রকলা, ৬০টি প্রাচ্যকলা, ছাপচিত্র ৫০টি, ডিজাইন ৫৪টি, কারুশিল্প ৪৭টি, শিল্পকলার ইতিহাস ৮টি, মৃৎশিল্প ৫৪টি এবং ভাস্কর্য ছিল ৩৫টি। শিল্পকর্মের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় পেন্সিল, উড কার্ভিং, উড কোলাজ, জলরং, তেল রং, এ্যাক্রেলিক, পোস্টার কালার, সরাভাঙ্গা ও ফাউন্ড অবজেক্ট। চারুকলা অনুষদের এই শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা এখনও শেষ হয়নি। নবীন শিল্পীদের কাজগুলো দেখে মুগ্ধ হতে হয়। নানা ধরণের নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছেন শিল্পীরা। তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে নৈসর্গিক সবুজ প্রকৃতি, নারীর প্রতি সামাজিক বৈষম্য, সমাজে আকস্মিকভাবে বাড়তে থাকা শিশু সহিংসতা, সংগ্রামী মানুষের জীবন, জীবনের শেষ স্পন্দনসহ পরিবেশ প্রতিবেশ থেকে নেয়া বিভিন্ন উপাদান। নবীন শিল্পীরা কাজ করেছেন যে যার মতো। চারুকলার পাঠ কাজে লাগিয়ে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে এক একজন নবীন শিল্পী লোকশিল্পের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল ঘটিয়ে বিনির্মাণ করেছেন শিল্পকর্ম। তাদের কাজে হয়তো নির্ভুল নয়, তবে প্রদর্শনীর মাধ্যমে নবীন শিল্পীদের সমকালীন ভাবনা ও শিল্পরুচি সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। প্রদর্শনীতে সকল মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ হয়ে শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার লাভ করেছে অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নুর আলম মিয়ার ‘নিসর্গ’। এই চিত্রকলায় শিল্পীর নিপুণ দক্ষতায় ফুটে উঠেছে সাঁওতাল পল্লীর নৈসর্গিক সবুজ প্রকৃতির অনিন্দ্য রূপ। ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনে শ্রেণিশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পায় অনুপমের ‘শেষ স্পন্দন’। বর্বরোচিত নির্যাতনে নিহত শিশু রাজনের করুণ মুখচ্ছবি নির্মাণ করেছেন তিনি। ফাইবারগ্লাসের মাধ্যমে সৃজিত এই ভাস্কর্য হৃদয়পটে আলোড়ন তোলে। এছাড়া শ্রেণি শ্রেষ্ঠ, মাধ্যম শ্রেষ্ঠ, নিরীক্ষাধর্মী, ক্যাটালগ কভার ডিজাইন ও পোস্টার ডিজাইন ক্যাটাগরিতে আরও ৪৪টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য প্রদর্শনীটি উন্মুক্ত ছিল। শিল্পরসের টানে এখানে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন বয়সের শিল্পানুরাগীরা এসে ঘুরে ঘুরে দেখছেন নবীন শিল্পীদের গড়া কাজ। এ প্রদর্শনী চলে শুক্রবার পর্যন্ত। সোমবার বন্ধুদের সঙ্গে প্রদর্শনী ঘুরতে এসেছিলেন চারুকলা অনুষদের ছাত্রী রওনক হাসান। প্রদর্শনী নিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা যেমন তাদের মনের নান্দনিক ক্ষুধা মেটান, তেমনি আমাদের কাজ গুলো সকলের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ থাকে। তবে শিল্পকর্মগুলো প্রদর্শনের ভাল ক্ষেত্র আর্ট গ্যালারি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে রাবিতে আর্ট গ্যালারি নেই। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে তাই ক্লাসরুমগুলোতে এই প্রদর্শনী করতে হয়। তাই একটি ভালো মানের আর্ট গ্যালারি নির্মাণের দাবি চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
×