ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন বলিউড অভিনেতা ওম পুরি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

চলে গেলেন বলিউড অভিনেতা ওম পুরি

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ না ফেরার দেশে চলে গেলেন পদ্মশ্রীখ্যাত ভারতের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা ওম পুরি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক এক গণমাধ্যম জানায়, শুক্রবার সকালে মুম্বাইয়ের বাসায় নিজের বিছানায় এ অভিনেতাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হিন্দি মূলধারার চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ব্রিটিশ, পাকিস্তানি ও হলিউডের চলচ্চিত্রে কাজ করা খুব কম অভিনেতাদের একজন ছিলেন ওম পুরি। ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মশ্রী আর ব্রিটেনের রানীর দেয়া ওবিই সম্মান পেয়েছেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। ওম পুরি জীবদ্দশায় স্মরণীয় কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী। শেষ দিনগুলোতে ওম পুরির পাশে ছিলেন তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া স্ত্রী নন্দিতা পুরি ও পুত্র ইশান পুরি। ওম পুরির মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু চলচ্চিত্র নির্মাতা অশোক পন্ডিত। টুইটারে তিনি লিখেছেন, বর্ষীয়ান অভিনেতা ওম পুরিজি আর নেই শুনে মনটা বেদনাহত আর বিমর্ষ হয়ে গেলো। জনপ্রিয় এ অভিনেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ চলচ্চিত্র জগতের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সহ-অভিনেতা অনুপম খের, চিত্রনির্মাতা করন জোহর, মাধুর ভা ারকার ও সুজিত সরকারও অভিনেতা ওম পুরির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। চার দশক ধরে নানা ধরনের চরিত্রে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে আসা ওম পুরিকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল তার ভিলেন চরিত্রের অভিনয়। কেবল ভারতীয় মূল ধারার চলচ্চিত্রে নয়, বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রেও তার বলিষ্ঠ অভিনয় দেখেছে ভারতীয় উপমহাদেশের দর্শক। হলিউড ও ব্রিটিশ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও তিনি খ্যাতি পেয়েছেন। ভারতে পাকিস্তানী শিল্পীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে বিতর্কে জড়ানোর পর গত বছর অক্টোবরে অভিনয় ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়া এই চলচ্চিত্র তারকা। ওম পুরি ১৯৫০ সালের ১৮ অক্টোবর হরিয়ানার আমবালায় জন্ম গ্রহণ করেন। মঞ্চের সঙ্গেও সখ্যতা ছিল তাঁর। পুনের ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের স্কুল অব ড্রামা থেকে ১৯৭৩ সালে ডিগ্রী নেন। সেখানে তার সহপাঠী ছিলেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ। তিন বছর পর ১৯৭৬ সালে মারাঠি চলচ্চিত্র ‘ঘাসিরাম কোতোয়াল’ দিয়ে পর্দায় অভিষেক হয় ওম পুরির। নাট্যকার বিজয় টেন্ডুলকরের মারাঠি নাটকের ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছিল চলচ্চিত্রটি। এরপর ‘আক্রোশ’, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’, ‘অর্ধ সত্য’, ‘পার’, ‘মাচিস’, ‘মিরচ মাসালা’, ‘ধারাভি’র মতো দর্শকপ্রিয় বহু চলচ্চিত্র ওম পুরিকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। ভারতীয় চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে, নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরি, শাবানা আজমী ও স্মিতা পাতিলের হাত ধরেই আশির দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের গতিপথ পাল্টে যায়। ওম পুরি ১৯৯০ সালে ব্রিটিশ নির্মাতা রিচার্ড এ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী’ চলচ্চিত্রে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন। ওই বছরই ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে। তবে গত বছর ‘ডার্টি পলিটিক্স’ চলচ্চিত্রে মল্লিকা শেরাওয়াতের সঙ্গে খোলামেলা চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচিতও হয়েছিলেন। ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ‘সিটি অফ জয়’, ‘ইস্ট ইজ ইস্ট’ ও টিভি সিরিজ ‘জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন’ এবং হলিউডের ‘সিটি অব জয়’, ‘উলফ’, ‘দ্য গোস্ট এ্যান্ড দ্য ডার্কনেস’ ও ইন্ডিয়ানা জোনসের ‘টেম্পল অব ডুম’ এ অভিনয় ওম পুরিকে পশ্চিমের দর্শকদের কাছেও পরিচিত করে তোলে। জুলিয়া রবার্টস ও টম হ্যাঙ্কসের সঙ্গে ‘চার্লি উইলসন ওয়ার’ চলচ্চিত্রে জেনারেল জিয়া উল হকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ান তিনি। তবে ওম পুরি চলে গেলেও ইতিহাস তাকে মনে রাখবে ‘আক্রোশ’, ‘অর্ধ সত্য’, ‘যানে ভি দো ইয়ারো’র মতো চলচ্চিত্রের জন্য। নাসির উদ্দিন শাহ, শাবানা আজমী আর স্মিতা পাতিলদের সমসাময়িক ওম পুরি চলে গেছেন চিরতরে; তবে পৃথিবীজুড়ে চলচ্চিত্র ভক্তদের হৃদয়ে সব সময়ই জ্বলবে তার স্মৃতির দীপশিখা। শোকাহত বলিউড : এদিকে ওম পুরির মৃত্যুতে বলিউডে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবরটি জানার পরপরই ভারতীয় অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে শোক জানিয়েছেন। অনেকে তার ছবিও শেয়ার করেছেন। অভিনেতা অনুপম খের লিখেছেন, বিশ্বাস হচ্ছে না আমাদের দারুণ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম ওম পুরি আর নেই। আমি গভীর শোকাহত। তাকে ৪৩ বছর ধরে জানতাম। আমার কাছে তিনি ছিলেন চমৎকার একজন অভিনেতা, দয়াবান ও মহৎ মানুষ। বিশ্ব তাকে এসব গুণেই স্মরণ করবে। অভিনেতা বোমান ইরানি লিখেছেন, আমাদের মধ্যকার চমৎকার একজনকে হারালাম। সহজাত অভিনয়, সোচ্চার কণ্ঠস্বর ও উদ্দীপনা ছড়ানোর জন্য পুরি সাহেবকে মনে পড়বে আমাদের। নির্মাতা মহেশ ভাট লিখেছেন, বিদায় ওম! তোমার সঙ্গে আমার একটি অংশও চলে গেলো। চলচ্চিত্র ও জীবন নিয়ে আড্ডা দেয়ার সেই আবেগী রাতের কথা ভুলবো কেমন করে? নির্মাতা করণ জোহর লিখেছেন, ওম পুরি ছিলেন সর্বজনস্বীকৃত অভিনেতা। তার চলচ্চিত্রের তালিকাটা বেশ সমৃদ্ধ। মানুষটির দক্ষতা ছিলো বিশাল। চলচ্চিত্র সত্যিকারের একজন উজ্জ্বল শিল্পীকে হারালো। নির্মাতা সুজিত সরকার লিখেছেন, ওম পুরির সঙ্গে আড্ডার মুহূর্তগুলো আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি এমন একজন চমৎকার শিল্পী ছিলেন যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। পরিচালক মধুর ভান্ডারকর বলেন, অত্যন্ত প্রতিভাবান অভিনেতা ওম পুরির চলে যাওয়ার খবর জেনে ধাক্কা খেলাম। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এটা বিরাট ক্ষতি। অভিনেতা রিতেশ দেশমুখ লিখেছেন, ওম পুরিজি আর নেই শুনে ভাষা হারিয়ে ফেলার মতো ধাক্কা খেয়েছি। তার শুন্যতা সবসময় অনুভব করবো। অভিনেতা রাজকুমার রাও লিখেছেন, সর্বকালের সেরা বৈচিত্রময় ও প্রতিভাবান অভিনেতাদের মধ্যে ওম পুরি ছিলেন অন্যতম। অভিনয় ও জীবন নিয়ে তার সঙ্গে চমৎকার আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয়েছিলো আমার। ওম পুরির আত্মার শান্তি কামনা করেছেন অভিনেতা ঋষি কাপুর ও নির্মাতা বিবেক অগ্নিহোত্রী। তাদের মতে, শিল্পীর কখনও মৃত্যু হয় না।
×