ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নারী মুক্তি আন্দোলন জোরদারের আহ্বান সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

নারী মুক্তি আন্দোলন জোরদারের আহ্বান সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘নারী নির্যাতন বন্ধ কর, নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা কর’, ‘পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-মৌলবাদ রুখে দাঁড়ান; নারী মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করুন’- সেøাগানের মাধ্যমে নারী মুক্তির আন্দোলন আরও বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটির ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে এ আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সমাজে নারীর মানবিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নারী সংগঠন হিসেবে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। সরকারী হিসাবমতে, গৃহস্থালি কর্মকা- ছাড়া বর্তমানে দেশে এক কোটি ৬৮ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে কর্মরত। আর মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজের পরিমাণ বছরে প্রায় ১০ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার সমান। জিডিপিতে এ আর্থিক মূল্য যোগ হলে নারীর হিস্যা দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ। দেশের অর্থনীতিতে যারা এত অবদান রাখছেন তাদের শ্রমের দাম সস্তা আর কাজের স্বীকৃতি প্রায় নেই বললেই চলে। বক্তারা আরও বলেন, আমাদের দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আমাদের দেশে ধর্মীয় পারিবারিক আইন বলবৎ। ফলে নারীরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারে সমান অধিকার পান না, বিবাহ-বিবাহ বিচ্ছেদ ও পারিবারিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন। সমকাজে সমমজুরি আইনে থাকলেও বাস্তবে নেই। মাতৃত্বকালীন ছুটি বেসরকারী কারখানায় সবেতন চার মাস হলেও গর্ভবতী নারীর ভাগ্যে জোটে ছাঁটাই। সঙ্গে নির্যাতন তো লেগেই আছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ রেহাই পাচ্ছে না নির্যাতনের হাত থেকে। তনু হত্যার সাড়ে নয় মাস হয়ে গেল, বিচার কি হবে? একের পর এক নির্যাতক-ধর্ষক-হত্যাকারী ক্ষমতা আর টাকার দাপটে পার পেয়ে যাচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন নারীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। সেজন্য সরকার নতুন আইন করতে যাচ্ছে, যাতে বাবা-মার সম্মতি বা আদালতের নির্দেশে ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিয়েও বৈধ হয়ে যাবে। বাল্যবিয়ের কারণ দারিদ্র্য-নিরাপত্তাহীনতা-অশিক্ষা-বেকারত্ব-যৌতুক-কুসংস্কার কোনকিছু দূর করার যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে নারীদের শত বছর আগের বেগম রোকেয়ার সময় থেকেও পিছিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য ও নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং নারীর মানবিক অধিকার আদায় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সমাবেশে নারী মুক্তি আন্দোলন বেগবান করার জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের ঢাকা নগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু এবং পরিচালনা করেন রুখসানা আফরোজ আশা। এছাড়া সভায় বক্তব্য রাখেনÑ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা নগর শাখার আহ্বায়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সামসুন্নাহার জ্যোৎস্না, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক শিপ্রা ম-ল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমরান হাবীব রুমন ও ঢাকা নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মুক্তা বাড়ৈ।
×