ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাবির পাখিমেলায় উৎসবমুখর ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

জাবির পাখিমেলায় উৎসবমুখর ক্যাম্পাস

জাবি সংবাদদাতা ॥ প্রকৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ পাখি। পাখির প্রতি মানুষের ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও থেমে নেই পাখির বিলুপ্তি। তাই পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিবছর আয়োজন করে পাখিমেলার। পাখির কিচির মিচির ডাক আর পাখিপ্রেমীদের সরব উপস্থিতিতে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে ৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১৬তম পাখিমেলা-২০১৭। মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর। অতিথি পাখির সরব সান্নিধ্যে সারাটা দিন পার করেছেন দেশী-বিদেশী অসংখ্য পাখিপ্রেমী। ‘পাখপাখালি দেশের রতœ, আসুন সবাই করি যতœ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে পাখিমেলায় দিনভর পাখিপ্রেমী, দর্শনার্থী, পর্যটক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কোলাহলপূর্ণ আর উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। পাখিমেলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সকাল থেকেই শীতকে উপেক্ষা করে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীরা বিশ^বিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের চত্ব¡রে ভিড় জমায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা ও দূর-দূরান্ত থেকে এসব দর্শনার্থীরা আসে। শুক্রবার ছুটির দিনে নগরের শত-ব্যস্ততার মধ্যে অবসাদ দূর করতে জাবি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আর পাখিমেলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে কেউ এসেছে পুরো পরিবারকে নিয়ে, আবার কেউ তার প্রিয়জনের সঙ্গে এসেছে, কেউবা আবার এসেছে বন্ধুরা মিলে। তাদের মধ্যে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, ‘এখানে এসে খুব ভাল লেগেছে। মেলায় এসে নতুন নতুন পাখিদের সম্পর্কে জানতে পেরেছি।’ মেলায় ঘুরতে আসা প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহতাব মেহেদী বলেন, ‘আমি প্রকৃতিপ্রেমী। তাই এরকম মেলা কখনও মিস করি না। যতদিন আমরা এ প্রকৃতি রক্ষা করতে পারব ততদিন আমরা ভালবাবে বেঁচে থাকব।’ সকাল সাড়ে দশটায় বেলুন উড়িয়ে পাখিমেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ড. ইনাম আল হক, আইইউসিএন বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক হাসিব ইরফান উল্লাহ প্রমুখ। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মডারেটর ছিলেন ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এটিএম আতিকুর রহমান। উদ্বোধনী ভাষণে প্রধান অতিথি পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী, পশু-পাখি আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করে। পরিবেশের বান্ধব পশু-পাখিকে ভালবাসতে হবে। সকাল থেকেই আগত দর্শনার্থীরা পাখি বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। মেলা উপলক্ষে প্রত্যুষে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে পাখি পর্যবেক্ষণ করেন। মেলায় শিশু-কিশোরদের পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্রপত্রিকা প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা, অডিও-ভিডিও’র মাধ্যমে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং সবশেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এবারের মেলায় পাখির নতুন ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি নিয়ে কাজ করার জন্য ৩ জনকে বিগ বার্ড এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। মেলায় স্টলগুলো সাজানো ছিল মমি করা বিভিন্ন প্রজাতির দেশী ও অতিথি পাখি, পাখি বিষয়ক বই-পুস্তক, ক্যালেন্ডার এবং পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্ন পোস্টার ও ছবি দ্বারা। এ সকল মমি পাখির মধ্যে কালেম, কাঠময়ূর, জলপিপি, জলময়ূরি, ময়না, শঙ্খচিল, পেঁচা, ফিঙে, তিতির, কবুতর, পাতি ক্যাস্ট্রো উল্লেখযোগ্য। পাখিমেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, অনেকে মনে করেন পাখিমেলা অতিথি পাখিকে কেন্দ্র করে হয়। এটি একটি ভুল ধারণা। মেলার মূল লক্ষ্য হলো দেশের জনগণকে পাখি ও প্রকৃতি সংরক্ষণে সচেতন করে তোলা। শুধু বিশ^বিদ্যালয় নয়, সারা দেশের পাখি যাতে সংরক্ষিত হয় তাই এ মেলার উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ক্যাম্পাসে এ মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এবারের মেলায় সহযোগী হিসেবে ছিল ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার, বাংলাদেশ বন বিভাগ, বার্ড ক্লাব, আরণ্যক ফাউন্ডেশন, আইইউসিএন ও চ্যানেল ২৪।
×