ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে গুলিবর্ষণ- মিয়ানমারের অস্বীকার

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে গুলিবর্ষণ- মিয়ানমারের অস্বীকার

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে জেলেদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। দেশটির নৌবাহিনী প্রধান কমান্ডারের অফিসের বরাত দিয়ে মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর অফিস থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী জেলেদের ওপর তারা কোন ধরনের গুলি বর্ষণ করেনি। মিয়ানমারের ইংরেজী দৈনিক মিজিমায় এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ফিশিং বোটে গুলি চালানোর ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। মিয়ানমারের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও চেয়েছে সরকার। তবে বৃহস্পতিবার মিজিমা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে গুলি চালানোর ঘটনায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অফিস থেকে দেশটির নৌবাহিনীর প্রধান কমান্ডার অফিসে যোগাযোগ করা হয়। নৌবাহিনীর প্রধান কমান্ডার অফিস থেকে স্টেট কাউন্সিলর অফিসে জানানো হয়েছে, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ফিশিং বোট ‘এফভি জানিভা খালেদা-এক’ এর ওপর আক্রমণ চালায় মিয়ানমারের একটি ট্রলার। ওই ট্রলারে অস্ত্রবাহী লোক ছিল। তারা বাংলাদেশের জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। তবে ওই ঘটনা যেখানে ঘটেছে, তার কাছেই মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ ছিল। আর আটক জেলেদের চার ঘণ্টা পর ফেরত দেয় মিয়ানমারের নৌবাহিনী। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচার দাবি করে বাংলাদেশ। জেলেদের ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে ২৭ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে আনা হয়। সে সময় পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপক্ষীয়) কামরুল মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে জেলেদের ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনা অবহিত করেন। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবাদপত্রও তার হাতে তুলে দেন। সূত্র জানায়, গত ২৭ ডিসেম্বর টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের একটি ট্রলার থেকে গুলি ছোড়ে। ওই ঘটনায় আহত হন কক্সবাজারের ছয় জেলে। সে সময় গুলিবিদ্ধ হন পাঁচজন। তারা হলেন কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ওসমান গনি, মোহাম্মদ শফির ছেলে রফিকুল ইসলাম, আলী আহমদের ছেলে নুর আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোহাম্মদ ওসমান গণি ও মহেশখালীর সাইফুল ইসলাম। এছাড়া মোহাম্মদ আলম নামে একজন আহত হন। আহত ছয়জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ ডিসেম্বর ১৪ জেলে টেকনাফের সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের পূর্ব পাশে বাংলাদেশের জলসীমায় জাল ফেলেন। তবে সেদিন দুপুরের দিকে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ বাংলাদেশী জেলেদের ট্রলারটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। ট্রলারের অন্য জেলেরা আহতদের নিয়ে বিকেলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ঘাটে পৌঁছালে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত জেলে মোহাম্মদ আলম জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে জেলেদের ট্রলার লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। তারা ট্রলার থেকে তিন লক্ষাধিক টাকার মাছ ও জালসহ অন্য মালপত্র লুটে নিয়ে যায়। পরে তারা এ ঘটনা জলদস্যুরা ঘটিয়েছে বলে প্রচার করার জন্য ধমকি দেয়। এই ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে তলব করে প্রতিবাদপত্র তুলে দেয় বাংলাদেশ। এছাড়াও সেদিন বাংলাদেশে অবস্থিত সকল রোহিঙ্গাকে দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আরও একটি প্রতিবাদপত্র দেয়া হয়েছিল মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে। সে সময় মিউ মিন্ট থানকে জানানো হয়, গত ৯ অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা কেন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্যও দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
×