ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছুটির দিনে ভিড় বেড়েছে বাণিজ্যমেলায়- তবে এখনও জমে ওঠেনি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

ছুটির দিনে ভিড় বেড়েছে বাণিজ্যমেলায়- তবে এখনও জমে ওঠেনি

ওয়াজেদ হীরা ॥ ছোট্ট শিশু আদনান। বাবার কোলে চড়ে শীতের পোশাক গায়ে জড়িয়ে এসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। যদিও এই অল্প বয়সে বাণিজ্যের কোন জ্ঞানই হয়নি ছোট্ট এই শিশুটির। কিন্তু তাতে কি! সেও যে পরিবারের একজন সদস্য। শিশুটির বাবা আবিদ হোসেন একজন বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তা। ছুটির দিন হওয়াতে সপরিবারে এসেছেন এবারের বাণিজ্যমেলায়। মূলত মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরুর পর প্রথম শুক্রবারেই একটু ভিড় বেড়েছে। তবে এখনও হুড়োহুড়ি ভিড় শুরু হয়নি। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় শুক্রবার ভিড় ছিল অনেকটাই বেশি। আর বিকিকিনিও জমেছিল বেশ। এদিন তরুণরা বেশি ভিড় জমিয়েছে ব্লেজারের স্টলগুলোতে আর তরুণীরা ছুটেছেন অলঙ্কার ও শালের স্টলে। জমজমাট ঘোরাফেরা আর বেচাকেনা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এখন থেকে দিন যতই গড়াবে ততই বিক্রি বাড়বে। সেই সঙ্গে আগামীর ছুটির দিনগুলোতে আরও উপচে পড়া ভিড় হবে। গত এক সপ্তাহ পর দর্শক সমাগম বাড়ার কারণে অনেক স্টলের ব্যবসায়ীদের মুখে স্বস্তির হাসি দেখা গেছে। ছুটির দিন হওয়াতে চাকরিজীবীরা তাদের পরিবার নিয়ে যেমন এসেছেন মেলায় তেমনি শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে মেলায় এসেছেন অনেকেই। আর স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে দর্শক-ক্রেতার ভিড়। এদিন সকাল নয়টায় লোক সমাগম শুরু হয় মেলায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। দুপুরের পর অনেক ভিড় ছিল। এতদিন যে টিকেট কাউন্টারগুলো ফাঁকা ছিল শুক্রবার তার প্রত্যেকটি টিকেট কাউন্টারে লম্বা লাইন দিয়ে টিকেট কাটতে দেখা গেছে। মেলা শুরুর প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনও কিছু কিছু স্টলে কাজ করতে দেখা গেছে। তবে বেশির ভাগ স্টলই ইতোমধ্যেই নজর কাড়তে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিয়েছে। মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বিকেলের পর থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করে ক্রেতা-দর্শনার্থীর। ছুটির দিন হওয়ার কারণে বড়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও আসছেন মেলায়। ঘুরে দেখছেন মেলার বিভিন্ন স্টল। এর মধ্যে গৃহস্থালি সামগ্রী, মেয়েদের সাজসজ্জার স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন এসেছে রুচির। নারীরাও নানা রূপে সাজাচ্ছে তাদের। সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে সাজের ধরনও। পোশাকের সঙ্গে ‘ম্যাচ’ করে নিজেকে সাজাতে নারীর প্রয়োজন হাতের চুড়ি, গলার মালা, কানের দুল, নাক ফুলসহ আরও অনেক কিছুই। আর এজন্য একটু আধুনিক, স্টাইলিশ ফ্যাশানেবল ডিজাইনের অলঙ্কারতো অবশ্যই প্রয়োজন। আর সে কারণেই তরুণীদের ভিড় ছিল অলঙ্কারের স্টলগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ফারহানা ছয় বান্ধবীসহ মেলায় ঘুরতে এসেছেন। মেলায় এসে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন অলঙ্কারের দোকানে। উচ্ছ্বসিত কষ্টে বলেন, এবারের কালেকশনগুলো এত ভাল লাগছে যে সবই কিনতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বাজেট কম। একটি কানের দুল কিনেছেন। সাথে বান্ধবীরাও কিনেছেন পছন্দসই গহনা। মেলার গহনার দোকানগুলোতে দেখা গেছে ছেলে বিক্রয়প্রতিনিধিদের সাথে মেয়ে বিক্রয় প্রতিনিধিও আছে। গহনার স্টলগুলোতে বিদেশী বা উপজাতি মেয়ে বিক্রয় প্রতিনিধি সারা শরীরে গহনার সুন্দর সাজগোছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ক্রেতাদের। অলঙ্কার স্টলে কর্মরত বিক্রয়প্রতিনিধি সবুজ জানালেন, তাদের বিক্রি আজ শুক্রবার বেশ ভাল। লোকজন আসছে দেখছে এতেও খুশি কেউ কেউ। কেননা এতদিন গহনার দোকানে অনেকটাই ছিল ভাটা। আরেক বিক্রয়প্রতিনিধি জানালেন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্টি ব্যাগ, গোল্ড প্লেটের সেট, পায়েল, নথ, লেডিস ঘড়ি, ব্রেসলেট, হিজাব পিন, টিকলিসহ আরও অনেক কালেকশন রয়েছে তাদের। একেকটি পণ্যের একেক রকম দাম জানালেন বিক্রয়কর্মী। কেজেডের শোরুমে তরুণীদের ভিড় একটু বেশিই মনে হলো। কর্মরত এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, আধুনিক ডিজাইনের গলার মালা যা গলায় লেগে থাকে অনেকেই একে চোকারও বলেÑ এরজন্য অনেক তরুণীই এখানে আসছেন। দামও সাধ্যের মধ্যে। আলো ঝলমল একেকটি অলঙ্কারের স্টল সন্ধ্যার পর আরও সুন্দর দেখাচ্ছিল। তবে মেয়েরা যে শুধু গহনায় আটকে ছিল তাও নয়। অনেকেই ছুটেছেন পছন্দসই শাল কিনতে। বাহারি রং বেরঙের নজরকাড়া শাল কিনতে দেখা গেছে। বাণিজ্যমেলায় এবার দেশী-বিদেশী বিশাল শালের সমাহার নিয়ে বসছেন বিক্রেতারা। যার দামও খুব সাধ্যের মধ্যেই। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, একটি সিঙ্গেল শাল দু’শ’ থেকে শুরু করে তিন শ’ চার শ’ বা কখনও শালের উপর নির্ভর করে আরও বেশিও হয়। অবশ্য এর চেয়ে অনেক দামী শালও আছে। যা হাজার টাকা ছাড়িয়ে। অধিকাংশ শালের স্টলেই ‘কাশ্মীরী শাল’ পাওয়া যায় এমন প্ল্যাকার্ড ঝুলছে। ছুটির দিনে ভিড়ের মধ্যেও বেশ আগ্রহ নিয়ে শাল দেখেছেন, কেউ কিনেছেন। আর শালের দোকানে ছুটির দিনে ভিড় বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে। কেননা, শীতের প্রকোপ কম হওয়ার কারণে গত কয়েক দিন কেউ শালের দোকানে পা রাখেনি। তবে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন এবার মেলায় আশানুরূপ শাল বিক্রি নাও হতে পারে। অবশ্য শালের স্টলগুলোতেও বেশ জমজমাট বেচাকেনা দেখা গেছে। এদিকে, ছুটির দিনে নারীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরুষদের উপস্থিতিও ছিল দেখার মতো। তবে অধিকাংশ তরুণ ঘুরেফিরে দেখেছেন ব্লেজারের স্টলগুলো। নতুন কোন ডিজাইন এলো কিনা, মূল্য কমল কিনা ইত্যাদি কারণে ব্লেজারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে ছেলেরা। একাধিক স্টলের বিক্রয়প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন তাদের বিক্রি বেশ ভাল। যদিও বিক্রির চেয়ে বেশির ভাগ ক্রেতা দেখে যাচ্ছেন বলেও জানালেন তারা। তবে ক্রেতা বাড়ার কারণে খুশি ব্যবসায়ীরা। এদিকে, এখনও অনেক স্টলের কাজ কিছুটা অসম্পূর্ণ থাকার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক দর্শনার্থীরা। এদিকে, সময় যত গড়াবে তত ভিড় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। আর সে লক্ষ্যেই ইতোমধ্যেই নানা অফারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ক্রেতাদের। হরেক রকমের ছাড়। এ বছর মেলায় ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ অংশ নিচ্ছে মোট ২১টি দেশ। মেলায় এবারও সাধারণ, প্রিমিয়ার, সংরক্ষিত, বিদেশী, সাধারণ মিনি, সংরক্ষিত মিনি, প্রিমিয়ার মিনি, বিদেশী মিনি প্যাভেলিয়ান, সাধারণ ও প্রিমিয়ার স্টল, ফুড স্টল, রেস্তরাঁসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে ৫৭৭টি স্টল রয়েছে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন, ই-শপ, শিশুপার্ক, রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, প্রাথমিক চিকিৎসা, মা ও শিশু কেন্দ্র, ফুলের বাগান, এটিএম বুথ। ১ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্রেতা দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে মেলা। মেলায় প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৩০ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা রাখা হয়েছে।
×