ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

ব্লাস্ট রোগে থমকে গেছে সম্ভাবনাময় গম চাষের অগ্রগতি

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

ব্লাস্ট রোগে থমকে গেছে সম্ভাবনাময় গম চাষের অগ্রগতি

কাওসার রহমান ॥ ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবে দেশের দ্বিতীয় দানাজাতীয় খাদ্যশস্য গম চাষের সম্ভাবনা থমকে গেছে। ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে দেখা দেয়ার ৩১ বছর পর হঠাৎ করেই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গমে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় আটকে গেল সম্ভাবনাময় গম চাষের অগ্রগতি। কৃষি বিভাগ এ বছর গম চাষের ব্যাপারে দেশব্যাপী কৃষকদের মাঝে বেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচী চালাচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাত জেলায় গম চাষকে নিরুৎসাহিত করছে। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে গমক্ষেত মনিটর করার পাশাপাশি এ রোগের প্রতিকারে প্রচারও চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটি-ই, যাতে ফসলের মরণব্যাধি ‘হুইট ব্লাস্ট’ বা গমের ব্লাস্ট রোগটি আবারও এ দেশে ছড়িয়ে না পড়ে। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ অবশ্য অনেকটা সফলও হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে গমের আবাদ তেমন হয়নি, তবে এবার দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গমের আবাদ বেড়েছে। সব মিলিয়ে এ বছর শীত মৌসুমের এ খাদ্যশস্যটির আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও গত বছরের কাছাকাছিই আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গত বছরের আক্রান্ত সাত জেলাসহ এ বছর সারাদেশের গমক্ষেতের ওপর তীক্ষè নজর রাখছে। নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে গম আবাদ এলাকা। ফলে কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ কী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেগুলো জানিয়ে লিফলেট ও ফ্যাক্টশীট বিতরণ করা হচ্ছে। গত মৌসুমে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলায় গমের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, ব্লাস্ট রোগ ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম ব্রাজিলে দেখা দেয়। পরবর্তীতে ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনায় বিস্তার ঘটে এ রোগের। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাত জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়, যা ওই বছরে গমের আবাদি জমির প্রায় ৩ শতাংশের মতো ছিল। ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে প্রথম ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার ৩১ বছর পর বাংলাদেশের যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের গমক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আক্রান্ত গমক্ষেতের ফলন ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস পায়। ক্ষেত্রবিশেষে এ রোগের কারণে ক্ষেতের সম্পূর্ণ ফসল বিনষ্ট হয়ে যায়। ওই রোগ যাতে অন্যান্য ফসলে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য গত বছর আক্রান্ত গমক্ষেত পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ কারণে এ বছর গম আবাদে কৃষি বিভাগ আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ভোলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাত জেলায় এবার গম আবাদকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকেই মূলত আক্রান্ত জেলাগুলোতে এ বছর গাম আবাদ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলের সরকারী খামারগুলোতে গম বীজ উৎপাদনও বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ বিকল্প পোষক গাছের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আক্রান্ত জেলাগুলোতে গমের পরিবর্তে ডাল ও ভুট্টাজাতীয় দানাদার ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। ফলে এ বছর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে গম আবাদ হ্রাস পেয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে গমের আবাদ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বিপুল পরিমাণ উৎপাদন ঘাটতি এবং উচ্চমূল্যের কারণে চাষীরা এ শীতকালীন ফসল আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গমের আবাদ দ্রুত বাড়ছিল। কিন্তু ব্লাস্ট রোগের কারণে এ বছর কৃষি বিভাগ নিরুৎসাহিত করায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষক গম আবাদ করেনি। তার পরিবর্তে কৃষক ভুট্টা, ডাল, সবজি ও অন্যান্য ফসল আবাদ করছে। তা সত্ত্বেও এ বছর গম আবাদে জমির পরিমাণ গত বছরের প্রায় কাছাকাছিই চলে এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং জানায়, এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে, যা থেকে ১৪ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন গম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত গম আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর। গত বছর দেশে গম আবাদ হয়েছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর গম আবাদের অগ্রগতির হার ৯৯.০৬ শতাংশ। কৃষি বিভাগ জানায়, মূলত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এ বছর গমের আবাদ বেড়েছে। মূলত দেশে গমের চাহিদা বৃদ্ধি এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষক গম চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর গমের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। বর্তমানে দেশে গমের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ টনেরও বেশি। অথচ স্থানীয় উৎপাদন এ চাহিদার মাত্র এক-চতুর্থাংশ পূরণ করছে। অবশিষ্ট চাহিদা পূরণ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আমদানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, গত বছর দেশে গমের উৎপাদন হয়েছিল ১৩ লাখ ৪৮ হাজার টন। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গমক্ষেত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আমরা আমাদের কৃষি বিজ্ঞানী ও উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদদের নিয়ে পরামর্শ সভা করি। একই সঙ্গে সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে পরামর্শ করে তা কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করি। কৃষিমন্ত্রী আমাদের কয়েকটি পরামর্শ দেন। আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত এলাকা থেকে বীজ সংগ্রহ না করতে এবং আক্রান্ত গমের নাড়া পুড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, যা সঙ্গে সঙ্গে মাঠপর্যায়ে কার্যকর করা হয়। তিনি বলেন, এক ধরনের ফাঙ্গাস গমের মাধ্যমে ব্লাস্ট রোগ ছড়ায়। এ ধরনের ফাঙ্গাস বা ছত্রাক ইতোপূর্বে বাংলাদেশের কোথাও দেখা যায়নি। এর ফলে আমাদের গমের বেশ ক্ষতি হয় এবং দানা সঙ্কুচিত হয়ে খুদের মতো হয়ে যায়। এতে আমাদের কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই এ রোগকে আমরা ভয়াবহ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। কারণ এর ক্ষতির ধরন ভয়াবহ। হামিদুর রহমান বলেন, গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ে আমাদের গবেষণা অব্যাহত আছে। আমরা এ গবেষণায় ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রকে (সিমিট) যুক্ত করেছি। তাছাড়া ব্লাস্ট নিয়ে গত বছর কাঠমান্ডুতে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে। আমরা তাতেও অংশগ্রহণ করেছি। মহাপরিচালক বলেন, গত বছর যেসব জেলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, সেসব জেলায় এ বছর আমরা গম আবাদকে নিরুৎসাহিত করেছি। গত বছর যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা- এ সাত জেলার ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এসব জেলায় যেন এ বছর গম আবাদ করা না হয় সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছি। এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। এসব জেলায় গমের পরিবর্তে ভুট্টা ও ডালসহ অন্যান্য ফসল আবাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তারপরও যদি ওই সব এলাকার কোন কৃষক গম চাষ করতে চান তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছি। পরামর্শগুলো হলো- অবশ্যই নিরাপদ ও মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করতে হবে, গম বোনার সঠিক সময়ে গম বপন করতে হবে, যে বীজ বোনা হবে তা অবশ্যই হতে হবে যথাযথ বালাইনাশক দ্বারা শোধনকৃত এবং গম বীজে শীষ আসামাত্রই ফানজিসাইড ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও প্রচার চালাচ্ছি। কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বলেন, প্রচারণা চালিয়ে আমরা ক্ষান্ত থাকছি না, ওই সাত জেলাসহ সারাদেশের গমের ক্ষেত এবার আমরা তীক্ষèভাবে মনিটর করছি। ওই সব জেলায় গমের বীজ ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গমের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে তুলনামূলক গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকলে এ রোগের আক্রমণ ঘটতে পারে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আক্রমণ দেখা দিলে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেগুলো জানিয়ে লিফলেট ও ফ্যাক্টশীট বিতরণ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত বছরই দেশে প্রথমবারের মতো গমক্ষেতে হুইট ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। পশ্চিম ও দক্ষিণের সাত জেলায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর গমক্ষেতে এ রোগের আক্রমণ হয়। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় মেহেরপুর জেলার গমক্ষেত। এ জেলায় হুইট ব্লাস্টে আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৯ হাজার ৬৪০ হেক্টর। শুধু তাই নয়, সরকারের বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামারেও ব্যাপকভাবে এ রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। হঠাৎ এ ধরনের রোগের আক্রমণে চাষীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা ক্ষেত থেকে গম কাটেন না। কারণ এতে তাদের ফসল কাটা ও মাড়াই খরচই উঠবে না। চাষীরা জানান, এ রোগে প্রথমে তরতাজা গমের শীষের মাথা সাদা হয়ে যায়। এরপর শুকিয়ে কালো হয়। ভেতরে কোন দানা হয় না। এ রোগে আক্রান্ত গমক্ষেতগুলো দূর থেকে দেখে বোঝা যাবে না। ক্ষেতে গিয়ে শীষ হাতে নিলে বোঝা যায়। দিনাজপুর গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, এটি পাইরিকুলারিয়া নামক এক ধরনের ছত্রাকজনিত রোগ, যা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়। এর পরই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। তখনই গমক্ষেতগুলোতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে বারি গম-২৬ জাতটি বেশি আক্রান্ত হয়। গমের শীষ বের হওয়ার পরপরই আক্রমণ হলে দানা নাও হতে পারে। আবার দানা একটু পুষ্ট অবস্থায় রোগের আক্রমণ হলে দানা ছোট হবে। পরবর্তীতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত গমক্ষেত পুড়িয়ে ফেলা হয়। কারণ ব্লাস্ট আক্রান্ত গম বীজ হিসেবে রাখলে আগামীতে সারাদেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পুড়িয়ে আক্রান্ত গম পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়া হয়। ব্লাস্ট রোগের ব্যাপারে কৃষকদের করণীয় : ব্লাস্ট চেনার উপায় ॥ গমক্ষেতের ব্লাস্ট আক্রান্ত স্থানে শীষ সাদা হয়ে যায় এবং অনুকূল আবহাওয়ায় তা দ্রুত পুরো ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানত গমের শীষে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। শীষের আক্রান্ত স্থানে কালো দাগ পড়ে ও আক্রান্ত স্থানের উপরের অংশ সাদা হয়ে যায়। তবে শীষের গোড়ায় আক্রমণ হলে পুরো শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়। আক্রান্ত শীষের দানা অপুষ্ট হয় ও কুঁচকে যায়, দানা ধূসর বর্ণের হয়ে যায়। পাতায়ও এ রোগের আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে পাতায় চোখের মতো ধূসর বর্ণের ছোট ছোট দাগ পড়ে। যেভাবে বিস্তার ঘটে ॥ আক্রান্ত বীজের মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ ছড়ায়। বৃষ্টির কারণে গমের শীষ ১২-১৪ ঘণ্টা ভেজা থাকলে এবং তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস অথবা এর বেশি হলে এ রোগের সংক্রমণ হয় এবং রোগের জীবাণু দ্রুত বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ব্লাস্ট রোগের জীবাণু চাপড়া, শ্যামা, আঙ্গুলিসহ ঘাসজাতীয় কিছু কিছু পোষক আগাছার মধ্যে বাস করতে পারে। তবে সেখানে রোগের লক্ষণ সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। নিয়ন্ত্রণের উপায় ॥ কোন অবস্থাতেই আক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা যাবে না। অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল জাত যেমন- বারি-২৮ ও বারি-৩০ জাতের গম চাষ করতে হবে। উপযুক্ত সময়ে (১-১৫ অগ্রহায়ণ) বীজ বপন করতে হবে, যেন শীষ বের হওয়ার সময়ে বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা পরিহার করা যায়। বপনের আগে প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে তিন গ্রাম প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি অথবা তিন মিলি হারে ভিটাফ্লো ২০০ এফএম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। বীজ শোধন করলে গমের অন্যান্য বীজবাহিত রোগও দমন হবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে। গমের ক্ষেত ও আইল আগাছামুক্ত রাখতে হবে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে শীষ বের হওয়ার সময়ে একবার আর ১২-১৫ দিন পর আরেকবার প্রতি শতাংশ জমিতে ছয় গ্রাম নাটিভো ৭৫ ডব্লিউজি অথবা নভিটা ৭৫ ডব্লিউজি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করলে গমের পাতা ঝলসানো রোগ, বীজের কালো দাগ রোগ এবং মরিচা রোগ দমন হবে। সতর্কতা ॥ ছত্রাকনাশক ব্যবহারের সময় হাতে রাবার অথবা প্লাস্টিকের গ্লাবস এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, যেন রাসায়নিক দ্রব্য শরীরের সংস্পর্শে না আসে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে না পারে। এ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, গম গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, সামিট কার্যালয়, ডিলার পয়েন্টে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
×