ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হোক হাজার আনন্দের শুরুর বছর -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

হোক হাজার আনন্দের শুরুর বছর -স্বদেশ রায়

২০১১, ১২ জুড়ে আমার জন্যে সকালে বাসা থেকে বের হওয়া ও সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফেরা বেশ আনন্দের ছিল। কারণ, রবীন্দ্রনাথের কাবুলীওয়ালার মতো আমারও একটা মিনি ছিল। আমাদের দুটো তিনটেই কথা হতো। ফ্ল্যাটের দরজা খুললেই দেখতাম তাদের বাসার কাজের সহকারী একটি কিশোরীর সঙ্গে আমার মিনি সাইকেল চালাচ্ছে, আমি তাকে বলতাম, সাইকেল চালায় কে? সে হেসে উত্তর দিত, তোমার মা মনি। আমি বলতাম, এই সাইকেলটি আমাকে দিতে হবে, আমি চালাব। সে ঘাড় নেড়ে বলত, এটা না, বাবাকে বলব, তোমাকে একটা কিনে দেবে। ততক্ষণে লিফটের সামনে এসে যেতাম, সে বলত, আঙ্কেল বাই, আমিও বাই বলে লিফটে ঢুকতাম। এরপরে তার মাথায় বেশ লম্বা চুল হলো। মাঝে মাঝে ফ্ল্যাটের করিডরে, ক্রিকেট বা বল খেলে। বুঝি, আমার মিনি বড় হয়ে গেছে। এখন আর খোকি তুমি শ্বশুর বাড়ি যাবে বললে সে লজ্জা পাবে? তাই মা মনি কেমন আছো, সে হাসি মুখে দৌড়ে এসে বলে- ভালো, আঙ্কেল আপনি কেমন আছেন। এর পরে অনেকদিন তার সঙ্গে আর ওই ভাবে প্রতি নিয়ত দেখা হয় না। শহরের নিষ্ঠুর কাজে ভরা জীবনে, মনের ভিতর মোচড় দিলেও সময় করে পাশের ফ্ল্যাটের মা মনিটার খোঁজ নেবার সময় পাই না। এর ভিতর হঠাৎ একদিন বিকেলে লিফটের সামনে দেখা। সঙ্গে সেই কিশোরীটি। আস্তে করে তার মাথায় হাত রেখে বলি, মা মনি খেলতে যাচ্ছ? সে খুব মৃদু মাথা নাড়ায়, তার শরীরে আগের সেই স্বতঃস্ফূর্ত স্পন্দন যেন থেমে গেছে। তার গলা দিয়ে একটি দুর্বল স্বর এসে উত্তর দিল, না, আঙ্কেল কোচিংয়ে। তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিজের বুক বেয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো। এবারও ২০১৭-তে দেশব্যাপী বই উৎসব হলো। নতুন বই তুলে দেয়া হলো ছাত্রছাত্রীদের হাতে। টেলিভিশনে দেখানো হলো তাদের হাসিভরা মুখ। পত্রিকায়ও ছাপা হলো। কিন্তু বুকের ভিতর একটা মোচড় দিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো আমার ওই মা মনিটির মুখ। আর কানের কাছে সেই দুর্বল স্বর, না, আঙ্কেল কোচিংয়ে। পরীক্ষা থেকে মুক্তি বাস্তবে ভাল লাগত, ২০১৭তে যদি এ প্রত্যাশা পূরণ হতো, কোন শিশুকে আর বিশাল বইয়ের ব্যাগ বইতে হবে না। তাদেরকে বিকেলে খেলা ফেলে কোচিংয়ে যেতে হবে না। এমনকি দিতে হবে না পরীক্ষা। বাস্তবে, এত পরীক্ষার চাপে কেন আমরা শিশুদের শিশুকালটা চুরি করছি। ধ্বংস করে দিচ্ছি তাদের কল্পনা শক্তি। স্কুল সমাপনী পরীক্ষা উঠেও উঠছে না। ২০১৭-তে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালকদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, কোনরূপ ঝামেলা ছাড়াই দিক না উঠিয়ে ওই পরীক্ষা। তাছাড়া ক্লাসে কি পরীক্ষার কোন দরকার আছে? আমাদের শিক্ষকদেরকে আমরা কি সেই শিক্ষা দিতে পারি না, যাতে তারা পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীকে শেখাতে পারেন। শিশুদের ওই শিশুকালে কি প-িত হবার দরকার আছে? কী শিখবে তারা? তারা লিখতে শিখবে, পড়তে শিখবে। আমাদের দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী, বাংলা ও ইংরেজী পড়তে শিখবে; আর সাধারণ অঙ্ক শিখবে। দেশের গল্প, পৃথিবীর গল্প শুনবে শিক্ষকদের কাছ থেকে। সেগুলো পরীক্ষার পড়া না হয়ে মনের আনন্দে তাদের মনের সঙ্গে মিশে যাবে। আর পাবে এক উদ্দাম শিশুকাল। যেখানে সে সময় পাবে নিজে বিশাল কল্পনার বিস্তার ঘটাতে নিজের মতো করে। আমরা খাদ্যের প্রয়োজনে, মুরগিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্টে পরিণত করেছি। গরু, ভেড়ার বাচ্চাকেও। তাদেরকে জীবন থেকে, মায়ের কোল থেকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সিস্টেমে ফেলে দেয়া হয়। তাদের কোন চিন্তা শক্তি থাকে না। তারা কেবল আমাদের জন্যে প্রোটিন হিসেবে বের হয়ে আসে। আমাদের কি এখন ভেবে দেখার সময় আসেনি, সৌভাগের প্রতিযোগিতায় নেমে, আমরা আমাদের সন্তানগুলোকে শুধু আয় করার একটি যন্ত্র তৈরি করছি কিনা? ২০১৭-তে তাই সব থেকে বড় প্রত্যাশা, আমরা যেন আমাদের সন্তান এভাবে নিজ হাতে হত্যা করার এই যজ্ঞ থামাতে পারি। গুরুত্ব পাক পরিবেশ ২০১৭ এর এই শুরুতেই আমাদের সন্তানের পরেই যে প্রত্যাশা এসে দরজায় কড়া নাড়ে তা হলো পরিবেশ রক্ষা। কারণ, আমরা যে সন্তানদের আমাদের পৃথিবীতে রেখে যাব, সেই সন্তানের বাসযোগ্য দেশ বা পৃথিবী রেখে যাব তো? ছয় ঋতুর দেশ ছিল বাংলাদেশ। এখন কিন্তু ঋতু একটাই, তা গ্রীষ্ম। বর্ষা বছরে দশদিনও ভাল মতো হয় না। শীত এক সপ্তাহও নামে না। বসন্ত, শরৎ, হেমন্ত এক অতীতের কবিদের কবিতার বিষয়বস্তু মাত্র বাংলাদেশে। আমাদের নদীর মৃত্যু ঘটছে প্রতি মুহূর্তে, গাছের মৃত্যু ঘটাচ্ছি প্রতি মুহূর্তে। কোন নিয়মনীতি ছাড়াই ইন্ডাস্ট্রি করে দূষিত করছি পানিসহ পরিবেশের সকল অঙ্গ। আর শহর! এ তো ইটের বস্তি। এই পরিবেশ ধ্বংসের জন্যে শুধু আমরা নিজেরা দায়ী নই। উন্নত পৃথিবীও দায়ী। তারা কার্বন নিঃসরণ করছে বেশি, উষ্ণতা বাড়াচ্ছে, কিন্তু পাত্তা দিচ্ছে না কাউকে। সত্যিকার অর্থে পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার জন্যে সব থেকে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আমেরিকার নির্বাচনে সেবার আল গোরকে কোর্টের মাধ্যমে পরাজিত করে বুশকে পাস করানো। আল গোরই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি পরিবেশকে গুরুত্ব দিতেন। তারপরে আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্টই গুরুত্ব দেননি পরিবেশকে। আর এবার যে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তিনি তো মনে করেন পরিবেশ নিয়ে যা বলা হচ্ছে সব বোগাস। ২০১৭-তে তাই প্রত্যাশা থাকবে, বছরজুড়ে যেন গোটা বিশ্বের সচেতন মানুষ বিশেষ কোন দেশের স্বার্থে নয়, কারও বিরুদ্ধে নয়, প্রকৃত অর্থে পরিবেশ নিয়ে সোচ্চার হবেন। যাতে উন্নত বিশ্ব- বিশেষ করে আমেরিকা বাধ্য হয় পরিবেশের বাস্তবতা বুঝতে। বাধ্য হন যেন ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিবেশ নিয়ে তার উদ্ভট চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে। সুরের মনোজগত প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন বড়, মানসিক পরিবেশ তার থেকে আরও বড়। ২০১৭-তে এসে স্বীকার করতে হবে, আমরা ক্রমেই আমাদের মানসিক পরিবেশ, মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট করে ফেলছি। আমরা বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছি না ব্যক্তি ও সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য গড়ার দিকে। আমাদের সমাজের একটি বড় অংশের মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট করছে ভারতীয় এক ধরনের বিনোদন চ্যানেল। যার প্রতি সমাজের এক শ্রেণীর কম মেধাসম্পন্ন বাবা ও মা আকৃষ্ট। তারা সারাদিন এগুলো দেখেন। ২০১৭তে তাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত এই চিন্তাহীন, বিনোদনহীন নষ্ট ও অবাস্তব সিরিয়াল দেখা থেকে আমরা বের হয়ে আসব। যদি তারা সম্পূর্ণ না পারেন, অন্তত কিছু সময় তারা সন্তানদের নিয়ে সারা পৃথিবীর অনান্য চ্যানেলগুলো একটু ঘুরে আসুন। পনেরো মিনিট শুনুন একটু বেহালা বা তুরস্কের বা জাপানের কোন বাদ্যযন্ত্রের সুর। দেখবেন, ওই সুর শুধু আপনার সন্তানকে আনন্দ দেবে না, তাকে সৃষ্টিশীল হতে সাহায্য করবে। তাই যে সব মধ্যবিত্ত ঘরের মা-বাবারা ভারতীয় এক শ্রেণীর চ্যানেল দেখে সময় কাটাচ্ছেন, তারা ২০১৭-তে প্রতিজ্ঞা করুন দিনে অন্তত পনেরো মিনিট হলেও আমি আমার সন্তানকে নিয়ে যাব সৃষ্টিশীল সুরের জগতে। বিশ্ব সভায় আমাদের সন্তান আমাদের সন্তানরা যে সৃষ্টি করছে না তা নয়। প্রতি বছরই আমরা দেখতে পাই আমাদের কিছু কিছু সন্তান কিন্তু বিশ্বসভায় পরিচিত হবার মতো নতুন কিছু সৃষ্টি করেছে। কখনও কখনও বড় কোন সৃষ্টির সঙ্গে তাদের যোগ থাকে। তাই ২০১৭-তে এসে আশা করি, আমাদের সন্তানরা বিশ্বসভায় আরও অনেক কিছু সৃষ্টি করে আমাদেরকে পরিচিত করবেন বিশ্ব সভায়। আর এর সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার সন্তান প্রস্তুতি নিক এই ২০১৭তে, তারা যেন ভবিষ্যতের পৃথিবীর নেতা হতে পারে। ডিজিটাল যুগ কিন্তু একা একা অনেক কিছু করার সুযোগ এনে দিয়েছে। অনেক কিছু জানার সুযোগ এনে দিয়েছে। তাই তরুণদের, কিশোরদের ভিতর একটি আনন্দময় প্রতিযোগিতা থাকতে হবে, আমাদের কার ফেসবুক কত বেশি পরিশীলিত। সেখানে সৃষ্টির প্রকাশ কতটুকু? কেন নোংরামি প্রকাশ করার জন্যে সময় নষ্ট হবে? এমনকি অন্যের নোংরামির জবাব দিতে যাওয়া কিন্তু নিজে সুন্দর কিছু সৃষ্টি করা থেকে দূরে চলে যাওয়া। শুধু ফেসবুক নয়, লিঙ্কডিন, টুইটার যত সোস্যাল মাধ্যম আছে সব খানে থাকুক তরুণ ও কিশোরদের উপস্থিতি, কিন্তু সেগুলো হতে হবে পরিশীলিত। অন্যদিকে ইউ টিউবের মাধ্যমে এখন কিন্তু একজন তরুণ তার নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে পারে। ইউ টিউব দেখে দেখে সে হতে পারে একজন চমৎকার বক্তা, সে জানতে পারে পৃথিবীর যাবতীয় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত কনভোকেশন লেকচারগুলো, শুনতে পারে পৃথিবীর সেরা সেরা গান। এই তো গত বছরই বব ডিলান নোবেল পেলেন। একটা মাসের কিছু সময় করে ২০১৭ তে আমাদের দেশের কিছু তরুণ- তরুণী শুনুক না তাঁর যুদ্ধবিরোধী, মানবতার পক্ষের এবং ভালবাসার গানগুলো-নিঃসন্দেহে বদলে যাবে অনেক খানি তার জীবন। খুব বেশ সময় নয়, মাসে একদিন দেড় ঘণ্টা ব্যয় করলে রবীন্দ্রনাথের একটি নৃত্যনাট্য দেখা যায় ইউ টিউবে, ছয় মাসে তো ছয়টি শেষ হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের ছয়টি নৃত্যনাট্যে নিঃসন্দেহে অনেক খানি বদলে দিতে পারে একজন তরুণ বা কিশোরীকে। জ্ঞান ভিত্তিক তিনটি শ্রেণী বাঙালীর একটি কথা মনে রাখা উচিত, ঊনবিংশ শতাব্দীর পরে প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে কিন্তু সামাজিক ও মানসিক রেনেসাঁ আর হয়নি। সত্যি অর্থে পৃথিবীর শেষ সামাজিক ও মানসিক রেনেসাঁ, বেঙ্গল রেনেসাঁ। আমরাই এখন সেই বেঙ্গল বা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি। তাই প্রযুক্তির এই উন্নতির সঙ্গে সমান তালে সামাজিক ও মানসিক উন্নতি ঘটানোর দায় কিন্তু আমাদের। রেনেসাঁতে বড় ভূমিকা রাখেন স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধির শিক্ষকরা। ভূমিকা রাখেন লেখক ও সাংবাদিকরা। ২০১৭-তে তাই আশায় বুক বাঁধতে ইচ্ছে করে, এই শিক্ষক, সাংবাদিক ও লেখকরা যেন এক ধরনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণহীন রাজনীতির ক্রীড়নক আর না থাকে। তারা তাদের নিজ নিজ অবস্থানে নেতা হয়ে উঠুক তাদের জ্ঞানের প্রদীপের আলো জ্বালিয়ে। এই তিন শ্রেণীর একমাত্র সম্পদ বা যদি ইন্ডাস্ট্রির ভাষায় বলা হয় তাহলে পণ্য কিন্তু জ্ঞান বা নলেজ। এটা যদি তারা সমাজে বিক্রিও করেন তাহলেও কিন্তু বদলে যায় সমাজ, বদলে যায় তাদের অবস্থান। ২০১৭-তে প্রত্যাশাÑ এই তিনটি শ্রেণী হয়ে উঠবে জ্ঞান ভিত্তিক; এরা জোর গলায় রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে পারবে, আমরা নই বাধা নই দাসের রাজত্বে- বাস্তবে এই তিনটি শ্রেণী মুক্ত প্রাণ। ২০১৭-তে এই মুক্ত প্রাণের সংখ্যা বাড়ুক সমাজে এ আশাই করি। তরুণদের ভিতর থেকে উঠে আসুক মুক্ত প্রাণের নেতৃত্ব। যাদের হাতে আলোর মশাল দেখে তৃপ্তি পাবে পুরনো জেনারেশন এই ভেবে যে, আমাদের সন্তানরা এগিয়ে যাচ্ছে আলো হাতে, মশাল হাতে আপন পায়ে ভর করে, নিজের প্রাণের জোরে- সামনের দিকে। যখন একটা সুরই বেজে ওঠে, বল মাভৈঃ, নবযুগ এলো ওই। বাস্তবে এ সত্য স্বীকার করতে হবে এ তিন ক্ষেত্রে নতুন যুগের অনেক বেশি দরকার। গবেষকের দেশ ২০১৭-তে আরও একটি আশা করতে বড় ইচ্ছে করছে, আমাদের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষকদের ভিতর থেকে, ছাত্রদের ভিতর থেকে গবেষক বের হবার কাজটি শুরু হোক এই সালে। যেমন আমাদের অনেক বড় ডাক্তার আছেন। তাদের অনেক লেখাপড়া। অর্থ বিত্ত তারা যথেষ্ট অর্জন করেছেন। ২০১৭-তে তাদের প্রতি কি আমরা আশা করতে পারি না, তারা এখন নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে গবেষণায় মন দিক। হ্যাঁ, তারা বলতে পারেন, আমাদের গবেষণার পথ কই? সত্যি অর্থে আমাদের কোন সরকারই কখনই গবেষণা খাতকে গুরুত্ব দেন না। অথচ একটি গবেষণাই বদলে দিতে পারে একটি দেশের অর্থনীতি ও সম্মান দুটোই। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে আমাদের দেশে তার মূল্য নেই। আমাদের কৃষিবিজ্ঞানী, ড. বিজন শীল আবিষ্কার করেছিলেন, ব্লাক গোটের জ্বরা রোগের ভ্যাকসিন। যা আমরা পেটেন্ট করে উৎপাদন করলে আমাদের চা শিল্প যা আয় করে তার সমান আয় করতে পারতাম। বিজন দ্বারে দ্বারে ঘুরে এ দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখন সিঙ্গাপুরে তিনি গবেষণা করছেন। ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর কুইক টেস্ট ও সার্চের কুইক টেস্ট তিনি আবিষ্কার করেছেন। তার ফলে সার্চ রোগে মৃত্যু প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। হয়ত বিজনের মতো এমনি অনেক বড় প্রতিভা নীরবে দেশত্যাগ করছে। বিজনকে কত কষ্ট পেয়ে দেশত্যাগ করতে হয়েছে তার একজন সাক্ষ্মী আমি। তাই ২০১৭-তে বড় প্রত্যাশা আমাদের রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা ভারতীয় মহীয়সী রাষ্ট্র নায়ক ইন্দিরা গান্ধীর মতো প্রবাসে থাকা সব ধরনের ট্যালেন্টদেরকে দেশে ফেরার আহ্বান জানান। তিনি সৃষ্টি করে দিন তাদের কাজে পরিবেশ। সত্তর দশকে ইন্দিরা এ সুযোগ দিয়ে অনেক খানি বদলে দেন ভারতকে। কারণ, সবাই তো আর জামাল নজরুল ইসলামের মতো সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী যেমন নন, তেমনি তাঁর মতো প্রাণশক্তির অধিকারীও নন। তাই নিজের প্রাণ শক্তির ওপর ভর করে দেশে ফিরতে পারবেন খুব কমই। সাকিবের দেশ, মুস্তাফিজের দেশ ২০১৭-তে তাই এ প্রত্যাশাও করতে হয়, আমাদের রাষ্ট্রে ও সমাজে সেই পরিবেশ সৃষ্টি হোক, যাতে প্রতি মুহূর্তে যে ব্রেন বিদেশে চলে যাচ্ছে তার গতি যেন কমতে কমতে শূন্যে নেমে যায়। আমার দেশের ভাল ছেলেমেয়েরা বিদেশে চলে যাচ্ছে আর কালা জাহাঙ্গীরের উত্তরাধিকারী সমাজসহ সবখানের নেতৃত্ব নিচ্ছে সমাজের এ দীনতা ঠিক নয়। ২০১৭ হোক আমাদের এ দীনতা থেকে মুখ ফিরিয়ে শক্ত হয়ে বসার বছর। আমরা কেন পারব না? আমরা একটু খেয়াল করলেই কিন্তু পারি। সত্তরের দশকে আমাদের ফুটবল স্টার সালাউদ্দিনকে বিদেশের লীগ খেলতে হয়েছে। কারণ, দেশে তখন ওই মাপের ফুটবল ছিল না। কিন্তু এখন আমাদের সাকিব, আমাদের মুস্তাফিজ বিশ্ব জয় করছে। আর আমরা আনন্দের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি, আমরা সাকিবের দেশের মানুষ, মুস্তাফিজের দেশের মানুষ। আহা! কী আনন্দ! নিজের সন্তান যখন বিশ্ব সমাজে আমাদেরকে পরিচিত করে তার থেকে বড় আনন্দ আর কী থাকতে পারে। তাই ২০১৭ হোক না শুরু হাজার আনন্দের শুরুর বছর। [email protected]
×