ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাঈদীর রিভিউ আবেদন- শুনানি হয়নি এক বছরেও

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

সাঈদীর রিভিউ আবেদন- শুনানি হয়নি এক বছরেও

আরাফাত মুন্না ॥ দেইল্লা রাজাকার খ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদ-ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের রিভিউ আবেদনের শুনানি হয়নি এক বছরেও। গত বছর ২ জানুয়ারি সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং ১৭ জানুয়ারি খালাস চেয়ে আসামি পক্ষ রিভিউ আবেদন দাখিল করে। আরেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায়ে যুদ্ধাপরাধ মামলা সংক্রান্ত রিভিউ অগ্রধিকার ভিত্তিতে শুনানি গ্রহণের কথা বলা থাকলেও সাঈদীর রিভিউ শুনানি হয়নি এক বছরেও। আইনজীবীরা বলছেন, শুনানির দিন নির্ধারণের বিষয়টি একান্তই আদালতের বিষয়। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় যত রিভিউ আবেদন হয়েছে কোনটিতেই শুনানির জন্য এতদিন অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। কাদের মোল্লার রিভিউ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি হয়েছে একদিনের মধ্যেই। এ ছাড়া মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ শুনানি হয়েছে এক মাসের মধ্যে, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানি হয়েছে আবেদনের এক মাসের মাথায়। যদিও কাদের মোল্লা ছাড়া বাকি তিনটি রিভিউয়ের শুনানির জন্য তারিখ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছিল। তবে সাঈদীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ এ ধরনের আবেদন এখনও করেনি। ইতোমধ্যে এ মামলায় রিভিউ দাখিলের পর এক বছর পেরিয়ে গেছে। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সাঈদীর আপীলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানির জন্য তারিখ চেয়ে আদালতে আবেদনের বিষয়টি আমাদের চিন্তাভাবনায় আছে। আমরা সেই আবেদন করলে তার সূত্র ধরে আদালত শুনানির তারিখ নির্ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে শীঘ্রই আমরা পদক্ষেপ নেব। তবে আদালত চাইলে নিজে থেকেও শুনানির তারিখ নির্ধারণ করতে পারে বলে জানান এ্যাটর্নি জেনারেল। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীর আপীলের সংক্ষিপ্ত রায় দেয় আপীল বিভাগ। সংক্ষিপ্ত রায়ে মৃত্যুদ-ের পরিবর্তে তাকে আমৃত্যু কারাদ- দেয় সুপ্রীমকোর্ট। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় দেয়। তখন বেঞ্চে আরও সদস্য ছিলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (বর্তমান প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে বলা হয়েছে, বাকি জীবন কারাগারেই কাটাতে হবে জামায়াতে ইসলামীর এই নায়েবে আমিরকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে আংশিকভাবে মঞ্জুর করা হয় সরকার ও আসামিপক্ষের করা দুই আপীল। বিচারিক আদালতে প্রমাণিত মোট আট অভিযোগের তিনটিতে আপীলে খালাস পায় সাঈদী। আর বাকি পাঁচটির মধ্যে তিনটিতে আমৃত্যু কারাদ- ও দুটিতে তাকে মোট ২২ বছরের দ- দেয় আপীল বিভাগ। সাঈদীর বিষয়ে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দুটি আপীল করে সরকার ও আসামিপক্ষ। আসামিপক্ষের আপীলের নম্বর-৩৯/২০১৩ এবং সরকারের আপীলের নম্বর-৪০/২০১৩। রায়ে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে আংশিকভাবে মঞ্জুর করা হয়েছে দুটি আপীলই। ষষ্ঠ, একাদশ ও চতুর্দশ অভিযোগ থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে খালাস পায় সাঈদী। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে আসামিকে খালাস দেয়া হয় অষ্টম অভিযোগের অংশবিশেষ থেকে। এই অভিযোগের অংশবিশেষের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ১২ বছরের কারাদ- দেয়া হয় আসামিকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ১০ বছরের কারাদ- দেয়া হয় সপ্তম অভিযোগে। আর দশম, ষোড়শ ও ঊনবিংশ অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের রায়ে স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাদ- দেয়া হয় সাঈদীকে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেফতার হয় ২০১০ সালের ২৯ জুন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি মামলা করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয় সাঈদীকে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করেন এএসপি হেলাল উদ্দিন। তদন্ত চলে ২০১০ সালের ২১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ মে পর্যন্ত। ২০১১ সালের ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ১৪ জুলাই অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০ অভিযোগে সাঈদীর বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ৭ ডিসেম্বর। প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৮ জন। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া ১৫ জনের জবানবন্দীকে তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন ১৭ জন। যুক্তিতর্ক শুরু হয় ২০১২ সালের ৫ নবেম্বর। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এরই মধ্যে স্কাইপে কথোপকথনের জের ধরে পদত্যাগ করেন বিচারপতি নিজামুল হক। পরে বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হলে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয় আবার। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। খালাস চেয়ে আপীল করে সাঈদী। আর প্রমাণের পরেও যেসব অভিযোগে আসামিকে দ- দেয়া হয়নি সেসব অভিযোগেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপীল করে সরকার। এ মামলার আপীলের শুনানি শুরু হয় ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর।
×