ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলের নিরাপত্তায় পুলিশ

এমপি লিটনের বাড়ির সামনে পাওয়া ক্যাপ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

 এমপি লিটনের বাড়ির সামনে পাওয়া ক্যাপ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ৫ জানুয়ারি ॥ সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলেই সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করছে পুলিশ। যদিও তারা দলীয় কোন্দল, পারিবারিক বিষয়, জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং অন্যান্য শত্রুতার বিষয়ও খতিয়ে দেখছে। তবে এ পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছিল তারা সকলেই জামায়াত-শিবির নয়ত আল্লাহর দলের ক্যাডার বা সমর্থক। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃতদের মধ্যে থেকে ২১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। হত্যায় জড়িত সন্দেহে জামায়াত-শিবিরের যাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তারা হলো- মহসিন আলী (৬৫), সিরাজুল ইসলাম (৫৫), রাতুল ইসলাম (২২), লাল মিয়া (৪৫), আইয়ুব আলী (৫০), আলম মিয়া (৪৮), সানু মিয়া (২৮), ভুট্টু মিয়া (৪০), আমজাদ হোসেন (২৮), রুবেল মিয়া (১৮), আজিজুর রহমান (৫৫), গোলাম মোস্তফা (৩৮), মাহাতাব হোসেন (৩২), হাফিজ উদ্দিন (৩৬), মোজাম্মেল হক (৫০), নুরুন্নবী (৪৫), গোলাম বারী (৩৮), মমিন উদ্দিন (৩৭), আব্দুল মালেক (৩৮), মঈন উদ্দিন (৩৭) ও আব্দুল খালেক (৩০)। খুনীদের প্রাপ্ত ক্যাপের ডিএনএ টেস্ট ॥ এমপি লিটন হত্যার দিন তার বাড়ির সামনে গাব গাছের দক্ষিণ দিকে থেকে একটি কালো রংয়ের ক্যাপ উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ির সামনে মাঠে সে সময় যেসব ছেলে ভলিবল খেলছিল তারাই ক্যাপটি পেয়ে পুলিশকে দেয়। ক্যাপটির ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, যে দুই খুনী লিটনকে হত্যা করার জন্য ঘরের ভেতর ঢোকে তাদের গায়ে ছিল কালো রংয়ের জ্যাকেট এবং পরনে ছিল কালো প্যান্ট আর মাথায় কালো রংয়ের ক্যাপ। ধারণা করা হচ্ছে গুলি চালিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতকদের কারো মাথা থেকে ক্যাপটি পড়ে যায়। এদিকে, লিটনের একমাত্র সন্তান রাতিন লিটনের বোনদের সঙ্গে এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। রাতিন যেহেতু ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ লেভেলের ৯ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে সেজন্য স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন লিটনের স্ত্রী। তিনি গাইবান্ধার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহতি করলে ঢাকা থেকে পুলিশী নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা গেছে। থার্টিফার্স্ট নাইটে লিটনের ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল ॥ ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে সৈয়দপুর হয়ে বিমানে এমপি লিটনের ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। সে কারণেই নেতাকর্মীরা বাড়িতে আসেনি। এ ব্যাপারে এমপি লিটনের কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার আইয়ুব আলী জানান, ৩১ ডিসেম্বর (শনিবার) বিমানের টিকেট না পেয়ে ১ জানুয়ারি রবিবারের টিকেট নিয়ে আসেন তিনি। আর এ কারণেই শুক্রবার রাতেই লিটন সিদ্ধান্ত নেন শনিবারের পরিবর্তে রবিবার তিনি ঢাকায় যাবেন। তবে এক্ষেত্রে রহস্যজনক ঘটনা হচ্ছে এমপি লিটনের নির্দিষ্ট দিনে বিমানের টিকেট না পাওয়ার কারণে এই আকস্মিক যাত্রা বিরতির সুযোগকে কিভাবে খুনীরা বেছে নিল। সেদিন ঢাকায় না যাওয়াকে কেন্দ্র করে এমপি লিটনের বাড়ি নেতাকর্মী শূন্য থাকবে খুনীরা এই তথ্য কিভাবে পেল। তদুপরি যারা সর্বক্ষণিক থাকত সেদিন তারা থাকলেন না কেন? এই প্রশ্নগুলো নিয়েও পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্যই কি পরিবারকে জড়ানো হচ্ছে ॥ বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমেস উদ্দিন বাবু জানান, লিটনের খুনের সঙ্গে জামায়াত-শিবির চক্র জড়িত। ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভের পায়ে গুলি করাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের মদদে যেভাবে একটি মহল এমপি লিটনের ভাবমূর্তি বিনষ্টে ব্যাপকভাবে তৎপর হয়ে উঠেছিল। তেমনি একই কায়দায় আবারও লিটনের হত্যাকে কেন্দ্র করে তার পরিবারকে জড়ানোর সুপরিকল্পিত তৎপরতা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্র লিটন বা তার পরিবারকে নিয়েই নয়, বরং এটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলাকে আবারও জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীবাদের আখড়ায় পরিণত করার পরিকল্পিত অপচেষ্টা।
×