ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পায়ুপথে স্বর্ণের বার পাওয়া গেল এক বিমানযাত্রীর কাছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

পায়ুপথে স্বর্ণের বার পাওয়া গেল এক বিমানযাত্রীর কাছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফের শরীফ আহমেদ (৩৩) নামে এক স্বর্ণমানবকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতর। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে তার পেটে এক্সরে করে ওই স্বর্ণের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে ১২টি স্বর্ণের বার বের করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তিনটি কনডমের ভেতর থেকে চারটি করে ১২টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়। প্রতিটি বারের ওজন ১০০ গ্রাম। জব্দকৃত স্বর্ণের মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। পরে স্বর্ণমানব শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত যাত্রী শরীফের পাসপোর্ট নম্বর ইগ ০৮০৬৭৩১। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং ময়নামতি বাজার এলাকায়। শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান জানান, মালিন্দ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে (ঙউ১৬২) বুধবার রাত সোয়া ১২টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন স্বর্ণমানব যাত্রী শরীফ আহমেদ। এরপরই তাকে নিয়ে শুরু হয় নানা নাটক। রাতভর নাটকীয়তার পর বৃহস্পতিবার ভোরে স্বর্ণমানব শরীফ আহমেদের পেটে এক্সরে করে স্বর্ণের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি জানান, ওই যাত্রীর কাছে স্বর্ণ আছে এই তথ্যের ভিত্তিতে তাকে রাত সাড়ে ১২টা থেকে নজরদারিতে রাখা হয়। এক পর্যায়ে তারা লক্ষ্য করেন ওই যাত্রী অদ্ভুতভাবে হাঁটছেন। কাস্টমস হলের গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করে চলে যাওয়ার সময় চ্যালেঞ্জ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতেও স্বর্ণবার থাকার কথা অস্বীকার করতে থাকেন তিনি। আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন ফলপ্রসূ উদ্যোগ পাননি। এরপর রাত ৩টায় যাত্রী শরীফ আহমেদকে উত্তরা উইমেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাত্রীর পেটে এক্সরে করা হয়। গোয়েন্দা দল তার রেক্টামে ৩টি অস্বাভাবিক পোটলার অস্তিত্ব দেখতে পান। এক্সরে রিপোর্ট দেখালেও যাত্রী শরীফ অস্বীকার করছিলেন। এক পর্যায়ে যাত্রী হুমকি দেয় তার আত্মীয় এক বড় কর্মকর্তা। কোন রকম বের হতে পারলে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ‘দেখে নেবো’ বলে সতর্ক করেন। শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান জানান, পরে তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। এ সময় শুল্ক গোয়েন্দারা যাত্রী শরীফের তলপেট কেটে স্বর্ণ বের করার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসককে বলেন। পরে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার উদ্যোগ নেন। এতে যাত্রী শরীফ ভয়ে পেয়ে নমনীয় হন। পরে যাত্রী শরীফ জানান, অপারেশন ছাড়া পেট থেকে স্বর্ণ বের করে দেবেন বলে ওয়াদা করেন। এরপর স্বর্ণ বের করার পালা। পরে যাত্রী শরীফকে শাহজালালের কাস্টমস হলে নিয়ে এসে পানি খেতে দেয়া হয়। পরে তাকে টয়লেটে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তার তলপেটে চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। পরে যাত্রীর অনুরোধে তাকে একটি লুঙ্গি দেয়া হয়। লুঙ্গি পরে শুল্ক গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে টয়লেটের অভ্যন্তরে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে একে একে ৩টি কনডম বের করে আনেন যাত্রী শরীফ। বের করা ৩টি কনডমের ভেতর থেকে ৪টি করে মোট ১২টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যাত্রী শরীফ জানান, চারটি গোল্ডবার স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে একটি কনডমে রেখে তা আবার স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রেক্টামে প্রবেশ করান। এ রকম ৩টি কনডম প্রবেশ করান তিনি। ফ্লাইট অবতরণ করার ৩০ মিনিট আগে আকাশপথে তিনি বাথরুমে গিয়ে কনডমগুলো তার পায়ুপথে পুশ করেন। এজন্য মালয়েশিয়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তিনি জানান, শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এই অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেন। টাকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেছেন। যাত্রী শরীফ জানান, এক সময় তিনি কুমিল্লার স্থানীয়বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন। গত ৩ জানুয়ারি ব্যবসার কাজে মালয়েশিয়া যান। ২০১৬ সালে তিনি ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করেন। শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান জানান, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক স্বর্ণমানব শরীফ আহমেদকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। তিনি জানান, আটককৃত স্বর্ণ দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হবে। এর আগেও শুল্ক গোয়েন্দা শাহজালালে স্বর্ণমানবের সন্ধান পায়। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দরে এক যাত্রীর পায়ুপথ থেকে আটটি সোনার বার উদ্ধার করে শুল্ক বিভাগ।
×