ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশী বাধায় বিএনপির কর্মসূচী পণ্ড ॥ সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া অর্ধশতাধিক আহত

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

পুলিশী বাধায় বিএনপির কর্মসূচী পণ্ড ॥ সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া অর্ধশতাধিক আহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। মিছিলে বাধা দেয়ায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। নওগাঁয় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। গ্রেফতার করা হয় বিএনপির ১১ নেতাকর্মীকে। জয়পুরহাটে পুলিশের বাধায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল প- হয়ে যায়। বরিশালে বিএনপির সমাবেশে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী হয়। নারায়ণগঞ্জে লাঠিচার্জ করে যুবদলের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আটক করা হয় নাসিক কাউন্সিরসহ চারজনকে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনে বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী নওগাঁ শহরের কেডির মোড় বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে জেলা বিএনপির মিছিল বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক নান্নু। এ সময় নেতাকর্মীদের হাতে কালোপতাকা ও লাঠি ছিল। মিছিলটি সরকারী গার্লস স্কুল পার হয়ে মুক্তির মোড় এলাকায় পৌঁছলে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বাগ্বিত-ার এক পর্যায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের লাঠিপেটায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা মহিলা দলের সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শবনম মোস্তারি কলি, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আশিক ইকবাল ওথেলোসহ অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে জেলা যুবদলের সভাপতি বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক খায়রুল আলমসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানান, কোন ধরনের পূর্বানুমতি ছাড়াই বিএনপি মিছিল বের করে। একই সময় জেলা আওয়ামী লীগের একটি মিছিল দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করছিল। মিছিল দুটি মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বিএনপির মিছিলটিকে অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে গেলে দলটির নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এতে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামসুল আলম শাহ্ ও উপ-পরিদর্শক শহিদুল ইসলামসহ চার পুলিশ আহত হন। পরে পুলিশ মিছিলটিতে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। তিনি আরও জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বরিশালে বিএনপির সমাবেশে হামলা ॥ নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে এগারোটার দিকে সমাবেশ চলাকালে হামলা চালিয়েছে যুব ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। গুরুতর আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচী অনুযায়ী নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে’ বেলা পৌনে এগারোটার দিকে আমরা অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করছিলাম। আকস্মিকভাবে পুলিশের সামনেই যুব ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে সমাবেশের মাইক খুলে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় দফায় আমরা সমাবেশ করার জন্য দলীয় কার্যালয় থেকে বের হলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ লাঠিসোটা নিয়ে নেতাকর্মীদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। হামলায় এক নারী কাউন্সিলরসহ কমপক্ষে অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমশিনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ খান বলেন, বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং যুব ও ছাত্রলীগের কর্মীরা অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরের বাইরে অবস্থান নিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় পুলিশ মাঝখানে অবস্থান নিলেও বিএনপি অফিসের সামনে থেকে একটি বোতল ছুড়ে মারলে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। জয়পুরহাটে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা ॥ পুলিশী বাধার মুখে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল প- হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে জয়পুরহাট জেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে রেলগেট পার হয়ে ছানাঘরের কাছে এলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। পুলিশের বাধার মুখে বিক্ষোভ মিছিল না করতে পেরে তারা জেলা অফিসে অবস্থান নেন। সেখানে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান অভিযোগ করেন তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। মিছিলের সময় ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনার বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন জানান, পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা আমার জানা নেই। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ ॥ কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের উদ্যোগে একটি মিছিল করলে পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক ও নাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদসহ চারজনকে আটক করা হয়। যুবদল নেতারা অভিযোগ করেন, নগরীর ডিআইডি এলাকায় মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে ১০ নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ মিছিল থেকে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রানা মুজিব, যুবদল নেতা আলামিন খান ও বাদশা মিয়াকে আটক করে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় চারজনকে আটক করা হয়। টাঙ্গাইলে বিএনপির কর্মসূচী পণ্ড ॥ কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে টাঙ্গাইলে বিএনপির গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচী পুলিশী বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা কালো পতাকা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের বাধা দেয় এবং তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বিএনপির দুই কর্মীকে আটক করে পুলিশ। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম তোফার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা কালো পতাকা মিছিল করার জন্য দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিল। পরে নেতাকর্মীদের আটক করতে পুলিশ দলীয় কার্যালয় ও এর আশপাশ ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি চালায়।
×