ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে

খামারবাড়িজুড়ে সবজিমেলার আমেজ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

খামারবাড়িজুড়ে সবজিমেলার আমেজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সবজির সবুজ রঙে সেজেছে রাজধানীর খামারবাড়ির আ. কা. মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণ। দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো হরেক পদের সবজির সবুজ রং; ছুঁয়েছে বৈচিত্র্য। কোন কোন স্টলে বিক্রি হচ্ছে হরদম। আবার কিছু কিছু স্টলে কেবলই প্রদর্শনী। সবজি মেলার আমেজ ছুঁয়েছে খামারবাড়ির সামনের রাস্তাতেও। সাজানো হয়েছে নানা রকম ব্যানার ফেস্টুন। ঢাকায় দ্বিতীয়বারের মতো তিনব্যাপী সবজি মেলার প্রথমদিনের চিত্র ছিল অনেকটা এমন। ‘সুস্থ সবল স্বাস্থ্য চান, বেশি করে সবজি খান’ প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া ‘জাতীয় সবজি মেলা-২০১৭’ চলবে আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী খামারবাড়ির আ. কা. মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘জাতীয় সবজি মেলা-২০১৭’ উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি। আমন্ত্রিত অতিথিরা ফিতা কেটে মেলায় প্রবেশ করে ঘুরে দেখেন বিভিন্ন স্টল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। আগে শুধু শীতকালে সবজি পাওয়া যেত, কিন্তু এখন আমাদের দেশে ১২ মাসই সবজি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মানুষকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছি। দেশের এই অগ্রযাত্রা চলমান থাকবে। কারণ মানুষের মনেও বিপ্লব ঘটেছে। সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারলে কৃষকরা আরও বেশি সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হবেন। ফলে এর সুফল অনেক বেশি মিলবে। তিনি বলেন, কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে সবজি উৎপাদনে যে সফলতা দেখিয়েছে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কৃষি খাতে সফল একটি দেশ। আমরা যখন ৯৬’ সালে হাইব্রিড সবজি উৎপাদনের চিন্তা করি তখন অনেকে অনেক কথা বলেছিলো। কিন্তু আমি তাদের বলবও আপনাদের কথা যদি আমরা শুনতাম তাহলে সবজি উৎপাদনে এ বিপ্লব ঘটত না। তিনি বলেন, হাইব্রিড জাতের সবজি মাঠে নিয়ে যাওয়ায় আজ সবজি চাষে এ বিপ্লব ঘটেছে। বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ মডেল। সমালোচনাকারীর এক সময় এই হাইব্রিডের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। কিন্তু আমরা তাতে কান দেই নাই। এর সুফল পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের সবজি এখন বিদেশেও রফতানি করছি, যা এক সময় আমরা চিন্তা করতে পারতাম না। সবজি ব্যবসায়ী অন্যায় করলে তা মেনে নেয়া হবে না উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আপনারা এগিয়ে যান, সরকার সাহায্য করবে। সরকার কোন দিন ব্যবসা করবে না এবং করা উচিতও না। কিন্তু আপনারা যদি ব্যবসার নামে অন্যায় করেন, তাহলে সরকার চুপ করে বসে থাকবে না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হামিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ড. শাহাবুদ্দিন আহমদ। কৃষি মন্ত্রণলায় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি তথ্য সার্ভিসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ৭৭টি স্টল রয়েছে। দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন রকমের সবজি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে মেলা। ঘুরে দেখা যাবে যেমন; পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী সবজি কিনে ফেরা যাবে ঘরেও। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় শুধু সবজি নয়, সাজানো হয়েছে হরেক পদের পসরা। কয়েকটি স্টলে মধু বিক্রি হচ্ছে হরদম। রয়েছে অর্গানিক সবজির দোকান। দোকানিদের ভাষ্যমতে, কোন প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়েছে এসব সবজি। তাই দোকনগুলোতে সবজির কাটতিও বেশ। ফ্রেশ মার্টের স্টলে কথা হয় বিক্রয়কর্মী জেসমিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের সবগুলো সবজিই অর্গানিক প্রসেসে কৃষকের মাঠ থেকে সংগ্রহ করা। এখানে গোলবেগুন বিক্রি হচ্ছিল ৩০ টাকা কেজিতে। অফিস ফেরত কর্মজীবীদের এই দোকান থেকে ধনেপাতাও ক্রয় করতে দেখা গেছে।
×