ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ানডে ও টি২০ নেতৃত্ব ছাড়লেন ভারতের সফল তারকা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন ধোনি

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন ধোনি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আর মাত্র ৯ দিন পরই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে তিন ওয়ানডে ও তিন টি২০ ম্যাচের সিরিজ। কিন্তু এর আগেই হুট করে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও এ দুই স্বল্প পরিসরের ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। বুধবার ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডকে (বিসিসিআই) জানিয়ে দিয়েছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও নেতৃত্ব করতে চাইছেন না আর। ফলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ও টেস্টে তার উত্তরসূরি হিসেবে থাকা বিরাট কোহলিই অধিনায়ক হতে চলেছেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজ চলার সময়েই হুট করে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন ধোনি। সে সময় কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্তটা জানাননি। এমনকি টেস্ট ক্রিকেটে না খেলার বিষয়টিও সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেননি। তখন থেকে ভারতীয় দলের টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন কোহলি। বর্তমানে তার অধীনে ভারতীয় দল আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল। টেস্টে আর খেলেননি ধোনি, অবসর নিয়ে ফেলেছেন। ৩৫ বছর বয়সী এ অধিনায়ক এবার ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটেরও নেতৃত্ব ছাড়লেন। এ বিষয়ে ধোনির ম্যানেজার অরুণ পা-ে বলেন, ‘মুহূর্তের মধ্যে যে কেউ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এটা অবশ্যই ভালভাবে চিন্তা করেই নেয়া। ধোনি ভাবছেন এটাই উপযুক্ত সময় সরে যাওয়ার এবং শুধু উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে যাওয়ার। তিনি এমন কেউ না যে একটা দায়িত্ব ধরে রাখবেন, উল্টো তার এক্ষেত্রে ধারণা অন্য কাউকে সেটা বুঝিয়ে দেয়ার সময় হয়ে গেছে। তার কাছে দলের ভাল কিছু চাওয়াটাই সবচেয়ে বড় ও প্রথম চিন্তা। সে বিবেচনাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।’ ২০০৭ সালে একাধারে ভারতের তিন ফরমেটের অধিনায়ক হয়েছিলেন ধোনি। তখন থেকে তার নেতৃত্বে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে দল। সঙ্কটময় মুহূর্তগুলোতে দারুণ বিচক্ষণতা, স্থিরতা এবং ঠা-া মাথায় কার্যকর সব সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নাম কামিয়ে ফেলেছিলেন। তার অধীনে ১৯৯ ওয়ানডেতে ১১০টিই জিতেছে ভারত, ৭২ টি২০ ম্যাচে জিতেছে ৪১টি। সবমিলিয়ে উইকেটরক্ষক অধিনায়ক হিসেবে তিনি সর্বাধিক ২৭১ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন ধোনি। উইকেটরক্ষক অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ৫৩.৯২ গড়ে করেছেন ৬৬৩৩ রান। তার পরে আছেন শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ১৭৫৬ রান করে। আর গড়ের দিক থেকে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স এগিয়ে ৬৫.৯২ গড় নিয়ে। টি২০ ক্রিকেটে একমাত্র উইকেটরক্ষক অধিনায়ক হিসেবে তিনি ১০০০ রান করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তিনি ১২২.৬০ স্ট্রাইকরেটে ১১১২ রান করেন। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে ৪০.৬৩ গড়ে করেছেন ৩৪৫৪ রান। আর কোন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সীমিত ওভারে ১০০ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেননি। ৬৭ ম্যাচে সেটা করে দ্বিতীয় স্থানে সাঙ্গাকারা। ক্রিকেট ইতিহাসে ধোনিই একমাত্র অধিনায়ক যিনি তিন ধরনের আইসিসি টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতিয়েছেন দলকে নেতৃত্ব দিয়ে। তার অধীনে ভারতীয় দল ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয় করেছিল। টেস্টের অধিনায়ক হিসেবেও দারুণ সফল ছিলেন ধোনি। তার অধীনে ভারত টেস্টে ২৭ জয়, ১৮ পরাজয় ও ১৫ ড্র দেখেছে। তিনিই একমাত্র ভারতীয় অধিনায়ক যার অধীনে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এমন সফলতার মধ্যে থাকা অবস্থায়ই নেতত্ব ছেড়ে দিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিলেন ধোনি। এ বিষয়ে বিসিসিআই প্রধান নির্বাহী রাহুল জোহরি বলেন, ‘সব ফরমেটে এমএস ধোনির অধিনায়ক হিসেবে ভারতের পক্ষে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিসিসিআই ও ক্রিকেটভক্তদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। তার নেতৃত্বাধীনে ভারতীয় ক্রিকেট নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছে।’ ধোনির আগে অধিনায়কত্ব ছেড়েও দলের অপরিহার্য ক্রিকেটার হিসেবে দীর্ঘদিন টিকে থাকার নজির সৃষ্টি করেছেন আরও ৫ ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক, ইংল্যান্ডের নাসের হুসেন, ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী ও পাকিস্তানের ইউনুস খান। এর মধ্যে ইউনুস ২০০৯ সালে অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরও এখন পর্যন্ত অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে যাচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় ধোনি নিজেকে কতদূর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে পারেন দলে।
×