ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দলগত নৈপুণ্যে নজর বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

দলগত নৈপুণ্যে নজর বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য মিলেছে। কিন্তু তাতে করে জয় মিলেনি। জয়ের সুযোগ তৈরি করেও হারই হয়েছে নিয়তি। টানা তিন ওয়ানডে হারের পর প্রথম টি২০তেও হেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কারণ দলগত নৈপুণ্য যে মিলেনি। এক-দুইজন ভাল খেললে কি আর ম্যাচ জেতা যায়। তাও আবার সেই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যগুলো যদি আহামরি কিছু হত, তাহলে কিছু একটা হতে পারত। সেটিওতো হয়নি। আর তাই বাংলাদেশ দলের এখন দলগত নৈপুণ্যের দিকেই নজর রয়েছে। তা না হলে যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে জেতা অসম্ভব। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ বাঁচানোর দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচের আগে তাই দলগত নৈপুণ্যের দিকেই বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। যে স্টেডিয়ামে হবে শেষ দুটি টি২০ ম্যাচ। সাব্বির রহমান রুম্মন দলগত নৈপুণ্যের কথাই বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘আমরা দল হিসেবে পারফর্ম করতে চাই।’ একই কথা ঘুরে ফিরে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে সবার কণ্ঠে বাজছে। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা দলগতভাবে নৈপুণ্য দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই দলের বেহাল অবস্থা হয়ে চলেছে। নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। তাতে কোন ব্যাটসম্যানই অর্ধশতক করতে পারেননি। এরপর যখন মূল সিরিজ শুরু হলো, তাতেও একই চিত্র ফুটে উঠল। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে হারা ম্যাচে সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অর্ধশতক করতে পেরেছেন। কিন্তু ৩৪২ রানের টার্গেট অতিক্রম করার মতো কোন নৈপুণ্য মিলেনি। নিউজিল্যান্ড যে এত রান করল, তাতেই বোঝা যাচ্ছে বোলাররা কিছুই করতে পারেননি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করলেন। নিউজিল্যান্ডকে ২৫১ রানের বেশি করতে দেননি বোলাররা। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় জেতার সুযোগ কাজে লাগান যায়নি। তামিম-ইমরুল মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ৭৫ রানের জুটি গড়েন। বাংলাদেশ ১ উইকেটে ১০৫ রানও করে ফেলে। কিন্তু এরপর আর ৭৯ রান যোগ করতেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। ইমরুল কায়েস শুধু অর্ধশতক করতে পারেন। তাতে করে ৬৭ রানে হারে বাংলাদেশ দল। সিরিজ হারও নিশ্চিত হয়ে যায়। এক ম্যাচ হাতে থাকতেই সিরিজ হার হয়। তৃতীয় ওয়ানডেতেও একই দশা হয়। এবারও ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হন। এবার অর্ধশতক করতে পারেন শুধু তামিম। কিন্তু বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২৩৬ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডও ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিল। বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশও করে দিল। আড়াই বছর পর বাংলাদেশও হোয়াইটওয়াশ হলো। হারের গোলকধাঁধা থেকে টি২০ সিরিজেও বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম টি২০তেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই ডোবায় বাংলাদেশকে। তাতে ৬ উইকেটে জয় তুলে নিয়ে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। আজ দ্বিতীয় টি২০তে যদি বাংলাদেশ হেরে যায়, তাহলে ওয়ানডে সিরিজের মতো টি২০তেও এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হার হবে। ম্যাচটির আগে দলগত নৈপুণ্যের চিন্তা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। নিউজিল্যান্ডকে বিপাকে ফেলতে হলে যে দলগত নৈপুণ্য ছাড়া আর কোন পথও নেই। দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা দলগত নৈপুণ্যের দিকেই বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমাদের এখন মনোযোগ দিতে হবে, সুযোগ তৈরি হলে তা যে কোনভাবে কাজে লাগানোর দিকে। সুযোগ হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না। ব্যক্তিগত কিছু পারফর্মেন্স হয়েছে। কিন্তু যেটা হলে দলের জন্য কার্যকর হতে পারত বা ওদের দলকে ভোগাতে পারত, তেমন পারফর্মেন্স হয়নি। যেটা হয়ত আমরা আমাদের ঘরের কন্ডিশনে করে আসছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্যই আরও বড় কিছু আশাকরি।’ দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও বলেছিলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এখন দল হিসেবে পারফর্ম করা। আমরা বিশ্বাস করি আমরা যদি টিম পারফর্মেন্স দেখাতে পারি, দল হিসেবে খেলতে পারি তাহলে সাফল্য আসবে।’ সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘আমাদেরও সামর্থ্য আছে ভাল খেলার এবং জেতার। যেহেতু সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, তাই ছন্দ ধরে রাখা জরুরী। কোন কারণে ছন্দ হারিয়ে বসলে আর রক্ষা নেই। সব সম্ভাবনা ও সুযোগ হাতছাড়া হবে। সবাই মিলে ভাল খেলেই জিততে হবে। জিততে হলে আমাদের সবাইকে মিলে ভাল খেলতে হবে। বাংলাদেশ যে খেলাগুলোতে জিতেছে সেগুলোয় ৫-৬ জন ভাল পারফর্ম করেছে। ভাল বল করেছে ২-৩ জন। আবার ২-৩ জন ব্যাটসম্যান লম্বা ইনিংস খেলেছে। জিততে হলে এভাবে সবাই মিলে পারফর্ম করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।’ সাব্বিরও যেন বৃহস্পতিবার তাই মনে করিয়ে দিতে চাইলেন। বললেন, ‘আমরা এখানে এসেছি ভাল ক্রিকেট খেলতে। ভাল খেলতে পারছি না মানে এই না যে, ভাল খেলতে পারি না। পরের ম্যাচগুলোতে আমরা আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। যেন জিততে পারি। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স কিছু কিছু হচ্ছে। কিন্তু দলীয় পারফর্মেন্স হচ্ছে না। আমরা সবাই সেদিকে নজর দিচ্ছি। টি২০তে জিততে সব বিভাগেই ভাল করতে হবে। আগের ম্যাচে ১৪১ করেও আমরা যে খেলা ১৮ ওভার পর্যন্ত নিতে পেরেছি। বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। ১৬০-১৭০ রান করতে পারলে হয়ত জিতেই যেতাম।’ এখন সামনের ম্যাচগুলোতে দলগত পারফর্মেন্স মিললেই হয়।
×