ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি

পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে না আর মূল্যস্ফীতি। ঘোড়াকে বশে আনার শক্তিমত্তা অর্জন করেছে অর্থনীতির এই খাতটি। তাই কমে আসছে মূল্যস্ফীতির চাপ। তার সঙ্গে কমেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। মূল্যস্ফীতিতে এখন বইছে সুবাতাস এবং চলছে সুসময়। সাধারণ মানুষ তাই আছেন স্বস্তিতে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্র্ভূত উভয় খাতেই কমেছে মূল্যস্ফীতি। সীমিত আয়ের মানুষ অপেক্ষাকৃত কম অনুভব করছেন মূল্যস্ফীতির চাপ। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় রয়েছে তার প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। বিদায়ী বছর ২০১৬ সাল ছিল এক্ষেত্রে এক বড় নজির। গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি ছিল গত ডিসেম্বর মাসে। এ সময়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ। চার বছর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর আগের মাস আগস্টেও ছিল ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর গত ৮৭ সালের মধ্যে ওই দুই মাসেই ৫ শতাংশের নিচে নেমেছিল মূল্যস্ফীতি। সবচেয়ে ভাল সংবাদ হচ্ছে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস ছাড়া বাকি পুরো সময় জুড়েই মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের ঘরেই ছিল। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধিও মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারেনি। সারা বছরের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মানে, বিদায়ী বছরে সীমিত আয়ের মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপ তেমন অনুভব করেনি। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা লক্ষ্যমাত্রার নিচে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র সচল থাকা এবং দৈব-দুর্বিপাক তথা বন্যার প্রকোপ না ঘটার কারণে সার্বিক অবস্থা ছিল অনেকটাই সুনসান। যে কারণে দ্রব্যমূল্য ছিল কম এবং ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার আওতায়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট বলতে পূর্ববর্তী বছরের নির্দিষ্ট কোন মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকের তুলনায় পরের বছর একই মাসে ওই সূচক কতটুকু বাড়ে তার শতকরা হারকে বোঝায়। অপরদিকে বারো মাসের পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির গড় করে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়। খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্য নিয়ে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান করা হয়। জাতীয় মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি গ্রাম এবং শহরের মূল্যস্ফীতির আলাদা হিসাব করা হয়ে থাকে। খাদ্যপণ্যের দাম কমায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পায়। গত ডিসেম্বর মাসে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় খাতেই মূল্যস্ফীতি কমেছে। গত নবেম্বর মাসের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে ডাল, শাক সবজি, পেঁয়াজ, আদাসহ ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। অপরদিকে খাদ্যবহির্ভূত উপখাত তথা কাপড়চোপড়, জ্বালানি ও আলো, আসবাবপত্র, চিকিৎসা সেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই ছিল। বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি সেই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকছে। নগর পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি আর গ্রামীণ পর্যায়ে মূল্যস্ফীতিতে বেশ ফারাক রয়েছে। খাদ্যপণ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যেও মূল্যস্ফীতি কমেছে। লক্ষণীয় যে, ২০১৬ সাল জুড়েই খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি পৌনে ৪ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত খাতে পৌনে ৯ শতাংশ থেকে প্রায় ধারাবাহিকভাবে কমে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশে নেমেছে। এখনও গ্রামের মানুষের চেয়ে শহরের মানুষের মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। তাদের অপেক্ষাকৃত বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়। মানুষের আয়ের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, তা জাতীয় মজুরি সূচকে নির্ধারণ করা যায়। গত ডিসেম্বর মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর অর্থ দাঁড়ায়, বিগত এক বছরের ব্যবধানে এই হারে মজুরি বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি। তাই দ্রব্যমূল্য বাড়লেও সাধারণ ক্রেতার নাগালের মধ্যেই ছিল। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে এটা যেমন প্রত্যাশা, তেমনি অন্যান্য পণ্যেও। মূল্যস্ফীতি হ্রাস সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। সে আশায় যেন তারা পল্লবিত হতে পারে, সেই প্রত্যাশা।
×