ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গৌতম পাণ্ডে

সময়ের দর্পণ ‘দি জুবলী হোটেল’

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

সময়ের দর্পণ  ‘দি জুবলী হোটেল’

‘দি জুবলী হোটেল’ নাটকটিতে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের প্রতীকী চিত্র। এক কথায় নাটকটি বর্তমান সময়ের এক দর্পণ। সংখ্যালঘু আক্রমণ, মুক্তমনা মানুষের ঝুঁকি, নারীর প্রতি আগ্রাসন সবই এ নাটকে উঠে এসেছে শৈল্পিকভাবে। এমনকি বাদ পড়েনি দেশের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। দেশের অন্যতম নাট্যদল ‘আরণ্যক’ মঞ্চে নিয়ে এসেছে নতুন নাটক ‘দি জুবলী হোটেল’। মান্নান হীরার রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় গত বছরের ২৯ নবেম্বর। এটি আরণ্যকের ৫৭তম নাট্যপ্রযোজনা। মফস্বল শহরের একটি বিখ্যাত চায়ের দোকানকে কেন্দ্র করে নাটকটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। নাটকের গল্পে দেখা যায়, জুবলী হোটেলে শহরের সর্বস্তরের মানুষের নিয়মিত আড্ডা চলে। হারু ম-ল নামের এক প্রবীণ নাট্য নির্দেশক তার দলবল নিয়ে এখানে নিয়মিত আড্ডা দেয় আর ‘সুলতান রাজিয়া’ নামক একটি নাটক করার জন্য নিয়মিত মিটিং করে। ২০ বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চললেও অদ্যবধি সুলতান রাজিয়া মঞ্চে আসেনি। কারণ সুলতান রাজিয়া চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কোন অভিনেত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। শহরে আসে জাদুর দল ‘দি ঘোষ ম্যাজিক পার্টি’। সেই ম্যাজিক পার্টির নৃত্যশিল্পী হেমামালিনীকে দেখে হারু ম-লের মনে হয়, সেই হতে পারে সুলতান রাজিয়া। হারু ম-ল তাকে প্রস্তাব দেয় অভিনয় করার জন্য। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ম্যাজিক পার্টির সঙ্গে পাকা স্ট্যাম্পে চুক্তি। অন্যদিকে জুবলী হোটেলের কর্মী মমতা। যে কিনা নানা প্রতিকূলতার মাঝেও সারাক্ষণ একটি সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্মম ষড়যন্ত্রে যা প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে হয় খানখান। জুবলী হোটেলের আরেকজন নিয়মিত আগন্তুক হলেন বাউল। জুবলী হোটেলে বাউল এলে যেন প্রাণের স্পন্দনে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে হোটেলটি। বাউলের কণ্ঠে মানব ধর্মের গান শুনে সকলের মনে বোধোদয় হলেও ধর্মীয় উগ্রবাদের সঙ্গে যুক্ত কিছু মানুষের তা ভাল লাগে না। তাইতো তাদের রোষানলে পড়তে হয় এই বাউলকে। এ রকম নানা দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে নাটকটির কাহিনী এগুতে এগুতে হঠাৎ এক মারাত্মক সঙ্কট এসে আবির্ভূত হয়। শহরের মেথরকন্যা মনলোভা, যে নিয়মিত জুবলী হোটেলের সামনের রাস্তা ঝাড়– দিত, সে ধর্ষিত হয়। এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় শহরে। ম্যাজিক পার্টি শহর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। বাউলকে গুম করে ফেলা হয়। আত্মহত্যা করে মনলোভা। যে জুবলী হোটেলে শিল্প-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট মানুষসহ সমাজের প্রগতিশীলদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল, প্রগতির বিপক্ষ এক অপশক্তি বন্ধ করে দেয় তাদের আনাগোনা; জ্বলতে থাকে জুবলী হোটেল। খুব সাধারণ রীতি ব্যবহার করা হয়েছে নাটকটিতে। অভিনয়প্রধান নাটক হওয়ায় আঙ্গিক নিয়ে নিরীক্ষার দরকার পড়েনি। খুব সাধারণভাবে দেশের সঙ্কটগুলো এতে তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটি সমসাময়িক অনেকগুলো ঘটনার সমন্বয়ে লেখা। জুবলী হোটেলের এক সাধারণ নারীকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তমালিকা কর্মকার। আসাধারণ অভিনয় করেছেন তিনি। এতে তার চরিত্রের বদলও লক্ষ্য করা গেছে। নাটকের নির্দেশক মান্নান হীরাও অভিনয় করেছেন। তিনি হারুদা নামে এক প্রবীণ নাট্য নির্দেশকের চরিত্রে কাজ করছেন, যিনি ২০ বছর ধরে মঞ্চে ‘সুলতান রাজিয়া’ নামে একটি নাটক মঞ্চে আনতে চান, কিন্তু নারী চরিত্রের অভাবে পারছেন না। নাটকটিতে আর যারা অভিনয় করছেন তারা হলেন-আরিফ হোসেন আপেল, সাজ্জাদ সাজু, রুবলী চৌধুরী, মনির জামান, অপু মেহেদী, ইশতিয়াক হোসেন, রিয়া, রানু, রিমা, আমানুল হক হেলাল, পার্থ চ্যাটার্জী, কৌশিক সাহা, মাহাফুজ মুন্না, নিকিতা নন্দিনী, সাঈদ সুমন, মরু ভাস্কর, তাজউদ্দিন তাজু, রেজওয়ান পারভেজ, কামরুল হাসান, ফিরোজ মামুন, জুবায়ের জাহিদ, শাহরান, শেখ জিয়াদুল হক, এস রানা, আল আমিন, সুজাত শিমুল, সাক্ষ্য শাহীদ ও আমিনুল হক। নাটকটির নেপথ্যশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন- সহকারী নির্দেশক কামরুল হাসান, মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা ফয়েজ জহির, সঙ্গীত পরিকল্পনা সুজেয় শ্যাম, পোশাক পরিকল্পনা সুরাইয়া শান্তা, কোরিওগ্রাফি র‌্যাচেল প্রিয়াংকা পেরিস, পোস্টার ও প্রকাশনা মোস্তাফিজ কারিগর, অপু মেহেদী।
×