ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পেশাদার লীগে অপেশাদার আচরণ!

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

পেশাদার লীগে অপেশাদার আচরণ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক দল মাঠে এলেও অন্য দল মাঠে না আসায় মাঠে আসা দল ওয়াকওভার পেয়েছে, দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়া বা গোলযোগপূর্ণ কারণে দু’দলের খেলা প- বা পরিত্যক্ত হয়েছে, খেলা শেষ না করেই মাঠ ছেড়ে এক দল চলে গেছে ... এমন ঘটনার বহু নজির আছে। কিন্তু বাইলজকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মাঠেই এলো না দুটি দলই (এটি ছিল রেলিগেশন এড়ানোর প্রথম প্লে-অফ ম্যাচ, দ্বিতীয় ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল একই ভেন্যুতে, আগামী শনিবার), বুধবার এমনই ন্যক্কারজনক এবং নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। যাকে বলে পেশাদার লীগে দুটি ক্লাবের অপেশাদার আচরণ! রেলিগেশনের প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে মাঠেই নামেনি (এলে তো নামবে, স্টেডিয়ামের চৌহদ্দিতেই কারুর টিকিটিও দেখা যায়নি!)। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। এমন ঘটনা ঘটানোর জন্য এখন ক্লাব দুটিকে শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল শেষ হয়েও হয়নি। লীগে ফুটবলে অংশ নেয়া ১২ দলের মধ্যে প্রথম দশটি দলের স্থান নির্ধারণ হয়ে গেলেও শেষ দুটি দলের স্থান এখনও নির্ধারিত হওয়া বাকি। কারণ উত্তর বারিধারা এবং ফেনী সকার ক্লাবের পয়েন্ট সমান হয়ে যাওয়াতে তাদের মধ্যে আরও দুটি প্লে-অফ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবার কথা। যার প্রথমটিই অনুষ্ঠিত হয়নি। লীগের বাইলজ অনুযায়ী রেলিগেশনের স্থান নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে নিচের দুটি দলের পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে তাদের মধ্যে হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে ভিত্তিতে দুটি প্লে-অফ ম্যাচ হবে। দুই ম্যাচে বেশি গোল করা দলকে জয়ী বলে ধরা হবে। যদি এই ম্যাচগুলোয় উভয়দলই সমান গোল করে, সেক্ষেত্রে এ্যাওয়ে ম্যাচের গোলকে দ্বিগুণ হারে হিসেব করা হবে। যদি তারপরও সমতা হয়, সেক্ষেত্রে উভয় দল দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে ১৫+১৫ মিনিট করে অতিরিক্ত খেলবে। তাতেও যদি হারজিত নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে খেলা গড়াবে টাইব্রেকারে। লীগে এক থেকে দশ নম্বরে আছে যথাক্রমে ঢাকা আবাহনী (৫২ পয়েন্ট), চট্টগ্রাম আবাহনী (৪৭), শেখ জামাল ধানম-ি (৩২), ব্রাদার্স ইউনিয়ন (৩০), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (৩০), আরামবাগ (২৭), রহমতগঞ্জ (২৭), শেখ রাসেল (২৫), বিজেএমসি (২৫) এবং মোহামেডান (২০)। তলানির দুই বারিধারা ও ফেনী সকারের সংগ্রহ ১৮ পয়েন্ট করে। বুধবার বাফুফে ম্যাচের সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও বাইলজকে থোড়াই কেয়ার করে মাঠেই হাজির হয়নি বারিধারা-ফেনী সকার। ফলে নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ রেফারি (রেফারি জসিমউদ্দিন, সহকারী রেফারি ফেরদৌস আহমেদ এবং এম জেড এফ নাহিদ) মাঠে নিয়ম অনুযায়ী ১৫ মিনিট অপেক্ষা শেষে বাঁশি বাজিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। রেলিগেশন এড়ানোর এই প্লে-অফ ম্যাচ না খেলার জন্য অবশ্য দু’দলই আগে থেকে লিখিত আবেদন জানিয়েছিল বাফুফের কাছে। তারা অনুরোধ জানায়Ñ তারা প্লে-অফ খেলতে পারবে না। দুই দলকেই যেন পেশাদার লীগে রেখে দেয়া হয়। তাছাড়া প্লে-অফ না খেলার ব্যাপারে একটি যুক্তিও দেয় তারা (তবে সেটা আনঅফিসিয়ালি)। সেটা হচ্ছেÑ দলের বিদেশী খেলোয়াড়দের সঙ্গে ক্লাবের চুক্তির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে প্লে-অফ ম্যাচ দুটিতে তাদের সার্ভিস পাওয়া যাবে না। তবে ক্লাব দু’টির এই যুক্তি ধোপে টিকবে না। কারণ লীগের খেলা তো নানা কারণে পিছিয়ে ৩১ ডিসেম্বরের পরেও হতে পারতো, তাছাড়া বিদেশী খেলোয়াড় তো দুই দলেই নেই, সেক্ষেত্রে দেশীয় খেলোয়াড় দিয়ে খেলা চালাতে তো কোন অসুবিধে নেই। তবে বাফুফে দুই ক্লাবের আবেদন নামঞ্জুর করে দেয়। তারা বাইলজের বাইরে যেতে পারবে না এবং দুই দলকেই অবশ্যই দুটি প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয় বাফুফে। কিন্তু বাফুফের কথা শোনেনি তারা। বাফুফের পেশাদার লীগ কমিটির কো-চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বুধবার মাঠেই উপস্থিত ছিলেন। মাঠে না আসায় ক্লাব দু’টি সম্পর্কে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘বাইলজে লেখা আছে কোন দল যদি প্রিমিয়ার লীগের কোন নির্ধারিত ম্যাচে অংশগ্রহণ না করে বা ওয়াকওভার দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ওই দল লীগের যতগুলো ম্যাচ আছে, তার কোনটিতেই অংশগ্রহণ করেনি।’ সেই হিসেব অনুযায়ী ফেনী সকার এবং উত্তর বারিধারা এই লীগের যে ম্যাচগুলো খেলেছে এবং যেগুলো খেলেনি তার সবগুলোতেই তারা অংশ নেয়নি ধরে নেয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী দুই দলেরই প্রিমিয়ার লীগ থেকে অবনমিত হয়ে যাবার কথা। এখানে আবার অন্য প্রসঙ্গও এসেছে। তা হলোÑ সকার-বারিধারার সব পয়েন্ট যদি মুছে দেয়া হয়, তাহলে তাদের প্রতিপক্ষদেরও পয়েন্ট মুছে দেয়া হলে সেক্ষেত্রে পয়েন্ট টেবিলে দলগুলোর অবস্থানের হেরফের ঘটতে পারে। সেটা হলে বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী, রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনী এবং তৃতীয় স্থানের অধিকারী শেখ জামাল ধানম-ির মধ্যে অবস্থানের অদল-বদল হতে পারে কি না। তবে খতিয়ে দেখা গেছে ওই তিন ক্লাবই সকার-বারিধারার বিরুদ্ধে দুই লেগের ম্যাচ খেলেই পূর্ণ ১২ পয়েন্ট কুড়িয়ে নিয়েছিল। কাজেই সেরা তিনের অবস্থানের কোন হেরফের অন্তত হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। আব্দুর রহিম জানান, ‘এখানে তারা আমাদের লীগের নির্ধারিত সবগুলো ম্যাচই খেলেছে। এটা প্লে-অফ ম্যাচ। এটাকে আমরা কোন হিসেবে নেব, তা লীগ কমিটির সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ যদিও লীগের নিয়ম অনুযায়ী একটি দল অবনমিত হবার কথা। কিন্তু প্লে-অফ না খেলাতে এখন দুটি দলই অবনমিত হয়ে যাবার কথা। সে অনুযায়ী চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ থেকে একটি দল উঠে আসার বদলে তিনটি দল খেলতে পারে আগামী মৌসুমে পেশাদার লীগে। নিয়ম অনুযায়ী বারিধারা-সকারকে অবনমিত হবার পাশাপাশি ওই দিনের ম্যাচ আয়োজনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
×