ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিষয় ॥ বিচার মানি, তালগাছ আমার

সমাজ ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

সমাজ ভাবনা

মোঃ রফিকুল ইসলাম উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো- নিয়ম-কানুন-শৃঙ্খলা। তা মেনেই সমাজ সভ্য, সুখী ও সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে নিয়ম-কানুন মানার প্রবণতা ক্রমহ্রাসমান, যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। যেখানে বনের পশু-পাখিও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনচক্রে অভ্যস্ত, সেখানে আমরা তথাকথিত শিক্ষিত হয়েও অনিয়মকে নিয়মিত নিয়মে পরিণত করছি। ফলে, সামাজিক মূল্যবোধের হচ্ছে চরম অবক্ষয়, সমাজ হারাচ্ছে শান্তি, ন্যায়-নীতি ও মানবিকতা। প্রচলিত নিয়ম-কানুন আজ লঙ্ঘিত হচ্ছে বহু অফিস-আদালতে, ব্যাংক ও বীমায়, উন্নয়ন সংগঠনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কল-কারখানায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে, হাট-বাজারে, হাসপাতালে, যানবাহন ও গণপরিবহনে, ফুটপাথে, নিয়োগে ও ইন্টারভিউ বোর্ডে, রাজনীতি ও সমাজসেবায়। আর এ কারণে, শিক্ষার্থীরা সরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়েও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। ঘুষ ছাড়া হয় না কর্মসংস্থান, নড়ে না ফাইল-পত্র। অনিয়মের কবলে দখল হয়ে যায় ফুটপাথ ও সরকারী জমি; জমে যায় দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম, অথচ প্রভাবশালী চলে উলটো পথে; সৃষ্টি হয় পরিবেশ দূষণ, মেশানো হয় খাদ্যে বিষ ও ভেজাল। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই ব্যাংক থেকে ঋণের নামে লোপাট হয় শত শত কোটি টাকা, বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ যায় চোরের কবলে; দীর্ঘমেয়াদের জন্য তৈরী করা রাস্ত পাঁচ বছরেই হয়ে পড়ে অকেজো, ব্রীজ-কালভার্ট ভেঙ্গে পড়ে সময়ের বহু আগে। অনিয়মের কারণেই বৃদ্ধ দরিদ্ররা পায় না বয়স্ক ভাতা, প্রকৃত দুস্থরা পায় না পুনর্বাসন ও ত্রাণসামগ্রী, বিনামূল্যে মেলে না ঔষধ-সামগ্রী। অনিয়মের কারণেই হাত বাড়ায় মাদকের কালো থাবা ও সন্ত্রাস। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ধীরে ধীরে অন্যায়-অনিয়মে সবাই অভ্যস্ত হচ্ছে অথবা সয়ে নিচ্ছে। অনেকেই অনিয়মকে অন্যায় মনে করছে না, ধরে নিচ্ছে স্বাভাবিক রীতি হিসেবে; এটাই আশংকার কথা, এটাই ভয়ংকর! এর পরিণতি কোথায় তা আমাদের বুঝতে হবে, নিশ্চয়ই তা মঙ্গল বয়ে আনবে না ! বীর ও দেশপ্রেমিক এ জাতি প্রাণ বাজী রেখে ও প্রাণের বিনিময়ে উপহার দিয়েছে ১৯৫২ ও ১৯৭১, রাষ্ট্রভাষা ও মহান স্বাধীনতা। এ জাতি কি অনিয়ম থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে সক্ষম নয় ? এ গ্লানির পথ কি আমরা ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য রেখে যাবো ? অথচ, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হলে দেখা যায়, প্রায় সবাই নিয়মের ভেতর ফিরে আসে। আবার যে মানুষটি দেশে অনিয়ম করে বেড়ায়, সেই একই ব্যক্তি প্রবাসে দিব্যি নিয়ম মেনে চলে। মূলতঃ প্রভাব, অজ্ঞতা ও লোভ-লালসা থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির উৎপত্তি। সুশাসন, সুশিক্ষা, দেশপ্রেম ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এ জাতিকে এহেন সমস্যা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম। চাই এসবের সঠিক চর্চা। দৃঢ় বিশ্বাস, যে কোন সরকারের আমলেই- যদি সকল মন্ত্রী-এমপি, সচিব, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার, ইউএনও ও ওসি সাহেবগণ দুর্নীতিমুক্ত হয়ে সঠিকভাবে দায়িত্বরত থাকেন, তাহলে অচিরেই অনিয়ম-দুর্নীতি মুক্ত হবে এ সমাজ। কারণ, এটা সমাজের দূরারোগ্য কোন ব্যাধি নয়। দুর্গাপুর, নেত্রকোনা থেকে ওপরে এক ভেতরে অন্য মোঃ হাসান মুন্না ডাক্তার দেখাতে গেলে সিরিয়াল ভঙ্গ করাকে আমরা অনেক বড় অন্যায় হিসেবে দেখি। যখন কেউ এ ধরনের কাজ করে তার প্রতিবাদ করি। গলা উঁচু করে কথা বলি। সবই ঠিক আছে। কিন্তু নিজের পরিচিত বা বন্ধুস্থানীয় ডাক্তার কিংবা হাসপাতালে সংযুক্ত কেউ যখন থাকে তখন এই আমরাই আবার সিরিয়াল ভাঙ্গি। তখন মনে থাকে না এটা অন্যায়! অথচ এ কাজটা অন্য কেউ করলে আমরা প্রতিবাদ করতাম। হাসপাতাল একটা উদাহরণ মাত্র। সেবা নেয়ার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও একই চিত্র। অন্যে করলে অন্যায়, নিজের বেলায় তা আর অন্যায় মনে হয় না। রাজনীতিবিদরা সভা সমাবেশে অনেক দেশপ্রেমের কথা বলেন। সবাই দেশপ্রেমিক হওয়ার পরামর্শ দেন। কারো বক্তৃতা মুগ্ধ হয়ে শোনে শ্রোতারা। অথচ তাদের কেউ কেউ এমন সব কাজ করেন যাতে দেশের ক্ষতি হয়, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বড় বড় সরকারি কর্মকর্তারা যখন দুর্নীতি বিরোধী অনুষ্ঠানে আসেন তখন দুর্নীতি যে কত বড় অন্যায় তা বলেন। দুর্নীতির ক্ষতি নিয়ে কথা বলেন। দুর্নীতির কারণে কত মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয় সে সম্পর্কে বলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকতে সকলের প্রতি আহবান জানান। আবার দেখা যায় তাদেরই কারো কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মুখ দিয়ে যা বলা হয়, নিজে তা বিশ^াস করে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারাটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা অনেক সময়ই ব্যর্থ হই। অথচ তা স্বীকার করি না। গলা উঁচু করে উল্টো কথা বলি। বড় বড় নীতি বাক্য ফলাই। বিচার মানি, তালগাছ আমার এটাই যেন আমাদের বেশিরভাগ সময়ের নীতি। মেম্বার পাড়া, বান্দরবান থেকে অসুস্থ প্রবণতা বন্ধ হোক আ ব ম রবিউল ইসলাম রবীন বিশ্বকবি রবীন্দনাথ ঠাকুর বলেছেন, মানুষ পণ করে হাফ ছেড়ে বাঁচবার জন্য, অতএব পণ না করাই ভাল। আমরা ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনে অনেকে শপথের মাধ্যমে কর্মে প্রবেশ করি। তারপর অনেকেই শপথ ভুলে, আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বড় করে দেখতে গিয়ে অন্যায়ের আশ্রয় নিই। ফলে সমাজে মানুষ মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়ছে, একে অপরের সঙ্গে কলহে লিপ্ত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে সংঘাত, সংঘর্ষ। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির খোঁজে হাজারো তরুণ চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। ঘুষ, রাজনৈতিক তদ্বির ছাড়া চাকরি নেই। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে কোন কোন তরুণ ঘুষের মাধ্যমে চাকরি নিয়ে নিজেকে বদলে ফেলে। এক সময় সে নিজেই অসৎ জীবনকে বেছে নেয়। সেও ঘুষ খাওয়া শুরু করে। তখন থেকে সে নিজেরটাই বড় করে দেখে। আদর্শ, সত্য থেকে দূরে চলে যায়। এমনি করে একদিন সে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। সমাজে এই শ্রেণীর সংখ্যা বাড়ছে। কেউ কারোর দিকে আগের মতো নিবেদিত হয়ে এগিয়ে আসছে না। সর্বত্রই ‘আমি’, ‘আমি’ এখন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেখেছি বিপদ হতে পারে জেনেও অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, আহার দিয়েছে। সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে এই পারস্পরিক সহযোগিতা বিজয়কে সহজ করেছে, দ্রুত করেছে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের এই দেশে এখন মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। প্রকাশ্যে ধূমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এই বিষয়টি ঘোষণা পর্যায়েই দেখা যায়, ঘোষণাটি কার্যকর যারা করবে তাদের দেখা পাওয়া যায় না। সড়ক-মহাসড়কে প্রকাশ্যে পুলিশ চাঁদাবাজি করে, বছরের পর বছর। প্রতি বছর ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অতিরিক্ত টাকা আদায় করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। বছরের পর বছর আইন ভাঙ্গার এই প্রবণতা থামে না। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস আদালতে ঘুষ চলছে। আদালত পাড়ায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা অবৈধ পথে হাতবদল হয়। বিনা অপরাধে অসহায় অনেক মানুষ কারাগারের ভেতরে রয়ে যায়। বিচারের বাণী এখানে নীরবে কাঁদে। অসহায় হত দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকার মাত্র ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার ব্যবস্থা করার পর অনেকে সেই চাল আত্মসাত করেছে। যারা করেছে তারা কেউ জনপ্রতিনিধি। প্রতিবন্ধীর জন্য সরকার ভাতার ব্যবস্থা করেছে। সেই প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে কার্ড করে দেয়ার নাম করে টাকা আদায় করে কিছু অসৎ জনপ্রতিনিধি। সরকার যাবে কোথায়? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজান মাস এলে ব্যবসায়ীরা সাশ্রয়ে দ্রব্যমূল্যর ব্যবসা করে। আর দেশের ব্যবসায়ীরা এই সময় সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করে। সাধারণ মানুষ কষ্ট পায়, বিত্তবানরা মুনাফা অর্জন করে। ঈদ এলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো বাস, স্টিমার কোন রকম ঠিকঠাক করে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। ফলে প্রতিটি ঈদে দুর্ঘটনা বাড়ে। অসংখ্য মানুষ মারা যায়। নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা থামে না। কিন্তু যেভাবেই হোক এই প্রবণতা আমাদের থামাতেই হবে। আদমদীঘি, বগুড়া থেকে নিয়ম-শৃঙ্খলার সৌন্দর্য জিতেন্দ্র কুমার সিংহ মানুষ সামাজিক জীব। জোটবদ্ধ হয়ে একত্রে বাস করার নামই শুধু সামাজিকতা নয়। এর তাৎপর্য অনেক গভীরে নিহিত। অবিভক্ত ভারতের অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে কৈলাশহর থেকে থাম্বৌ সিংহ নামে একজন লোক ভানুগাছ এলাকায় এসে ঘরজামাই থাকত। দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। আর্থিক দীনতার কথা চিন্তা করে এলাকার ইউপি মেম্বার সুরেন্দ্র কুমার চাটার্জী পরিষদের সভায় উত্থাপন করে তার ট্যাক্স মওকুফের ব্যবস্থা করেন এবং বিষয়টি থাম্বৌকে অবহিত করার দায়িত্ব চৌকিদার সুরেশ মালাকারকে দেয়া হয়। সুরেশ থাম্বৌকে বিষয়টি অবহিত করা মাত্রই মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে থাকে। পরদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে থাম্বৌ মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে ঠিক এভাবে বলেছে যে-‘আপনি আমার কি সর্বনাশটা করলেন। এখন থেকে মানুষ আমাকে ট্যাক্সবিহীন মানুষ হিসেবেই অবমূল্যায়ন করবে।’ একজন দিনমজুরের আত্মমর্যাদাবোধ দৃষ্টান্তস্বরূপ। সমাজের অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনকে অমান্য করার সংস্কৃতি প্রবলভাবে বিরাজমান। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ নিজ নিজ উদ্দেশ্য হাসিলে সদা সচেষ্ট। এরা সার্বজনীন স্বার্থের মধ্যে স্বীয় স্বার্থ দেখতে পায় না। অন্তর্দৃষ্টি নামে এদের কাছে কোন কিছুই নেই। তাই এরা স্বার্থান্ধ। সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রীয় আইন সমাজের তথা মানুষের স্বার্থেই রচিত। এগুলোর কোন কোনটি মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে, আবার কোন কোনটি পরোক্ষভাবে নিরাপত্তা দেয় এবং সামগ্রিক বিকাশে সহায়ক হয়। কিন্তু অনুর্বর চেতনাজনিত কারণে মানুষ এগুলোকে উপেক্ষা করতে থাকে। আর এ উপেক্ষাজনিত কারণে সামাজিক বিশৃঙ্খলামূলক জালের বিস্তৃতি ঘটে। সেই জালে শেষমেশ নিজেকেও আটকা পড়তে হয় এবং নিজ বংশের পরবর্তী প্রজন্মকে অনেক উচ্চমাত্রার খেসারত দিতে হয়। যে শিক্ষক অসদুপায়ের মাধ্যমে যাদের পরীক্ষার বৈতরণী পার করে দেয়, সেই পাড়ি দেয়া লোকটিই পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষক হবে সেই খেয়ালটা থাকে না। এরাই একদিন ডাক্তার হবে এবং এদের ভুল চিকিৎসার কারণে নিজের কেউ মারাও যেতে পারে। সমাজে বর্তমানে এমন কোন ক্ষেত্র নেই, যেখানে পুরোপুরি নিয়ম মেনে চলা হয়। নিজের ইচ্ছাটাকে সব সময়ই বড় করে দেখা হয়। সেই ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্যই আইনকানুন-নিয়ম-শৃঙ্খলা সবগুলোকেই জলাঞ্জলি দেয়া হয়। এসব আইনকানুন-নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের মুখে প্রকাশ্যেই উচ্চারিত হয়ে থাকে- ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’। অথচ তার বাপই যে জন্মদাতা, তা সম্পূর্ণ ভুলে যায়। আর সংখ্যাগুরু“সহজ সরল সাধারণ মানুষও এ কথা বলে মনের মধ্যে তৃপ্তি আনে- ‘চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী’। অথচ নিয়মকানুন মেনে চলা হলে সর্বক্ষেত্রই আলোকিত হতো। আইনকানুন-নিয়ম-শৃঙ্খলার আভিধানিক অভিব্যক্তির নাম সুখ-শান্তি-কল্যাণ। একমাত্র সামাজিক ও দেশপ্রেমিক মানুষের ঐক্যবদ্ধ থাকার সংস্কৃতিই সমাজ থেকে নিয়ম না মানার প্রবণতাকে দূরীভূত করতে পারবে। কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে নৈতিকতার জয় সৈয়দ আবদুল হালিম খসরু দেশে প্রকৃত আইনের শাসনের উপস্থিতি থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠাতা করা সম্ভব। কিন্তু এ দেশে আইনের শাসন যেন মুখেই কিন্তু বাস্তবে মানি না। হাকিম মানি, কিন্তু তার হুকুম মানি না। আইন না মানার প্রবণতা এ দেশে বিদ্যমান সমস্যা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান আনেক আইন যুগোপযোগী নয়। এসব আইনে অনেক প্রাচীন এবং সমাজে আবর্তে বর্তমানে গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন কিছু আইনের সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন প্রয়োজন এবং বিশেষ ক্ষেত্রে নতুন আইন দরকার। প্রণীত ও নতুন আইনগুলোকে কার্যকর করতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আজকে সমাজ-রাষ্ট্রে আইন ও নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার রাস্তাসহ দেশের সব মহাসড়কে যানজটের ভয়াবহতা দেশের কোন নাগরিকের কাছে বর্ণনা করা প্রয়োজন নেই। সবাই এর প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী। এখন প্রয়োজন কত দূর এসব সমস্যার সমাধান করা যায় সে পদক্ষেপ নেয়া। যানজট বাড়ছে, কিন্তু রাস্তার বিশৃঙ্খলা কমিয়ে ও ভাল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এর উন্নতি কিছুটা হলেও করা হয়েছে। অনেকেই ট্রাফিক আইন মানছে না। বিশেষজ্ঞারা এ বিষয়ে বারবার বলেও তাতে কর্র্তৃপক্ষের সংস্কারের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ সংক্রান্ত অনেক আইন অমান্যের ঘটনাবলী গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সবক্ষেত্রে স্বার্থপরতা ত্যাগ করে ‘আমরা সবাই সবার জন্য’ এই মনোভাব সমাজ ও রাষ্ট্রে সবার মাঝে সৃষ্টি করতে হবে তাহলে সকল নিয়মকানুন মানুষের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে। এ প্রেক্ষিতে জোর যার মুল্লুক তার কথাটি চিরদিনের জন্য মুছে দিতে হবে। আলমনগর, রংপুর থেকে আইনের সুফল ভোগ জি. কে সাদিক দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে আগে সে দেশের পরিবেশকে উন্নয়নের অনুকূলে নিয়ে আসতে হয়। অনুকূল পরিবেশে যে কাজ করা সম্ভব প্রতিকূল পরিবেশে সেটা করা দুরূহ। দুর্নীতিকে ‘না’ বলে সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে আইনের সুশাসন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যেখানে কোন আইন থাকে না, সেখানে অপরাধ তার সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। অপরাধ শব্দটি ব্যাপক। এটা যে কোন অপরাধ যা ব্যক্তি, সমাজ, দেশ-জাতির জন্য মহামারী, উন্নয়নের অন্তরায় এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয় কে বুঝায়। ব্যক্তি, সমাজ, দেশ-জাতিকে অপরাধ থেকে বাঁচাতে হলে আইনের প্রতিষেধক একান্ত বাধ্যতামূলক। আইন থাকলেই হবে না, তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ঔষধ না খেয়ে ঘরে রেখে দিলে যেমন রোগ ভাল হয় না। তেমনি আইনের প্রয়োগ না থাকলে আইনের সুফল ভোগ করা যায় না। সুশাসন, নাগরিকদের জীবন মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও টেকসই উন্নয়ন করতে হলে রাষ্ট্র ও নাগরিকের যৌথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্র নাগরিকদের কল্যাণের জন্য যে আইন প্রণয়ন করে এবং তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করে, সুনাগরিক সে আইন মেনে নিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান মেনে চলা। আইনের প্রতি সম্মান দেখানোও নাগরিকদের অন্যতম দায়িত্ব। আইনের ব্যাখ্যা প্রদান ও প্রয়োগ, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিরোধ নিষ্পত্তিসহ বিবিধ কার্যাবলী বিচার বিভাগ সম্পন্ন করে থাকে। বিচার বিভাগে ওই কার্যাবলী মূলত আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইনের বাস্তবায়ন। রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত আইনসমূহের অবমাননা এবং অপরাধকারী হলে বিচার বিভাগ সেই ব্যক্তির উপর আইনের প্রয়োগ ঘটায়। এটা মূলত রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশৃঙ্খলতা ঠেকানো, শৃঙ্খলতা প্রতিষ্ঠা ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম কাজ। দেশপ্রেমিক নাগরিক মাত্রই রাষ্ট্রের আইন, শাসন ও বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ-জাতির অকল্যাণ হয় এবং রাষ্ট্রে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এমন সব কাজ থেকে। এটা তার দেশপ্রেমের দাবি। তার মনুষ্যত্বের দাবিও বটে। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। দেশপ্রেমিক নাগরিক যদি কোন অন্যায় করে, তার দেশপ্রেম ও মনুষ্যত্বের দাবি অনুযায়ী সে রাষ্ট্রের কাছে তার কৃত অপরাধ স্বীকার ও বিচার বিভাগের রায় মেনে নেয়া। নাগরিকদের ও রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগকে তার স্বচ্ছতার প্রমাণও দিতে হবে। যেন নাগরিকরা তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার পায়। এজন্য প্রয়োজন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে অনিয়মই ‘নিয়ম’ ইয়াছিন আরাফাত নিয়ম তৈরি হয় মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু নিয়মকে যখন অনিয়ম করা হয় তখনি সৃষ্টি হয় অশান্তি। সকলেই নিয়মনীতিকে পছন্দ করে, কিন্তু অনেকে স্বার্থের কারণে নিয়মকে লংঘন করে। বর্তমানে আইন আছে প্রয়োগ নেই। নিয়ম আছে পালনকারী নেই। বেশিরভাগ মানুষই নিজের স্বার্থের কাছে অন্যের প্রয়োজন মূল্যহীন। আজকে আমরা দেখি যারা আইন তৈরি করেন তারাই আবার তা লঙ্ঘন করেন। রাস্তায় পথিকরা ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে রং রোড ব্যবহার করেন। কিন্তু তারা সকলেই জানেন এটা বিপজ্জনক। রাস্তায় গাড়িগুলো ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। কিন্তু চালকরা জানেন এটা উচিত নয়। কয়েকদিন আগে ঢাকায় দেখলাম একটা গাড়ি অন্য একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে পেছনের গাড়ির জানালাগুলো খসে পড়ছে। অফিস আদালতগুলো ধান্ধাবাজদের আড্ডাখানায় রূপান্তরিত হচ্ছে। ঘুষ ছাড়া ফাইল সই হয় না। হাট-বাজারে দেখা যাচ্ছে অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতা ঠকাতে পারলে বেজায় খুশি। অন্যদিকে দেখা যায় অর্থনীতির নামে সুদের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে অনেকে সর্বস্ব হারাচ্ছে। অসৎ রাজনীতিবিদরা তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে শত শত জীবন বিনষ্ট করে। বিশ্বের তথাকথিত মোড়লরা তাদের প্রভাব বিস্তার করতে লাখো লাখো মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। হাজার হাজার মানুষ সাগরে ভাসে, লাখ লাখ শিশু অনাহারে মরে। কিন্তু জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন শুধু বিবৃতি প্রদান করে। আজকে পৃথিবীতে আমরা দেখতে পাই ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক সবক্ষেত্রে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা সবাই স্বার্থের নেশায় বুদ হয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×