ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসি চেয়ারম্যান বললেন জার্মানি ও ইউকের প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোধ সম্ভব ॥ চুক্তিসই

অবৈধ ভিওআইপি কল বেপরোয়া, বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

অবৈধ ভিওআইপি কল বেপরোয়া, বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ফিরোজ মান্না ॥ অবৈধ ভিওআইপি কল এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি মিনিটের বেশি কল এই পথে আসছে। বৈধ সিম দিয়ে অবৈধ কল বিটিআরসি কোনভাবেই ঠেকাতে পারছে না। বৈধ পথে প্রতিদিন কল নেমে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিটে চলে এসেছে। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বিদেশ থেকে কল আনার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবং ইন্টারনেট ডেটাভিত্তিক ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈধ পথে কল আসা কমে যাচ্ছে। সিম নিবন্ধন না হলে (বায়োমেট্রিক) বৈধ পথের কলের সংখ্যা আরও কমে যেত। আমরা চেষ্টা করছি বৈধ পথে কিভাবে কল বাড়ানো যায়। মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্কে অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) হচ্ছে কিনা তা ধরতে এখন জার্মানির সিগসের ও যুক্তরাজ্যের থ্রিডিআইয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিওআইপি রোধ করা হবে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালে বৈধ পথে প্রতিদিন গড়ে ১২ কোটি মিনিটের বেশি কল দেশে আসত। এই সংখ্যা হঠাৎ করে ২০১৬ সালে কমতে শুরু করে। বছরের শেষদিকে অবৈধ কল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কল সংখ্যা এখন প্রতিদিন সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি মিনিটে নেমে এসেছে। কমে যাওয়া কল বেশিরভাগই অবৈধ ভিওআইপি হয়ে দেশে আসছে। অবৈধ পথে কল যারা আনছেন-তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা প্রভাবশালী। অন্যদিকে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর জোট বেঁধে কলরেট দেড় থেকে দুই সেন্ট বাড়ানোর ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির কোন অনুমতি ছাড়াই আধা সেন্ট করে কলরেট বাড়িয়ে দিয়েছে। বিটিআরসি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার বার চিঠি দিলেও তারা বিটিআরসির বেঁধে দেয়া কলরেট দেড় সেন্টে নামিয়ে আনেনি। এরপর বিটিআরসি আন্তর্জাতিক কলরেট পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। আইজিডব্লিউগুলো আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়িয়ে দেয়ায় কারণে গ্রাহকদের কলরেটও বেড়ে গেছে। বিদেশে কল করা কিংবা বিদেশ থেকে দেশে কল করলে গ্রাহকদের আগের তুলনায় বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। আগে ৭ টাকা মিনিটে কল করা যেত। এখন এই কল ৯ টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। কিন্তু বাড়তি টাকার কোন রাজস্ব সরকার পাচ্ছে না। এদিকে বিটিআরসির নিয়মানুযায়ী প্রতি মিনিট কল থেকে যে আয় হয় বিটিআরসি তার ৪০ শতাংশ, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, মোবাইল অপারেটর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ অপারেটরগুলো বাকি ২০ শতাংশ পেয়ে থাকে। ২৩ আইজিডব্লিউ অপারেটরের মধ্যে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর সিন্ডিকেট করে কলরেট বাড়ানোর ফলে আগের নিয়মেই অর্থের অংশ পাচ্ছে সরকার। নতুন নিয়মে মাত্র সাতটি অপারেটর কল টার্মিনেট বা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে এই প্রক্রিয়ায় তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো বাড়তি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে। ফলে বৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল আদান প্রদান এক লাফে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি মিনিট কমে গেছে। আগে বৈধভাবে প্রতিদিন সাড়ে ১১ থেকে ১২ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল আদান প্রদান হতো। এখন বৈধভাবে কল আদান প্রদান হচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিট। অবৈধ পথের টাকা চলে যাচ্ছে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের পকেটে। আন্তর্জাতিক কল কমে যাওয়ার জন্য দুটি বিষয়কে দায়ী করেছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, কল সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা দায়ী। কল রেট দেড় থেকে দুই সেন্ট হওয়ার পর কলসংখ্যা কমে গেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই কলগুলোর মধ্যে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটির মিনিটের বেশি। বিষয়টি বিটিআরসি ‘জিরো টলারেন্স’ দৃষ্টিতে দেখছে। অবৈধ ভিওআইপিতে কোন সিম ধরা পড়লে আগে ৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করা হতো। এখন সময় কমিয়ে ২ ঘণ্টা করা হয়েছে। কোন মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে সেটি ধরতে এখন জার্মানির সিগসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের থ্রিডিআইয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। অবৈধ ভিওআইপিতে কারও সিম ধরা পড়লে ৫০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হচ্ছে। ওটিটির বিষয়ে বলেন, ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ ও ইমোর মতো ওটিটি কল বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক কলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে এসব ওটিটি এ্যাপিক্লেশন বন্ধ করে দেয়ার কোন চিন্তা বিটিআরসির নেই। একটি মহল বিষয়টি নিয়ে অযথা অপপ্রচার করে যাচ্ছে। তারা বলছে, বিটিআরসির চেয়ারম্যান নাকি প্রযুক্তি প্রতিবন্ধী। বিটিআরসির চেয়ারম্যান কি করে প্রযুক্তি প্রতিবন্ধী হন। মহলটি বারবার আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। জানি না কি তাদের স্বার্থ? ওটিটির বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, বিটিআরসি তাই বাস্তবায়ন করবে। সরকারের ওপর সব কিছু নির্ভর করে। বাজার পরিস্থিতি দেখে কলরেট কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। আইজিডব্লিউগুলোর কাছে থাকা সরকারের বকেয়া আদায় করে বাজার স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে বিটিআরসি গুরুত্ব দিয়েছে।
×