ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

শুরুতেই মূল্য ছাড়ের হিড়িক

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

শুরুতেই মূল্য ছাড়ের হিড়িক

ওয়াজেদ হীরা ॥ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হয়েছে এখনও সপ্তাহ হয়নি সেই সঙ্গে হয়ে উঠেনি জমজমাটও। এরই মধ্যে মেলা নানা রকম পণ্যে ‘ছাড়’ দেয়া অফার শুরু হয়ে গেছে। একটি কিনলে একটি কিংবা দশটি পর্যন্ত পণ্য ফ্রি দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও নানা রকম পণ্যে প্যাকেজ সুবিধা দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। নিজেদের পণ্যের বিক্রি বাড়াতে এবং ক্রেতাদের আকর্ষণ করতেই এমন অফার দেয়া হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। মেলাঘুরে দেখা গেছে এখনও মেলায় স্টল সাজাতে কেউ কেউ ব্যস্ত। মানুষের পদচারণাও তেমন নেই। বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোতে বিক্রিও নেই। কোন কোন স্টলে মানুষও নেই। তাই বিক্রয়কর্মীরা আয়েশ করে আড্ডা দিচ্ছেন। তবে যারা শুরুর দিকে এই মেলায় আসছেন তারা বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। মেলা শুরুর প্রথম সপ্তাহ থেকেই ছাড় দেয়া স্টলগুলো নজরে এসেছে ক্রেতাদেরও। অন্যান্য স্টলগুলোর তুলনায় ফ্রি বা ছাড় দেয়া স্টলগুলোতে মানুষের আনাগোনা একটু বেশি। কেউ দেখছেন কেউবা কিনছেনও। বিভিন্ন পণ্যেও মধ্যে ‘হোম এপ্লায়েন্স’ এর বেশি ফ্রি দিচ্ছে। তারা একটি পণ্য কিনলে সঙ্গে দশটি পর্যন্ত পণ্য ফ্রি দিচ্ছে। মেসার্স সফট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার স্টলে গিয়ে দেখা যায় তারা ‘একটির সঙ্গে দশটি ফ্রি’ একটি নোটিস ঝুলিয়ে রেখেছেন। বিক্রয়কর্মী জানালেন, তারা দিচ্ছেন গৃহের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো। এর মধ্যে রয়েছে, ফ্লাক্স, আয়রন, জগসেট, রাইস কুকার, ননস্টিক কুকার (৪টি), হটপট এবং মাইক্রোওভেন। প্যাকেজের আদলে একটি কিনলে দশটি ফ্রি মোট দাম নিচ্ছেন তারা ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। তবে ৯-১২ হাজার টাকার মধ্যে অনেক ফ্রি বা প্যাকেজ রয়েছে বলেও জানালেন তারা। প্রত্যেকটি ‘হোম এপ্লায়েন্স’ স্টলগুলোতেই একই ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করতে দেখা গেছে। সবাই নিজ নিজ স্টলে ফ্রি কথাটি লিখে ঝুলিয়ে রেখেছেন। মেসার্স সূর্য্য ব্রাদার্স স্টল নং-২০২, মেসার্স হারুন এন্টারপ্রাইজ স্টল নং-২০৬, মেসার্স এস কে শিল্পা স্টল নং ২০৭, স্টল নং-২১২ মেসার্স আল মার্সসহ বিভিন্ন স্টল ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। একাধিক স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, ক্রেতাদের পছন্দসহ নানা রকমের প্যাকেজ ও ফ্রি সুবিধা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই দেয়া হয়। তবে পণ্যের মানও বেশ ভাল। বিক্রেতারা বলেন, আমরা সুলভ মূল্যে এই সুবিধা দেই এবং ক্রেতারাও কিনে উপকৃত হয়। ‘হোম এপ্লায়েন্স’ স্টলগুলোতে সংসারের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই পাওয়া যায় তাই নারীদের প্রথম পছন্দ থাকে এই স্টলগুলোর প্রতি। থালা-বাসন, চামিচ বা চাকু, রান্নার প্রয়োজনীয় সকল পণ্য সবই মিলে এক দোকানে। মেলায় ঘুরতে এসে প্রয়োজনীয় উপকর দেখছিলেন রাহাত দম্পত্তি। কথা বলে জানা গেল, তারা রাইস কুকার ও ফ্লাক্স নিয়েছেন। তবে প্যাকেজ বা ফ্রিতে আকৃষ্ট নন তারা। তবে সবাই সংসারে প্রয়োজনীয় সেটাও স্বীকার করলেন। জাহিদুল আলম এসেছেন সপরিবারে। তিনি কিনলেন মেয়ের জন্য একটি টিফিস বক্স একটি পানি রাখার ছোট ফ্লাক্স। তিনিও জানালেন সংসারে অন্যান্য পণ্যগুলো থাকার ডাবল হয়ে যাবে তাই ফ্রি অতগুলো পণ্য নেয়া হয়নি। তবে যে সংসারে পণ্যগুলো নেই সে সকল সংসারে এসব পণ্য খুবই প্রয়োজন বলেও জানালেন। ব্যবসায়ীরা আব্দুল মালেক প্রতিবছর মেলায় অংশ নেন। এবাও ব্যতিক্রম নয়। তবে মেলায় শুরুর দিকেই ফ্রি দেয়ার বিষয়ে বলেন, শেষের দিকে একটা চাপ পড়ে যায়। আর আমরা চাই মেলাতে পণ্য কম লাভে বেশি বিক্রি করতে। এবার বিক্রি বিষয়ে বলেন, সবাই আসছেন আর দেখছেন। গৃহের প্রয়োজনীয় এই পণ্যগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য স্টলগুলোতে দেখা যায় সেখানে ফ্রি আর প্যাকেজ সুবিধা চলছে। এরমধ্যে মেয়েদের নজর কেড়েছে থ্রি পিস, স্যালোয়ার কামিজের স্টলগুলো। অনেক পুরুষও ঘুরে ফিরে দেখছেন প্যাকেজ ও ফ্রি সুবিধা দেয়া এসকল স্টলগুলো। আর দেখবেনই না কেন তিনটি জামা একত্রে বিক্রি করছেন ৪৯৯ টাকায়। কেউবা ৫৯৯ টাকায় কেউ কেউ বিক্রি করছেন ৯৯৯ টাকায়। তবে সেটা নির্দিষ্ট কিছু জামার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে ক্রেতারাও ছাড়ার পাত্র নয়। নির্দিষ্ট সেই জামাগুলো বার বার দেখে পছন্দসই মনে হলে নিয়ে নিচ্ছেন। এই প্যাকেজের বাইরেও রয়েছে নানা রং বেরঙের কালেকশন। কোন কোন জামা ১ হাজার থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছে বিক্রেতারা। আপন টেক্সটাইলে প্যাভিলিয়ন-৪৭ গিয়ে দেখা যায়, তারা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে লিখে রেখেছেন তিন পিস ৫৯৯ টাকা মাত্র। বিক্রয় প্রতিনিধি জানালেন, অনেকেই একটি জামা কিনতে এসে আরও অনেক ডিজাইনের জামা পছন্দ হয়। প্যাভিলিয়ন পুরোটাই নানা রকম থ্রি পিসের সমাহার। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব তাঁত ছাড়াও ভারত-পাকিস্তানের নানা ডিজাইন ও হাতের কাজের ওপর থ্রি-পিস এনেছে। প্রতিষ্ঠানটি ইন্ডিয়ান ফোরপিস দিচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকায়। এছাড়া গঙ্গা থ্রি-পিস রয়েছে ৮৯০ টাকায়, জয়পুরী ৮৫০ টাকায় আর জামদানি তাঁতের থ্রি-পিস ৭৫০ টাকায়। আবার পাকিস্তানি লোন থ্রি-পিস দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকায়। অন্যান্য প্যাভিলিয়নে গিয়েও দেখা গেল তরুণীরা আসছেন। কেউ কেউ কিনেও নিচ্ছেন। দুবাই কালেকশনে গিয়ে দেখা গেল বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ জামাগুলো সাজিয়ে রাখছেন থরে থরে। বিক্রয় বা ফ্রি সুবিধা কেমন লুফে নিচ্ছে জানাতে চাইলে এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, মেলার শুরুতে সবাই কেবল দেখছে। আমরাও নিজেদের মাল গুছিয়ে নিচ্ছি। ইশতেয়ারা জেরিন নামের এক তরুণী অনেক দেখে শুনে একটি জামা নিলেন। দাম আর পছন্দ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বললেন, শুরুর দিকে মেলা ফাঁকা থাকে আর কালেকশনও ভাল থাকে তাই আসলাম, কিনলামও। এবারের বাহারি রং বেরঙের জামার কালেকশনগুলো নিয়ে বলেন, বাণিজ্য মেলায় অনেক দেশের পণ্যই পাওয়া যায় এবারও ব্যতিক্রম কিছু আছে। অনেক স্টল এখনও দেখা হয়নি। এছাড়াও মেলার বিভিন্ন কোম্পানির আইসক্রিমের দোকানগুলোতে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে। হালকা শীতের আমেজেও আইসক্রীমের স্বাদ নিতে দেখা গেছে। আর এই উৎসাহ ছিল সবচেয়ে বেশি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। উল্লেখ্য বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন সকাল দশটায় শুরু হয়ে রাত দশ পর্যন্ত খোলা থাকে।
×