ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন

’১৬ সালে ৪ হাজার ৩১২ সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

’১৬ সালে ৪ হাজার ৩১২ সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি পর্যবেক্ষণ মতে ২০১৬ সালে সারাদেশে ৪ হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়। হাত, পা বা অন্য কোন অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে ৯২৩ জন। সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নামে ধারাবাহিক হত্যাকা- আজ মহামারী আকার ধারণ করেছে। ইরাক, সিরিয়া বা আফগানিস্তানের ভয়াবহ যুদ্ধে যে প্রাণহানি হয়েছে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা তার কোন অংশে কম নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ নীরব হত্যাকা- প্রতিদিন ঘটলেও এখন দেশের যাত্রী, মালিক, পরিবহন শ্রমিক, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে এটি দিন দিন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। সবার যেন গা সওয়া হয়ে গেছে এটি। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ বা মামলা করেও বিচার পাওয়া যাচ্ছে না। আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ায় না দেশের বিত্তবানরা। দুর্ঘটনার অনেক পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যা মধ্য আয়ের দেশে যাত্রার পথে প্রধান অন্তরায়। এছাড়া মেধাবী ও কর্মক্ষম জনসম্পদ হারিয়ে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। জিডিপির দেড় শতাংশ এ সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে আসে। সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক যোগাযোগ সচিব ড. মোঃ মাহাবুবুর রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, বুয়েট এর দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ড. মাহবুব আলম তালুকদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি রুস্তম আলী খান, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভারভ্যান মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহম্মদ মজুমদার প্রমুখ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরে ১ হাজার ৬৩টি বাস, ১ হাজার ১৮৭টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৫৯৭টি হিউম্যান হলার, ৬৪৯টি কার, জীপ, মাইক্রোবাস, ৯৭৩টি অটোরিক্সা, ১ হাজার ৪৪৯টি মোটরসাইকেল, ১ হাজার ১৯০টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ৮৬৩টি নছিমন করিমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ৮০৩ জন ছাত্রছাত্রী, ২৩৩ জন শিক্ষক, ৬১ জন সংবাদিক, ৬৩ জন ডাক্তার, ৫২ জন আইনজীবী, ৭৫ জন প্রকৌশলী, ৪৩৮ জন শ্রমিক, ২৯৪ জন চালক, ২৩৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য (পুলিশ, সেনা সদস্য, বিজিবি ও আনসার সদস্য) এছাড়া ৪৩৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ১ হাজার ৫৯৮ জন পথচারী, ১৮২ জন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৮৪৩ জন নারী ও ৬৯৭ জন শিশু সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ৩০৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯৯ জন আহত ও ৪৮৩ জন নিহত হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৮০টি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়। এতে ১ হাজার ১০ জন আহত ও ৪১২ জন নিহত হয়। মার্চে ৩১১টি সড়ক দুর্ঘটনায়, ৯০৩ জন আহত, ৩৯০ জন নিহত হয়। এপ্রিল মাসে ৪০৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৬০ জন আহত, ৪৮২ জন নিহত হয়। মে মাসে ৩২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬০৩ জন আহত ৩৯০ জন নিহত হয়। জুন মাসে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৯১১ জন আহত ও ৫১১ জন নিহত হয়েছে। জুলাই মাসে ৪৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ২৩ জন আহত ও ৫৫৫ জন নিহত হয়। আগস্ট মাসে ৩৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৯৩ আহত হয়। সেপ্টেম্বর মাসে ৪৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪০৯ আহত হয়। অক্টোবর মাসে ২৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত ও ৮৮৬ আহত হয়। নবেম্বর মাসে ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫৫ জন নিহত ও ৯৯১ আহত হয়। ডিসেম্বর মাসে ৩১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৮৮ জন নিহত ও ১ হাজার ২০৩ আহত হয়। দুর্ঘটনার কারণসমূহ ॥ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, বিপজ্জনক অভারটেকিং, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার করায়, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেল ক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পড়া, বাসের ছাদে ও পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর যাত্রী বহন, রাস্তায় ফুটপাথ না থাকা বা ফুটপাথ বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝ পথে পথচারীদের যাতায়াত। দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা ॥ ট্রাফিক আইন ও মোটরযান আইন সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের, মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রসমূহে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাথ বেদখল মুক্ত করা, রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অংকন করা, চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, চালকদের বিশ্রাম ও কর্মবিরতির সুযোগ দেয়া, বিদ্যমান মোটরযান আইন যুগোপযোগী করা এবং গাড়ির ফিটনেস প্রদান পদ্ধতি ডিজিটাল করা, সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে যারা ছিন্নমূল ও দারিদ্র্যের কাতারে নেমে যাচ্ছে তাদের ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্ব সরকারকে গ্রহণের জন্য প্রস্তাব করছি, জাতীয় মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন এর ব্যবস্থা করা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত ট্রমা সেন্টারগুলো দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করা। সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ২০১৫ সালে ৬৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৬৪২ জন নিহত ও ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত হয়েছিল। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে মোট দুর্ঘটনার ৩৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, নিহত ২৯ শতাংশ ৯৪ শতাংশ, আহত ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশ কমেছে। বিগত ২০১৩ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা।
×