ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি

দেশে অগণিত সরকারী-বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর অবস্থা ও মান এক নয়। যে কারণে প্রতিবছর ভাল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েকে ভর্তি করাতে গিয়ে অভিভাবককে রীতিমতো হিমশিম ও গলদঘর্ম হতে হয়। শুরু হয় তীব্র, অসহনীয় ও অসম প্রতিযোগিতা। এ হেন অনাকাক্সিক্ষত অবস্থার অবসানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর সম্প্রতি এক উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ৩৬ হাজার সরকারী, এমপিওভুক্ত বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভাগ করা হবে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে। যেমনÑ অসাধারণ, অতিউত্তম, উত্তম, চলতি মান ও নিম্নমান। এ থেকে খুব সহজেই বোঝা যাবে, কোন্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ও অবস্থা কেমন? অর্থাৎ কোন্টি ভাল, কোন্টি মন্দ! অথবা কোন্টি অতিউত্তম অথবা কোন্টি নিম্নমানের। কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে এই মানদ-? এর জন্য সংশ্লিষ্ট ডিআইএ নির্ধারণ করেছে ১৪টি নির্দেশক, যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ এর সার্বিক কার্যক্রমের মূল্যায়ন এবং ফল পর্যালোচনা করা হবে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতিসহ স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনও বাদ যাবে না। ১৪টি মানদ-ের ভিত্তিতে ভাল-মন্দ নির্ধারণ করে আপাতত ৩৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হতে যাচ্ছে একই নেটওয়ার্কের আওতায়। এতে শিক্ষা প্রশাসন অফিসে বসেই যেমন প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাজিরাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আপডেট তথ্য পাওয়া যাবে তেমনি জানতে পারবে অভিভাবকরাও। এতে একদিকে যেমন তাদের ভোগান্তি ও হয়রানি কমবে, অন্যদিকে তেমনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও নিয়মিত দেখভাল করতে পারবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আসতে বাধ্য হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায়। যার ফলে দুর্নীতি-অনিয়ম কমবে অনেকাংশে। দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণসহ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে এটি যে একটি অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ, সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষা ব্যবস্থায়ও ডিজিটালাইজেশন অবশ্যই কাম্য। দেশে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন ও মান বৃদ্ধিকল্পে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব নেই। প্রতিবছর যথাসময়ে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর কাছে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেয়া এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল পাঠ্যক্রম এবং গ্রেড পদ্ধতিতে ফল নির্ধারণও নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী সংস্কার। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানেও সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য যে, এসব ক্ষেত্রে আরও আধুনিকীকরণ এবং বৈশ্বিক ক্ষেত্রে উদার-উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সবিশেষ সুযোগ রয়েছে। দেশের ছেলেমেয়েরা ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার্থে গিয়ে খুবই ভাল করছে। সে অবস্থায় দেশেও যে শিক্ষার সার্বিক মান বাড়ানো যাবে না, তা নয়। পাঠ্যপুস্তকেও সংস্কারের সুযোগ রয়েছে যথেষ্ট। শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বশেষ তথ্যসংবলিত ভাল-সুলিখিত বই অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক। মান অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রেণীবিন্যাশকে করাও একটি উন্নয়ন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। তবে এটি করতে গিয়ে যেন আবার বৈষম্য সৃষ্টি করা না হয়। রাজধানীর সঙ্গে অন্যান্য শহর-নগরের পার্থক্য রয়েছে। গ্রাম ও শহরের অর্থনৈতিক বৈষম্যও বিস্তর। ধনী-গরিবের ব্যবধানও কম নয়। সে অবস্থায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এক চোখে, এক দৃষ্টিতে দেখতে হবে বৈকি। ভালর পাশাপাশি নিম্নমানকেও ভাল করার জন্য যা যা দরকার সব করতে হবে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি ভাল হয় তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে আর অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য সৃষ্টি হবে না।
×