ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শওকত ওসমানের জন্মশত বার্ষিকীতে স্মৃতিচারণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

শওকত ওসমানের জন্মশত বার্ষিকীতে স্মৃতিচারণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ আর শোষকের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ছিলেন বরেণ্য কথাশিল্পী শওকত ওসমান। গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী ও শিশুতোষ গল্পসহ সময়োপযোগী লেখনীতে অমর হয়ে আছেন খ্যাতিমান এ লেখক। বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী এ লেখকের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে প্রবন্ধ পাঠ ও স্মৃতিচারণ হয় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। এতে ‘শওকত ওসমান: জীবন ও বিশ্ব-পাঠশালার ছাত্র’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। বাংলা একাডেমি ও শওকত ওসমান জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন নাগরিক কমিটি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও সংস্কৃতি সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ। ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, যখন শওকত ওসমানের লেখা পড়ি তখন ওনার সঙ্গে আমার সরাসরি পরিচয় হয়নি। ষাটের দশকে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি ছিলেন আগাগোড়া একজন বিদ্রোহী-বিপ্লবী। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের প্রতিবাদস্বরূপ দেশ থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে গিয়ে তিনি নিজের অন্তর্গত বিদ্রোহী সত্তার যেমন পরিচয় রেখেছেন তেমনি ‘ক্রীতদাসের হাসি’সহ নানা রচনায় ব্যঙ্গবিদ্রƒপের মাধ্যমে মূলত অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদী অবস্থানই জানান দিয়েছেন। শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ানের কণ্ঠে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, শওকত ওসমান সাধারণ মানুষের পক্ষে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন। জন্মশতবর্ষে তাকে স্মরণ তাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পরে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত ‘বাংলা একাডেমির শ্রদ্ধাঞ্জলি: শওকত ওসমান স্মারকগ্রন্থ’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অধ্যাপক শান্তনু কায়সার বলেন, শওকত ওসমান জীবন তথা বিশ্ব পাঠশালার ছাত্র হিসেবেই শিক্ষা লাভ করেছেন। নিজে শিক্ষক থেকে যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি বিশ্ব পাঠশালার ছাত্র হিসেবে বুঝেছেন। তিনি বলেন, শওকত ওসমান বিরাশি বছর বয়সে মারা গেছেন। আজ তার জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে। মৃত্যুর আঠারো বছর পরে কোন একটা উপলক্ষে তাকে স্মরণ করছি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে আক্ষরিক ও মর্মগত উভয় অর্থেই তিনি আছেন। তার জীবন ও সাহিত্যের মধ্য দিয়ে আমরা একথা শুনতে পাচ্ছি। জীবনের শিক্ষাই তাকে সারাদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে, শতবর্ষ পেরিয়েও শওকত ওসমান তার উত্তরসূরির মধ্যে মর্মরিত হয়ে চলেছেন। আলোচকবৃন্দ বলেন, শওকত ওসমান ছিলেন জীবনবাদী কথাশিল্পী, মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবী। নিজস্ব জীবনাভিজ্ঞতাকে তিনি ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যুক্তিবাদী মননের চর্চা করেছেন আজীবন। তিনি ত্রিকালদর্শী এক মনীষী যিনি দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা এবং একই সঙ্গে এই ধর্মান্ধ রাষ্ট্রের পতন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রক্তাক্ত জন্ম, সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের লড়াই ইত্যাদির প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি তার জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন অর্থনৈতিক শোষণ, সামাজিক নিপীড়ন এবং ধর্মীয় উন্মাদনার অবসান না হলে বৃহত্তর মানুষের মুক্তি কোনভাবেই সম্ভব নয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শওকত ওসমানের কাজের ক্ষেত্র ছিল কথাসাহিত্য; কিন্তু তার সর্বক্ষণিক ধ্যানজ্ঞান ছিল রাজনীতি, সমাজনীতি, মানুষের মঙ্গলবোধ। প্রবলভাবে বাঙালী জাতীয়তাবাদী এই মানুষটি একই সঙ্গে ছিলেন আন্তর্জাতিকতাবাদীও। তার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার শোষিত মানুষের মুক্তি। সংস্কৃতি সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ বলেন, শওকত ওসমান দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে অসাম্প্রদায়িক, উদার মানবিক ও সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলনের ধারায় যুক্ত হন। ষাটের দশকে সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণবোধকে তার সাহিত্যিক উপাদান হিসেবে কাজে লাগিয়ে বস্তুত মানবমঙ্গলের সাধনা করেছেন। সভাপতির ভাষণে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, শওকত ওসমান বাংলার গ্রামীণ জীবনকে নিপুণ শিল্পীর দক্ষতায় তার সমগ্র সাহিত্যকর্মে উপস্থাপন করেছেন। গভীর জীবনবোধ, ইতিহাস চেতনা ও বাস্তবতার সম্পর্কে তীক্ষè পর্যবেক্ষণ তার কথাসাহিত্যকে বিশিষ্টতা দান করেছে। তার ব্যঙ্গবিদ্রƒপাত্মক রচনায় কৌতুকবোধ ও রসিকতার আড়ালে অন্যায়কারী ও শোষকের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণার বাণী উচ্চারিত হয়েছে। তিনি বলেন, জন্মশতবর্ষ পেরিয়েও শওকত ওসমানের ‘জননী’ ও ‘ক্রীতদাসের হাসি’র মতো সাহিত্যকর্ম চিরকালের অপরাজেয় সাধারণ মানুষের অনন্য আখ্যান হিসেবে আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শওকত ওসমানের গল্প অবলম্বনে সৈয়দ শামসুল হক নির্মিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘আব্বাস’ প্রদর্শিত হয়। শিল্পকলায় চর্যানৃত্য কর্মশালার সমাপনীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন ॥ শেষ হলো নেপালের প্রখ্যাত চর্যানৃত্য গুরু রাজেন্দ্র শ্রেষ্ঠ’র পরিচালনায় পক্ষকালব্যাপী চর্যানৃত্য কর্মশালা। শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত কর্মশালা শুরু হয় গত বছরের ২১ ডিসেম্বর। একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করেন নেপালের প্রখ্যাত চর্যানৃত্য গুরু রাজেন্দ্র শ্রেষ্ঠ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দিন। আলোচনা শেষে চর্যানৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন পর্বে নাইমুজ ইনাম নাইম ও তার সহশিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য ‘সৌলসলাস্য’, লায়লা ইয়াসমিন লাবন্য পরিবেশন করে একক নৃত্য ‘বজ্রযোগীনি’, ইমন আহমেদ পরিবেশন করে একক নৃত্য ‘মঞ্জুশ্রী’, রুহী আফসানা দীপ্তি পরিবেশন করে একক নৃত্য ‘কৌমারী’, একক সঙ্গীত পরিবেশন করে সায়েম রানা, সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে আলীম মাহমুদ এবং সায়মন জাকারিয়ার সঙ্গীত পরিচালনায় পরিবেশিত হয় ‘ভাবনগর’।
×