ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৭ সন্দেহভাজন গ্রেফতার

এমপি লিটনের পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

এমপি লিটনের  পরিবারের  লোকজনকে  জিজ্ঞাসাবাদ

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা ॥ সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ৫দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ হত্যার মোটিভ উদ্ধার বা কিলিং মিশনের প্রকৃত খুনীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। যদিও বুধবার পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্র থেকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা- সম্পর্কে প্রকৃত কোন তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। তারা তদন্তের অজুহাতে এখনও বিষয়টি চেপে রাখছেন। পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফুল ইসলাম বুধবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিজ্ঞাসাবাদে তাকে জানান, সদর থানা পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা বিভাগ, পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত দল এই খুনের রহস্য উদ্ঘাটনসহ খুনীদের গ্রেফতারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। এখন গাইবান্ধার পুলিশ আশাবাদী শীঘ্রই এই খুনের প্রকৃত তথ্য জানা যাবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তবে পুলিশের বিশেষ সূত্র থেকে জানা গেছে, শুরু থেকেই এই হত্যাকা-ের তদন্তে নব্য জেএমবি, জঙ্গী, জামায়াত-শিবির, পারিবারিক শত্রুতা, রাজনৈতিক কোন্দল এবং জেলা পরিষদের নির্বাচনসহ ৫টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হলেও এখন জামায়াত-শিবির চক্র, পারিবারিক শত্রুতা এবং জেএমবি জঙ্গী-এই ৩টি বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পারিবারিক কোন্দলের বিষয়টি উত্থাপিত হওয়াসহ লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলীর থানায় দায়েরকৃত মামলার সূত্র ধরে মঙ্গলবার বিকেলে লিটন হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী পরিবারের লোকজন, কেয়ার টেকারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এজন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমানসহ পুলিশের একটি তদন্ত দল লিটনের বাড়িতেই মামলার বাদী ফাহমিদা বুলবুল কাকলী, এমপি লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি, লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার, লিটনের ছেলে সাকিব সাদমান রাতিন, এমপির গাড়িচালক ফোরকান আকন্দ, বাড়ির কেয়ার টেকার ইসমাইল, ইউসুফ, সৌমিত্র, মাজেদুল ইসলাম, এমপির ভাগনি মারুফা সুলতানা শিমু, এমপি’র চাচি শামীম আরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে এরমধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী শ্যালক বেদারুুল আহসান বেতারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই জিজ্ঞাসাবাদের কারণ সম্পর্কে পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে তদন্তের স্বার্থে কোন কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে ॥ বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স থেকে ফেরার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক সাক্ষাতকারে ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া এমপি বলেন, লিটন হত্যার তদন্তের বিষয়টি যদিও পুলিশের উপরই নির্ভর করছে। তবুও তিনি এ ব্যাপারে জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন এবং অগ্রগতি পর্যালোচনা করছেন। পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম তাকে জানিয়েছেন, হত্যা মামলা তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে। শীঘ্রই খুনীরা ধরা পড়বে এবং খুনের প্রকৃত তথ্যও জানা যাবে। ঘটনায় পারিবারিক কোন্দল জড়িত থাকার বিষয়ে ডেপুটি স্পীকার বলেন, এটা দুর্বৃত্তদের অপপ্রচার। উপজেলা জামায়াতের আমীরের দুই সন্তান উধাও ॥ এমপি লিটন হত্যার পর থেকেই সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর আলহাজ ইউনুস আলীর ছেলে জামায়াত-শিবির ক্যাডার শহিদুল ও আশরাফুল বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। পলাতক এই দু’জন সুন্দরগঞ্জের একাধিক নাশকতা এবং ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে ৪ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার মূল আসামি। বিভিন্ন সূত্র থেকে আশংকা করা হচ্ছে এই হত্যাকা-ের সাথে তাদেরও যোগসূত্র থাকতে পারে। বিচার বিলম্বিত হওয়ার ফলশ্রুতি লিটন খুন ॥ বুধবার ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে এ জেলায় জামায়াত-শিবির জঙ্গীদের যে সন্ত্রাসী অপতৎপরতা সংগঠিত হয় তাতে ২৩৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করে ১শ’ ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে ১শ’ ৪৬ জন জামায়াত-শিবির ক্যাডারকে গ্রেফতার করে মামলা দেয়া হয়। কিন্তু এ সমস্ত মামলার আসামিদের অনেকেই পরবর্তীকালে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ঐসব মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বও ২০১৬ এমপি লিটন হত্যাসহ ২২টি হত্যাকা- সংঘটিত হয় এখানে। যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়েছে বলে গাইবান্ধার সাধারণ মানুষ মনে করেন। লিটনের বাড়ির সবাই ঢাকায় ॥ হত্যার তিন দিন পর মঙ্গলবার এমপি লিটনের কুলখানি অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য লিটনের বাড়িতে এবং ৫টি বিভিন্ন মাদ্রাসায় একযোগে কোরানখানি, মিলাদ মাহফিল ও দরিদ্রদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষেই লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং তার একমাত্র সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনরা মঙ্গলবার রাতেই ঢাকায় চলে যান। বাড়িতে সিসি ক্যামেরা ছিল না ॥ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় এমপি লিটনের বিরুদ্ধে এর আগে তার ঢাকার বাড়িসহ বামনডাঙ্গার শাহবাজ মাস্টারপাড়ার বাড়িতে ৩ বার হত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। কিন্তু বার বার তিনি অলৌকিকভাবে রক্ষা পান। এছাড়া তাকে প্রায় প্রতিদিন মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে হত্যা করার হুমকি দেয়া হতো। এতদসত্ত্বেও তিনি তার নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। তাই বাড়িতে কোন সিসি ক্যামেরাও লাগাননি। এ ব্যাপারে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডি ডব্লিউ ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক মোঃ আলমগীর জানান, এমপি হওয়া সত্ত্বেও লিটন নিজকে তৃণমূল মানুষের নেতা মনে করতেন। এমপি হিসেবে তার জন্য বিশেষ বরাদ্দের টাকায় তিনি সুন্দরগঞ্জ থানা, উপজেলা পরিষদ এবং সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিসি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করেন। অথচ নিজের নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে প্রশাসন ও পুলিশের অনুরোধ সত্ত্বেও সিসি ক্যামেরা লাগাননি। বামনডাঙ্গায় ছাত্রলীগের প্রতিবাদ সমাবেশ ॥ এমপি লিটন হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বুধবার বিকেলে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগ নেতা তৌফিকুর রহমান পিয়াল, জসিম উদ্দিন ডলার, ফয়সাল সাকিদার, স্বপনবাস রায় প্রমুখ।
×