ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অন্তহীন দুর্ভোগ

রাজনৈতিক কর্মসূচীতে রাজধানীতে তীব্র যানজট

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

রাজনৈতিক কর্মসূচীতে রাজধানীতে তীব্র যানজট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে মহাখালি-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল আসতে সময় লেগেছে ৬ ঘণ্টারও বেশি। ১২টায় রওনা দেয়ার পর শুরু হয় দুর্ভোগ। গাড়ি চলে না। রাস্তায় পরিবহনের দীর্ঘ সারি। এমন বাস্তবতার কথা জানালেন বিমানবন্দর থেকে আসা যাত্রী ফারুক ইসলাম। বুধবার রাজধানীর বেশিরভাগ রাস্তার চিত্র ছিল ঠিক এ রকম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। দুর্ভোগ চরমে ওঠে। অনেকে সময়মতো অফিসেও যেতে পারেননি। যানজট সামলাতে মহানগর ট্রাফিক বিভাগও ছিল অনেকটা অসহায়। ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম সূত্র বলছে, বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে তীব্র যানজট ছিল। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচীর কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বাড়তি গাড়ির চাপ তো আছেই। তবে সাধারণ মানুষ ছুটির দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনের অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। বুধবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সবচেয়ে বড় কর্মসূচী ছিল আনন্দ র‌্যালি। এ র‌্যালিতে অংশ নেয়ার উদ্দেশে সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসতে থাকে। তাদের পদযাত্রা, রাস্তার একপাশ দিয়ে আসা ছোট ছোট মিছিল, গাড়িমিছিল ইত্যাদির কারণে সকাল থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। মিছিলের কারণে অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে এ পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করে দুপুরে ছাত্রলীগের আনন্দ র‌্যালি বের হওয়ার পরে। বেলা পৌনে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ শেষ করে র‌্যালি শুরু করে ছাত্রলীগ। সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী এই কর্মসূচীতে অংশ নেয়ায় র‌্যালিটি বিশাল আকার ধারণ করে। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এলাকা থেকে শাহবাগ চার রাস্তার সংযোগস্থলে আসতেই থমকে দাঁড়ায় সড়কের সব ধরনের যানবাহন। র‌্যালিটি এতই দীর্ঘ ছিল যে এর অগ্রভাগ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছলেও শেষ ভাগ তখনও ছিল অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ এলাকায়। আর এ কারণে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, জিপিও হয়ে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউজুড়ে যে যানজট ও জনজটের সৃষ্টি হয় তা ছড়িয়ে যায় শহরজুড়ে। নগরজুড়ে যানজটের কারণে ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। কথা হলো এমন একজন আরেফিনের সঙ্গে। তিনি জানান, মতিঝিল থেকে বাংলামোটর এসেছেন অন্তত চার ঘণ্টায়। এরপর হাঁটতে শুরু করেন। যাবেন গাবতলি পর্যন্ত। জানালেন, এ রকম কষ্ট করা ছাড়া উপায় নেই। বেলা তিনটার দিকে মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে রমনা পর্যন্ত পুরোটাইতেই ছিল গাড়ি। ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উড়াল সড়কটি উদ্বোধনের পর থেকে এমন চিত্র খুবই কম দেখা গেছে। দুপুরের আগে থেকেই ফ্লাইওভারে এমন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তারা। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের আগের দিনে বিভিন্ন সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের। দীর্ঘ সময় জটে আটকে থাকায় অনেক যাত্রীকে গাড়িতেই ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঘণ্টা খানের পথ যেতে কারও কারও তিন থেকে চার ঘণ্টাও লেগেছে। একই স্থানে গাড়ি আটকে থাকায় অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। যানজটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী ও শিশুরা। বিকেলে যানজটের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, করুণ অবস্থা। প্রায় সব জায়গায় যানজট। বিভিন্ন কলেজ থেকে ছাত্রলীগের র‌্যালি বের হওয়ায় এমন অবস্থা হতে পারে। কোন্ এলাকায় চাপ বেশি জানতে চাইলে তারা বলে, রাজধানীর শাহবাগসহ আশপাশের এলাকায় চাপটা খুবই বেশি। ট্রাফিক পুলিশের একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, র‌্যালির কারণে যানজটে ফার্মগেট এলাকা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। ফলে ঢাকার ভেতরে গাড়ি ঢুকতে পারছে না। ফলে আশপাশের রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। অনেকে জানান, বুধবার ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ফলে দুপুর ১২টার দিকে একেবারে থমকে দাঁড়িয়ে যায় রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক। এ যানজট এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে তা গুলিস্তান থেকে রাজধানীর উত্তরা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর এলাকা থেকে বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট পর্যন্ত, গুলশানের রাস্তাজুড়ে গণপরিবহন ও প্রাইভেট কারকে দীর্ঘ সময় ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। নিউভিশন বাসের চালক খলিল জানালেন, মতিঝিল থেকে ছেড়ে আসে সকাল ১১টায়। দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত বাসটি দাঁড়িয়ে থাকে দৈনিক বাংলার মোড়ে। যাত্রীভর্তি বাস ছাড়লেও জ্যামে পড়ে থাকতে থাকতে ড্রাইভার ও তার সহযোগীরা ছাড়া বাসটিতে আর কেউ ছিল না। তিনি বলেন, এই জট সহজে ছাড়বে না। মতিঝিল পাড়ার অফিস শেষ হলে এই জট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। আজ আয় রোজগারও একেবারে বন্ধ। ব্যাংকে চাকরি করেন খায়রুল ইসলাম। তিনি জানান, গুলশান দুই থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে তিনি রওনা দেন। যানজটে দুই ঘণ্টা আটকে থেকে বাড্ডা দিয়ে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। সব মিলিয়ে ছয় ঘণ্টার বেশি সড়কে বসে থাকতে হয় তাকে। বিকেল সাড়ে তিনটায় মৎস্য ভবন ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সার্জেন্ট জহুরুল বলেন, এ সময় পর্যন্ত চারদিকের রাস্তা ব্লক হয়ে আছে। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। দুপুর থেকে এ পরিস্থিতি চলছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বিষহ যানজটে নাকাল হয়ে হাঁটতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ। যানজটের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর (রমনা) অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফুল আলম বলেন, সকাল থেকেই যানজট শুরু হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে সেটা প্রকট আকার ধারণ করে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা থেকে শুরু হওয়া ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর প্রায় সব সড়কের ওপর। ফলে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। তবে রাতের আগে সড়ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও জানান তিনি।
×