ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের

অনুপ্রবেশকারী ও পরগাছাদের চিহ্নিত করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

অনুপ্রবেশকারী ও পরগাছাদের চিহ্নিত করতে হবে

সোহেল তানভীর ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার নানা কর্মসূচী পালন করে দেশের সর্ববৃহৎ এই ছাত্রসংগঠনটি। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় শান্তির প্রতীক কবুতর আর বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত সিকদারসহ ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়নে প্রধান বাধা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সকল বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ছাত্রলীগের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগ মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গায়। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা উড়ায়। যে বুলেট মুজিবকে আঘাত করেছে আজকে ছাত্রলীগ সেই বুলেটের চেয়েও হাজার গুনে শক্তিশালী। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারী ও পরগাছা মুক্ত ছাত্রলীগ চাই। এই অনুপ্রবেশকারী ও পরগাছারা ছাত্রলীগের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান বাধা। এদের চিহ্নিত করতে হবে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় তিনি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকল ছাত্রসংসদ নির্বাচন দেয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপিকে নালিশ পার্টি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি এখন দিশেহারা পথিক। তারা আবোল-তাবোল উন্মাদের মতো কথা-বার্তা বলছে। তাদের নিয়ে মাথা না ঘামানোর জন্য তিনি নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান। ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, বাঙালীর ইতিহাসের যা কিছু মহান অর্জন তার সবটুকুর সমান অংশীদার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জাতির পিতার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ১৭ হাজার ভাইয়ের প্রাণের বিনিময়ে লাল সবুজের পতাকা অর্জন করেছি আমরা। ছাত্রলীগের আন্দোলনের মুখে জাতির পিতাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার। এখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতীক হিসেবে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড় ঘুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৬টায় দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ রাজধানীতে ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এতে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর ছাত্রলীগও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। পরে সকাল ৮টা ১ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কাটা হয় কেক। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। ক্যাম্পাসের দেয়ালচিত্রে সংগঠনটির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস- ‘চিত্রপটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নতুন আঙ্গিকে শোভাবর্ধন করেছে। দেয়ালচিত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবিসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের আন্দোলনে ভূমিকা তুলে ধরতে সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা দেয়ালচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা অধিকার আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সংগঠনের সোনালি অর্জনগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, কলেজ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন। তাদের সেøাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকেও এতে অংশ নিতে দেখা যায়। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। আবদুল হাকিম নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী জনকণ্ঠকে বলেন, ৪ জানুয়ারি সবাই ছাত্রলীগ হয়ে যাই। ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা আজ ঘরে বসে থাকতে পারেন না। এই খুশির দিনে তাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে চলে আসলাম। তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্ম নেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলন, ’৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে।
×