ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৫ জানুয়ারি পালন করবে আওয়ামী লীগ, ৭ তারিখ বিএনপির কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

৫ জানুয়ারি পালন করবে আওয়ামী লীগ, ৭ তারিখ বিএনপির কর্মসূচী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বহুল আলোচিত ৫ জানুয়ারি আজ। গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক দিন। ভয়াল সহিংসতা-নাশকতার পথ পেরিয়ে গণতন্ত্রের নবযাত্রার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বছর আজ পূর্ণ হলো। গতবারের মতো এবারও ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আজ বৃহস্পতিবার মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে কিছুটা হলেও উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আজকের দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে আজ ঢাকাসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রা বের করবে দলটি। অন্যদিকে ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে বিএনপিও নানা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। রাজধানী ঢাকায় কোন কর্মসূচী না থাকলেও বিএনপি আজ দেশের সকল জেলা ও মহানগরে সভা-সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল বের করবে। সংঘাত এড়াতে ৫ জানুয়ারির পরিবর্তে ৭ জানুয়ারি বিএনপি ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি বিভিন্ন দিক থেকে বহুল আলোচিত। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে ৫ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে একটি অনন্য দিন হলেও এই তারিখটির নাম শুনলেই দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। কেননা ২০১৪ ও ২০১৫ এই ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা, সহিংসতা ও পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মহোৎসবের কথা স্মরণ করলে এখনও দেশের মানুষ উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে। কায়মনে প্রার্থনা করে, এমন ভয়াল ও বীভৎস পরিস্থিতি দেশে কখনও না আসে। তিন বছর আগের এই দিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ তাদের সমমনা কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। শুধু কি তাই। এ নির্বাচনকে ঘিরে যে সহিংসতা, নাশকতা ও নির্বাচন প্রতিহতের নামে বীভৎস কায়দায় পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মহোৎসব এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্বালানো, হাজার হাজার বৃক্ষনিধন, যাত্রী বোঝাই রেল-লঞ্চে অগ্নিসংযোগ, রেললাইন উপড়ে ফেলার মতো নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যা অতীতে কোন নির্বাচনের সময় ঘটেনি। শত ষড়যন্ত্রের পরও নির্বাচন হয়েছে, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ চৌদ্দ দলীয় জোটের সরকার। নির্বাচন বানচাল করতে না পারলেও সরকারের এক বছর পূর্তি দিবস অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোট আবারও একটানা ৯৩ দিন ধরে চালানো ভয়াল সহিংসতা, নাশকতা, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার বীভৎসতা প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ। কিন্তু নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ বিএনপি-জামায়াত জোট টানা হত্যাযজ্ঞ-নাশকতা চালিয়েও সরকারকে সামান্য টলাতে পারেনি। ২০১৫ সালের মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে আর শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। তিন বছর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফলতা নিয়ে যাত্রা শুরু করা ক্ষমতাসীন সরকার তৃতীয়বর্ষ পূর্তির আগেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপিকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়েই নতুন বছরের যাত্রা শুরু করেছে। পর পর দুই বছর ধরে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা, পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এখনও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তখন বার্ন ইউনিটে দুই শতাধিক মানুষের পোড়া শরীর আর আর্তনাদ দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেকে। টানা তিন মাসের এই নাশকতা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। আজ সেই ৫ জানুয়ারি। দিবসটিকে ঘিরে আবারও আজ মাঠে নামছে দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ আখ্যা দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি আজ সারাদেশে নানা কর্মসূচী নিয়ে সাংগঠনিক মহড়া দেখানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে আজ ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকাসহ দেশের কোথাও এ দিনটিকে সামনে রেখে কেউ যাতে কোনরূপ সহিংসতা বা নাশকতা চালাতে না পারে- সেজন্য দেশব্যাপী গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ সারাদেশেই আজ কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। যেকোন ধরনের নাশকতা-সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়েই মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেউ কোন ধরনের সহিংসতা-নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ বাহিনীকে তা শক্তহাতে তাদের দমনের নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশের মাঠ দখলে রাখবে আ’লীগ ॥ রাজধানীতে আজ বৃহস্পতিবার দুটি স্থানে সমাবেশ এবং দেশের সকল জেলা ও উপজেলা সদরে আনন্দ শোভাযাত্রা, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে আজ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং ধানম-ির রাসেল স্কোয়ারে পৃথক দুটি সমাবেশ শেষে বিজয় র‌্যালি বের করবে দলটি। এ দুটি সমাবেশে এবং বিজয় র‌্যালিতে মানুষের ঢল নামিয়ে আজ রাজধানীতে বড় ধরনের সাংগঠনিক মহড়া দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ ও জাতির স্বার্থে বিএনপি যাতে আজ দেশের কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য রাজধানীসহ সারাদেশেই সতর্ক অবস্থানে থেকেই বিজয়োৎসব পালন করবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি সারাদেশেই আজ সভা-সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে মাঠ দখলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, ঢাকার সমাবেশ দুটিতে ব্যাপক সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় এ দুটি সমাবেশেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন। তবে নির্দেশনা অনুযায়ী ভোর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা মাঠে সতর্ক অবস্থায় অবস্থান করবেন। এছাড়া সারাদেশের সকল মহানগরী, জেলা, উপজেলায় আনন্দ মিছিল, শোভাযাত্রা ও সভা-সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকদের ধারণা, সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন ও হতাশাগ্রস্ত দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে মিডিয়ার মাধ্যমে উত্তাপ-উৎকণ্ঠা ছড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে তারা যতই হুমকি দিক, ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তির কাছে এক মিনিটও টিকতে পারবে না বিএনপি। জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার-সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিএনপি যদি কোন ধরনের নাশকতার চেষ্টা করে, তবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিক গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ এবং রাসেল স্কোয়ারে মহানগর উত্তর এ সমাবেশের আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার এক বিবৃতিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ঘোষিত কর্মসূচী যথাযথভাবে পালনের জন্য দেশের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে গণতন্ত্রের বিজয়ের এই ঐতিহাসিক দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন। বিএনপিও আজ মাঠে থাকবে ॥ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিন আজ বৃহস্পতিবার বিএনপিও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আজ ঢাকায় কোন কর্মসূচী থাকছে না বিএনপির। তবে দেশের সকল জেলা-মহানগর ও উপজেলায় দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ করার কর্মসূচী দিয়েছে দলটি। আজকের বদলে ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন করেছেন দলটির নেতারা। বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে অতীতের মতো রাজপথে কোন সহিংস কর্মসূচীতে আর যেতে চায় না বিএনপি। আন্দোলনের নামে নাশকতা-ধ্বংসযজ্ঞ কিংবা মানুষ পুড়িয়ে হত্যার যে কলঙ্ক দলটির তিলকে আঁকা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে সেই কলঙ্ক আস্তে আস্তে মুছে ফেলতে চায় দলটি। আর দলটির হাইকমান্ড নিশ্চিত, বর্তমান ভঙ্গুর ও দুর্বল সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে রাজপথে শক্তিশালী আওয়ামী লীগের সামনে পেরে উঠতে পারবে না। আবার কর্মসূচীর নামে সহিংস কর্মসূচীতে গেলে দেশের জনগণ আর কখনোই বিএনপিকে গ্রহণ করবে না। এই বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করেই সংঘাতের বদলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালনের দিকেই ঝুঁকছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারের সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আজ ৫ জানুয়ারি বিএনপির উদ্যোগে কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, দেশ দৃশ্যমান পুলিশী রাষ্ট্র। পুলিশী রাষ্ট্র না হলে সরকার পুলিশকে সমাবেশের অনুমতি দিতে বলবে। তিনি জানান, ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে কর্মসূচী পালনের জন্য দলের কার্যালয়ে এক যৌথসভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
×