ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তাজকিয়া নুর মুন

কোহলি-রুট ও অশ্বিন-রাবাদার বছর

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

কোহলি-রুট ও অশ্বিন-রাবাদার বছর

বিদায়ী ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকেই আলো ছড়িয়েছেন। আভিজাত্যের টেস্ট অঙ্গনে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত সময় পার করেছেন জো রুট, বিরাট কোহলি, আজহার আলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রঙ্গনা হেরাথ ও মিচেল স্টার্ক। ওয়ানডেতে আবার এগিয়ে ডেভিড ওয়ার্নার, কুইন্টন ডি কক, এ্যাডাম জাম্পা, আদিল রশিদরা। ছোট ফরমেটের টি২০-তে দেখা গেছে মোহাম্মদ শেহজাদ, সাব্বির রহমান, জাসপ্রিত বুমরাহ, রশিদ খানের মতো নবীনদের দাপট। তবে তিন ভার্সন মিলিয়ে অন্যদের ছাড়িয়ে গেছেন কোহলি-রুট ও অশ্বিন-কাগিসো রাবাদারা। কী সাদা পোশাকে, পঞ্চাশ ওভারের আঙ্গিনায় অথবা ধুন্ধুমার টি২০Ñ সমানে বিচরণ করেছেন তারা। গড় পারফর্মেন্সের সমানে ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন। তিন ভার্সন মিলিয়ে গত বছরের সর্বোচ্চ ২৫৮০ রান কোহলির, গড় ৮৮.৯৬, সর্বোচ্চ টেস্টে ২৩৫। ২৪৭৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রুট। এরপর যথাক্রমে ওয়ার্নার (২১৮৬) স্টিভেন স্মিথ (২০৪৮) ও কেন উইলিয়ামসন (১৬৯৫)। বল হাতে তিন ভার্সন মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৯৭ উইকেট নিয়েছেন আইসিসির বর্ষসেরার মুকুট পরা অশ্বিন। ম্যাচ খেলেছেন ৩১টি। ৩২ ম্যাচে ৮১ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে তরুণ দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার কাগিসো রাবাদা। পরের তিনটি স্থানে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক (২৩ ম্যাচে ৮০), জস হ্যাজলউড (৩০ ম্যাচে ৬৯) ও ইংলিশ লেগস্পিনরর আদিল রশিদ (৩৪ ম্যাচে ৬৭)। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি২০- তিন ভার্সনে বরাবরাই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের নাম কোহলি। বিদায়ী ২০১৬ সালে ওয়ানডেতে ১০ ইনিংসে ৯২.৩৭ গড়ে তার মোট রান ৭৩৯। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৫৪সহ সেঞ্চুরি ৩টি। টি২০-তে ১৩ ইনিংসে ৬৪১ রান। গড় ১০৬.৮৩! ২০০৮ সালে ওয়ানডে দিয়ে অভিষেক, ২০১১-এ আভিজাত্যের টেস্টে পা রাখেন। নিন্দুকদের অভিযোগ, রঙ্গিন পোশাকের তুলনায় টেস্টে অতটা ভাল নন তিনি। সম্প্রতি সেখানেও নিজেকে মেলে ধরেছেন। গত বছর ১৮ ইনিংসে ৭৫.১৩ গড়ে করেছেন ১২১৫ রান। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ২৩৫ রানের ইনিংসসহ হাঁকিয়েছেন মোট তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি! ২০১৬ সালে তিন ভার্সন মিলিয়ে তার মোট রান ২৫৯৫, রিয়েল রান মেশিন বলতে যা বোঝায়। এ বছর ক্রিকেটের তিন সংস্করণের সবকটিতেই ৭৫-এর উপরে গড়। তার নেতৃত্বে টানা পাঁচটি সিরিজ জেতে ভারত, অপরাজিত থাকেন রেকর্ড ১৮ টেস্টে। গত মৌসুমে ইংল্যান্ড যে দাপট দেখায় তাতে বড় অবদান রুটের। টেস্ট-ওয়ানডে ও টি২০- প্রতিটি ভার্সনে দলের নিয়ামকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। যদিও শেষদিকে এসে বাংলাদেশ ও ভারত সফরটা ভাল হয়নি। ব্যাটিংয়ে স্মিথের কথা বিশেষভাবে বলতেই হবে। বছরের একেবারে শেষ প্রান্তে পাকিস্তানের বিপক্ষে মেলবোর্নে ‘বক্সিং ডে টেস্টে’ ইনিংস ও ১৮ রানের নাটকীয় জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। অপরাজিত ১৬৫ রানের ম্যারাথন ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যাচসেরা স্বাগতিক অধিনায়ক। গত বছর এটি ছিল তার চতুর্থ সেঞ্চুরি, হাফসেঞ্চুরি ৫টি। ৭১.৯৩ গড়ে মোট রান ১০৭৯। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে যথারীতি শীর্ষস্থান আরও শক্ত করে নিয়েছেন। নতুন বছরের শুরুতে তার রেটিং পয়েন্ট ৯৩৭। ২০০৭ সালে সর্বশেষ কোন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ৯৩৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ছিলেন গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা। স্মিথ যা ফর্মে, তাতে সে রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়ত সময়ের ব্যাপার। সিডনিতে পাকিস্তানের সঙ্গে চলছে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট। ২০১৬ সালে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ তিন ফরমেট মিলিয়ে স্মিথের মোট রান ২৪০৬। ৫১ ইনিংসে ৫৩ গড়ে এ রান করেছেন তিনি, ২০টির বেশি হাফসেঞ্চুরি! ওয়ানডেতে তিন সেঞ্চুরির সাহায্যে করেছেন ১১৫৪ রান। বোলিংয়ের কথা বলতে গেলে সবার আগে আসবে অশ্বিনের নাম। বিদায়ী বছরে আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার ‘স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফি’ জিতেছেন ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা বোলার ও অলরাউন্ডার জিতেছেন বছরের সেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। ভারতের হয়ে এর আগে সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছিলেন কেবল রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকর। তৃতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছেন তিনি। বছরজুড়ে অশ্বিন অবিশ্বাস্য পারফর্ম করেন। নিজে উঠে আসেন অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। তার দেশ ভারত যে শীর্ষস্থান দখল করে তাতে বড় অবদান অশ্বিনেরই। আইসিসির ভোটিং চলাকালীন অশ্বিন ৮ টেস্টে ৪৮ উইকেট নিয়েছেন এবং ৩৩৬ রান করেছেন। আবার ১৯ টি২০ ম্যাচে পেয়েছেন ২৭ উইকেট। শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই অশ্বিনের ঝুলিতে যোগ হয়েছে ১২ টেস্টে ৭২ উইকেট! এ বছরই ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম বোলার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট শিকারের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। ভারত যে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকে বছর শেষ করেছে, তাতে সবচেয়ে বেশি অবদান অশ্বিনেরই। নতুন বছর ২০১৭-এ এসব তারকার দিকে দৃষ্টি থাকবে। তবে সবার উপরে থাকবেন কোহলি-স্মিথ। কারণ আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখে নতুন বছর ২০১৭ শুরু করছেন স্টিভেন স্মিথ। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্টেও দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের ধাক্কা সামলে দুর্দান্তভাবে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে দল, যথারীতি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্মিথ। অন্যদিকে ব্যাট হাতে উড়ছেন বিরাট কোহলিও। শুরুর দিকে অপবাদ ছিল, ওয়ানডে-টি২০’র মতো টেস্টে অতটা ভাল নন তিনি। অবিশ্বাস্য বছর পার করার পর নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে প্রথমবারের মতো ক্যারিয়ারসেরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন, টেস্টে দেশকেও এক নম্বরে তুলে এনেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ক্রেজি বয়’। ঘরোয়া ক্রিকেট আইপিএলেও এবার রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ব্যাটিং, নেতৃত্ব, মাঠের বাইরে বলিউড কুইন আনুশকা শর্মার সঙ্গে রোমান্স। আলোচিত কোহলি। নতুন বছরেও তাকে ঘিরে থাকবে আগ্রহ।
×