ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলার রিয়াদের আকুতি

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

ফুটবলার রিয়াদের আকুতি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘কিং ব্যাক’ খ্যাত প্রখ্যাত-প্রয়াত ফুটবলার মোনেম মুন্নার কথা মনে আছে? কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের জীবনাবসান ঘটেছিল। খ্যাতিতে এবং প্লেয়িং পজিশনের দিক দিয়ে কোনভাবেই মুন্নার সঙ্গে তুলনীয় নন ওমর শরীফ রিয়াদ। তিনি ডিফেন্ডার নন, গোলরক্ষক। ৩০ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক খেলেছেন আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স, শেখ রাসেল ও শেখ জামালের মতো বড় দলে। রাজধানীর একটি নামকরা হাসপাতালের মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসার কারণে আজ মরতে বসেছেন তিনি। দরিদ্র ঘরের ছেলে রিয়াদের সতীর্থরা যখন মাঠ দাপিয়ে ফুটবল খেলছে, তখন তিনি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাদের খেলা দেখছেন গ্যালারির দর্শক হয়ে! ভুল চিকিৎসার কারণে শুধু ক্যারিয়ারই নয়, এখন জীবনই হয়ে পড়েছে সঙ্কটাপন্ন। অপারেশন করে বাঁচতে হলে তার দরকার কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা (কেউ আর্থিক সাহায্য করতে চাইলে রিয়াদের সোনালী ব্যাংকের ১০১৮০৭ এ্যাকাউন্ট নম্বর টাকা পাঠাতে পারেন)। গত ৩ নবেম্বর। অনুশীলন শেষে ক্লাবে (সাইফ স্পোর্টিং) ফিরে খাওয়া-দাওয়া এবং নামাজ পড়েন রিয়াদ। এরপরই হঠাৎ প্রচ- জ্বরে আক্রান্ত হন। ক্লাবের খরচেই (দুই লাখ টাকা) তিনি চিকিৎসা করাতে ধানম-ির ল্যাব এইড হাসপাতালে ৫ নবেম্বর ভর্তি হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ (ড. মনরুজ্জমান) দুদিন পর জানান রিয়াদের নাকি কিডনিতে সমস্যা! অবিলম্বে ডায়ালাইসিস করাতে হবে। দিশেহারা রিয়াদ উপায় না দেখে মত দেন আর সেটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ডায়ালাইসিস করানোর পর কোন উন্নতি হয়নি রিয়াদের। দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে দেখে বাঁচার জন্য মরিয়া রিয়াদ গত ১৫ নবেম্বর পাড়ি জমান ভারতের চেন্নাইয়ের বেলোরে। সেখানকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশে মারাত্মক ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন রিয়াদ। তার কিডনিতে কোন সমস্যাই ছিল না! ওষুধ খেলেই তিনি সুস্থ হয়ে যেতেন। ডায়ালাইসিস করাতে হয় কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে। এখন ভাল কিডনি ডায়ালাইসিস করানোতে রিয়াদের দুটি কিডনিই এখন ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে! এখন চেন্নাইয়ের ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে রিয়াদকে কিডনি-চিকিৎসা করাতে গেলে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লাগবে। চিকিৎসা সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৫০। রিয়াদের আর্থিক অবস্থা মোটেও ভাল নয়। এই পরিমাণ অর্থ অতি অল্প সময়ে কিভাবে জোগাড় করবেন তা ভেবে দুশ্চিন্তায় বিনিদ্র রজনী পার করছেন তিনি। বর্তমানে চেহারা ফুলে গেছে তার। হাঁটাচলা করতে ভীষণ কষ্ট হয়। তারপরও অর্থ সংগ্রহের জন্য অসুস্থ শরীরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অনেকেই আশ^াস দিয়েছে (ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা, ফেনী সকার, শেখ জামাল ক্লাব)। কেউ কেউ সাহায্যও করছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনাই তা নিতান্তই অপ্রতুল। সেজন্য রিয়াদ মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন তাকে অর্থ সাহায্যের জন্য, ‘আমি বাঁচতে চাই। আমার দরিদ্র পরিবারের এই টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সবার সাহায্য পেলে আমি অপারেশনের টাকা সংগ্রহ করতে পারব। এরপর অপারেশন সফল হলে আবারও আমি খেলার মাঠে ফিরতে চাই।’ ২০০৩ সালে পাইওনিয়ারের ক্লাব ধানম-ি ফুটবল একাডেমির হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু রিয়াদের। এরপর পর্যায়ক্রমে খেলেছেন জুরাইন স্পোর্টিং ক্লাব, উত্তর বারিধারা, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, টিম বিজেএমসি, শেখ জামাল ধানম-ি, অগ্রণী ব্যাংক এবং সর্বশেষ সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে। নেত্রকোনার ছেলে রিয়াদ। ৩ ভাই, ২ বোনের মধ্যে সবার ছোট। শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি বাড়াবাড়ি রকমের নেশা। এর কারণে পড়াশোনাও ঠিকমতো করা হয়নি তার। ছোটবেলা থেকেই গোলরক্ষক হিসেবে খেলতেন। তার কুশলী গোলরক্ষণ সবার নজর কাড়ে। ধীরে ধীরে চারদিকে নাম ছড়িয়ে পড়ে তার। নেত্রকোনার তানভীর হাসান কামাল ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবে দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলতেন। তিনিই ঢাকায় নিয়ে আসেন রিয়াদকে। তারপর ধানম-ি ফুটবল একাডেমিতে ঠাঁই করে নেয়ার মাধ্যমে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রিয়াদকে। ভুল চিকিৎসায় মরতে বসা রিয়াদের মূল্যবান প্রাণ রক্ষার জন্য কি এগিয়ে আসবেন কেউ?
×