ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যাকিংয়ের বছর ২০১৬

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

হ্যাকিংয়ের বছর ২০১৬

হ্যাকিং নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। গত বছরটি হ্যাকিংয়ের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমন একটা সপ্তাহ যায়নি যখন বিশ্বের কোথাও না কোথাও হ্যাকিং। অর্থাৎ ডিজিটাল সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি। হ্যাকাররা ডিজিটাল প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে মার্কিন বিচার বিভাগে ঢুকেছে, রাজস্ব বিভাগে ঢুকেছে এবং সম্ভবত জাতীয় নিরাপত্তা সার্ভিসেও ঢুকেছে। তারা এডাল্ট ফ্রেন্ড ফাইন্ডার, লিংকডইন, ইয়াহুসহ বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির তথ্য চুরি করেছে বা তা বিক্রি করার চেষ্টা করেছে। সেলিব্রেটিদের গোপন মেডিক্যাল রেকর্ড ও প্রাইভেট ছবি গোপনে হাতিয়ে নিয়েছে। দূর থেকে ওয়েব সংযুক্ত গেজেটের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে একদিন তো লাখ লাখ আমেরিকানকে ইন্টারনেট সংযোগ লাভে বাধা দিয়েছে। থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের উইকএন্ডে সানফ্রান্সিসকোর পৌর রেলওয়ে সাময়িক বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৬ সালে হ্যাকারদের বিশেষ টার্গেট ছিল আমেরিকার গণতন্ত্র। নির্বাচনী প্রচারের সময় বেশকিছু অত্যাধুনিক ডিজিটাল অনুপ্রবেশের দ্বারা প্রচুর পরিমাণ নথিপত্র ও ই-মেইল হাতিয়ে নেয়া হয়েছিল। ৮ নবেম্বরের ব্যালট দেয়ার সময় ১২ কোটি ৮০ লাখ আমেরিকান ভোটার যেসব মেশিন ব্যবহার করেছিল সেগুলো হ্যাক হওয়ার কোন আলামত যদিও পাওয়া যায়নি তথাপি বার বার প্রশ্ন উঠেছে সত্যি কি হ্যাকড হয়নি; কিংবা হ্যাকড কি হতে পারত? এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারা হ্যাকিং করছে? তাদের পরিচয় কি? এদের নির্দিষ্ট কোন পরিচয় নেই। তবে হ্যাকারদের মধ্যে ভালও আছে, মন্দও আছে। আবার এই দুইয়ের মধ্যে এমনও আছে নৈতিকতার বিচারে যারা অস্পষ্ট। অনেক হ্যাকার আছে রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত আবার মুক্তিযোদ্ধা, ন্যায় ও সত্যের জন্য সংগ্রামরত ব্যক্তি না গোষ্ঠী, নৈরাজ্যবাদী, অপরাধ জগতের অধিপতিদের পক্ষেও হ্যাকার আছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে ১০ হাজার হ্যাকারের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে হ্যাকিংয়ের জন্য গড় বার্ষিক বেতন হলো ২৮ হাজার ৭৪৪ ডলার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যাকাররা লসএ্যাঞ্জেলেসের একটি হাসপাতালের পুরো কম্পিউটার ব্যবস্থা এমনকি কর্মচারীদের ই-মেইলের প্রবেশাধিকার ও রোগীদের ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড জিম্মি করে ফেলে এবং এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ১৭ হাজার ডলার দাবি করে। আর ব্যক্তিবিশেষের তথ্য হ্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে হ্যাকারদের দাবি করা গড় মুক্তিপণের পরিমাণ ছিল ৬৭৯ ডলার যা গতবারের গড়ের দ্বিগুণ। র‌্যানসওয়্যার নামে একটি প্রোগ্রাম আছে যা কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ককে সংক্রমিত করে কাক্সিক্ষত অর্থ আদায় না হওয়া পর্যন্ত তথ্য জিম্মি করে রাখে। এফবিআইয়ের হিসেবে ২০১৬ সালে অপরাধীচক্র এভাবে এক শ’ কোটি ডলার আদায় করে নিয়েছে। হ্যাকিংয়ের কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ক্ষতি হয় কমপক্ষে ৪০ হাজার কোটি ডলার। হ্যাকিংয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য সাইবার ডিফেন্স, সাইবার ফরেনসিক্স ও সাইবার ইন্স্যুরেন্স শিল্পগুলোও বেশ জমে উঠেছে। চলতি দশকের শেষ নাগাদ এগুলোর পেছনে বছরে ২০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। হ্যাকিংয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গণতন্ত্র। হ্যাকাররা ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি, ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেশনাল ক্যাম্পেন কমিটি, হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম এবং কার্যক্রমের চেয়ারম্যান জন পডেস্টার জি-মেইল এ্যাকাউন্ট থেকে হাজার হাজার পাতার নথিপত্র চুরি করে নিয়েছে। তারপর উইকিলিক্সের মতো মিত্র ও ভিসি লিঙ্কের মতো ভুয়া ওয়েবসাইটের অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওই তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে ডেমোক্র্যাটদের অগ্রগতি ব্যর্থ করে দেয়ার প্রয়াস পেয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি পরে ক্যালিফোর্নিয়ার সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ক্রাউড স্ট্রাইকের সহায়তা চায়। প্রতিষ্ঠানটি তখন হ্যাকারদের হদিস বের করে তাদের দুটি গ্রুপে বিন্যস্ত করেÑ ফ্যান্সি বিয়ার ও কেজি বিয়ার। ক্রাউড স্ট্রাইক জানায়, প্রথমটি এমনভাবে কাজ করেছে যে তা থেকে ওই গ্রুপের হ্যাকারদের রুশ সামরিক বাহিনীর প্রধান বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ বা গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার পরিচয় পাওয়া যায়। অন্য গ্রুপটি ছিল কেজিবির উত্তরসূরি এফএসবির সঙ্গে যুক্ত। হেমন্ত নাগাদ মার্কিন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাশিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনতে রাজি হয় যে, মস্কো ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গোপন তথ্য হ্যাক করেছে এবং মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার প্রয়াস পেয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার অংশ হিসেবে গুপ্তচরবৃত্তি ও অপপ্রচারের সহস্র বছরের ঐতিহ্য আছে। স্নায়ুযুদ্ধের যুগে মার্কিন ও সোভিয়েত দু’পক্ষই বিদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। ২০১৬ সালের এ ব্যাপারে আলাদা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে তথ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা এবং সেই অস্ত্রকে মার্কিন ব্যবস্থার ভিত্তিমূলকে ভাগ করে আঘাত হানার কাছে রুশদের বিশেষ দক্ষতা অর্জন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এই ধরনের প্রচারাভিযানের নাম দিয়েছেন হাইব্রিড যুদ্ধ। রাশিয়া যেমন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন নির্বাচনে নাক গলিয়ে ছিল আমেরিকা কি তার বদলা না নিয়ে চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থেকেছে? অবশ্যই নয়। পাল্টা কিছু করে বসাই তো প্রচলিত ধারা। চলতি ডিসেম্বর মাসেই রুশ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে তাদের ব্যাংকিং অবকাঠামোয় ব্যাপক পরিসরে হ্যাকিং হয়েছে। হ্যাকাররা এ বছর প্রায় ৩ কোটি ডলার আত্মসাত করতে পেরেছে। হ্যাকিংয়ের অন্য সুবিধাও আছে। মোসাক ফনসেকা নামে পানামাভিত্তিক একটি আইন প্রতিষ্ঠানের কয়েক টেরাবাইট ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায় কিভাবে সেলিব্রেটি, বিলিয়নিয়ার ও ক্রিমিনালরা কর ফাঁকি দিয়ে থাকে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×