ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন সাবিনার

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

স্বপ্নের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন সাবিনার

জাহিদুল আলম জয় ॥ স্বাগতিক ও শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে আজ স্বপ্নের ফাইনালে মাঠে নামছে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল। সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা লাল-সবুজের দেশের মেয়েদের সামনে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও হাতছানি। এ লক্ষ্যেই ভারতের শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নামছেন সাবিনা, স্বপ্না, নার্গিসরা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে। স্বপ্নের ফাইনালে সবার বাড়তি নজর থাকছে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের দিকে। কৃতী এই ফরোয়ার্ডের গোল স্কোরিং ক্ষমতা সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়ানো সাবিনা ইতোমধ্যে টুর্নামেন্টে করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ গোল। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একাই ৫ গোল করা সাবিনা সেমিফাইনালে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে করেন ২ গোল। এ কারণে সাবিনাকে গোলমেশিন হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ফাইনালেও গোল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, ট্রফি নিয়ে ফিরতে চান দেশে। গ্রুপ পর্বে ভারতের বিরুদ্ধে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ হারান সাবিনা। তবে ফাইনালে সেই ভুল করতে চান না। আগের ম্যাচের ভুল শুধরে এবার গোল করতে চান। সাবিনা বলেন, আমার চেষ্টা থাকবে ফাইনালে নিজের সেরাটা দিয়ে ভাল করার। চাইব গোল করতে। দারুণ ধারাবাহিকতা দেখান সাবিনাকে নিয়ে মেতেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমও। সাতক্ষীরার এই স্বর্ণকন্যাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি গৌরবের হলেও এ বিষয়ে বাড়তি চাপ নিচ্ছেন না সাবিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবশ্যই এই প্রশংসা আমার জন্য চাপ হবে না। যার কাছে যেটা মনে হচ্ছে, সে সেটা বলবে। এ নিয়ে আমার কোন ভাবনা নেই। তবে এটা আমাকে আরও ভাল করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। শুধু গোল করা নয়, ট্রফিতেও দৃষ্টি রাখছেন বাংলাদেশ কা-ারি। বলেন, আমার সতীর্থরা অনেক কষ্ট করেছে। কোচ ও দলের স্টাফরা অনেক শ্রম দিয়েছে। এখন আমরা শিরোপা জয়ের চেষ্টা করব। প্রথমবারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নেয়ার পর শুধু সাবিনা নন, সবার চোখে মুখেই শিরোপা জয়ের প্রত্যয়। বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও দলের বাকি সদস্যরাও তেমন স্বপ্ন বুনছেন। শুধু এই টুর্নামেন্টেই নয়, গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন আসরে ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়াচ্ছেন সাবিনা। এক ম্যাচে হ্যাটট্রিক, কিংবা বড়জোর পাঁচ গোল যেখানে অসাধারণ বলা যায় হয় সেখানে ১৬ গোল করার রেকর্ডও আছে এই ফরোয়ার্ডের। এইতো গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একাই করেন পাঁচ গোল। ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতোমধ্যে দুইশতাধিকেরও বেশি গোল করা এই ফুটবলার প্রতিম্যাচে গড়ে দুই থেকে তিনটি করে গোল করেন। সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনার শুরুটা ২০০৯ সালে। সিটিসেল জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে খেলেছেন ঢাকা মহানগর মহিলা ফুটবল লীগে। কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবলে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ ঘরোয়া ফুটবলের শতাধিক গোল করেন সাবিনা, হয়ে যান জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০১৪ সালে পাকিস্তানে মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইগোল করেন সাবিনা। এর মাধ্যমেই মালদ্বীপ ফুটবল কর্তাদের নজরে আসেন তিনি। এরপর দেশের প্রথম প্রমীলা ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরের লীগে খেলার সুযোগ পান সাবিনা। এর আগে কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, কায়সার হামিদ, প্রয়াত মোনেম মুন্না ও মামুনুল দেশের বাইরে খেলার ডাক পেলেও নারী হিসেবে সাবিনাই প্রথম এই কীর্তিগাথা রচনা করেন। প্রথমবারেই বিদেশী লীগে খেলতে গিয়ে সাবিনা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তা বোধহয় রূপকথাকেও হার মানায়। মালদ্বীপে পুলিশ ক্লাবের পক্ষে অভিষেকেই করেছেন চার গোল, পরের ম্যাচে একাই করেছেন ১৬ গোল (৫টি হ্যাটট্রিক!)। এর আগে ঢাকার মাঠে একবার এক ম্যাচে ১৪ গোলের রেকর্ড ছিল এই স্ট্রাইকারের। মালদ্বীপে মোট ছয় ম্যাচে সাবিনা গোল করেছিলেন ৩৭টি এবং এর পাঁচটিতেই ছিলেন ম্যাচসেরা। ঢাকা মোহামেডানসহ ক্লাব পর্যায়ে একের পর এক বিস্ময় উপহার দেয়া এই ফরোয়ার্ড জাতীয় পর্যায়েও সমান উজ্জ্বল। চলতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে পাঁচ গোল করেছেন, দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধেও দলের মূল ভরসার নাম তিনি। এস এ গেমস, অলিম্পিক প্রি-কোয়ালিফাইং কিংবা এএফসি ওমেন্স এশিয়ান কাপ ২০১৪ বাছাইপর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ম্যাচে বরাবরই গোল করেছেন সাতক্ষীরার মেয়ে। অসাধারণ পারফর্মেন্স এবং নেতৃত্বগুণের কারণে বর্তমান বাংলাদেশ প্রমীলা ফুটবল দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। ব্রাজিলের তারকা মার্তাকে আদর্শ মানেন সাবিনা। ‘স্কার্ট পরা পেলে’ হিসেবে পরিচিত মার্তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে একটি দেশের প্রমীলা ফুটবলের সমর্থক হয়ে গেছেন সাবিনা। ফুটবলভক্তদের কাছে ‘বাংলার মেসি কন্যা’ নামে পরিচিত এই ফুটবলার নৈপুণ্য দিয়েই তার এই নামটি সার্থক করে তুলছেন। আজ স্বপ্নের ফাইনালেও তারদিকে তাকিয়ে পুরো দেশ।
×