ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যমেলা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

বাণিজ্যমেলা

বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী।’ সেই লক্ষ্মীর সন্ধানে পণ্য নিয়ে প্রয়োজনে যেতে হয় দূর-দূরান্তে। আবার দূর দেশের পণ্য আমদানির দরজাটাও রাখতে হয় খোলা। দেবে আর নেবে, মিলিবে মেলাবের মতো আমদানি-রফতানি দিগন্ত সম্প্রসারিত হলে, তা হয় সোনায় সোহাগা। বিশ্ব মাঝে নিজের উৎপাদিত পণ্য হাজির এবং বিক্রি-বাট্টার জন্য তাই আয়োজন করা হয় মেলার। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। স্বাধীনতার পর থেকেই পঁচাত্তর পূর্ব পর্যন্ত দেশে আয়োজন করা হয় বাণিজ্যমেলা। দেশীয় পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরাও তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হন মেলায়। এই আন্তর্জাতিক মেলা চলাকালে বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। যেটা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। বিপণন ও ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে তৈরি হয় নতুন এবং অগ্রসরমান সেতুবন্ধ। এই মেলা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সৃষ্টিসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত করে। অবশ্য আয়ের পরিমাণটি বড় কথা নয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা দেশীয় পণ্যের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাপনা বিশ্ব পরিম-লে তুলে ধরতে বড় ভূমিকা পালন করে। একই সঙ্গে উৎপাদক ও ভোক্তার পণ্যের গুণগতমান ও তুলনামূলক মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ থাকে। ফলে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি করার পথ সুগম হয়। দেশে গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করায় এবং জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী আতঙ্ক হ্রাস পাওয়ায় শিল্প উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী মহল এবং ক্রেতা সাধারণের মধ্যে মেলায় অংশগ্রহণের বিপুল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বেশকিছু নতুন পণ্য, প্রযুক্তি এবং উপকরণের সমাহার ঘটেছে এবারের মেলাতে। বাণিজ্যমেলা প্রতিবছরই দেশী-বিদেশী ক্রেতাদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ তৈরি করে আসছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি শুরু হয় মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা। এবার ২২তম মেলা বসেছে। অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশসহ এক শ’টি দেশ। বাণিজ্যমেলার স্থায়ী কোন স্থান নেই। দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী কেন্দ্রের দাবি উঠে আসছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে জায়গা নির্ধারণ করা হলেও কার্যকর উদ্যোগ ছিল না। এবার বাণিজ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় পূর্বাচলে ষাট বিঘা জমির ওপর স্থায়ী কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। চীনের অর্থায়নে ২০১৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এই মেলা দেশের মানসম্পন্ন রফতানিযোগ্য পণ্যকে বিশ্ববাজারে পরিচিত করার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। পণ্যের মান বৃদ্ধি এবং নতুন শিল্পায়নের মাধ্যমে বাজার সৃষ্টির ব্যাপারে মেলা গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। বিপুল পরিমাণ দেশীয় পণ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসবের মধ্যে তৈরি পোশাক, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য, পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প, কার্পেট, সফটওয়্যার, গৃহস্থালি ও ইলেক্ট্রনিক পণ্য ইত্যাদি। মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিএসপির পেছনে শ্রম না দিয়ে অন্য দেশে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বাংলাদেশ যত পণ্য যত দ্রুত সরবরাহ করতে পারবে, পৃথিবীর কোন দেশ তা পারবে না। সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকে এগিয়ে আসার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি চামড়াজাত পণ্যকে জাতীয়ভাবে সার্বিক পণ্য বা প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণাও করেন। বাণিজমেলা শুধু পণ্য বিক্রি নয়, বিদেশে পণ্যের বাজার সন্ধানের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে আসছে। তাই বিশ্বের এক শ’টি দেশে বাংলাদেশ পণ্য রফতানি করতে পারছে। বাণিজ্যমেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন সার্বিক প্রেক্ষাপটে। একই সঙ্গে নির্বিঘেœ মেলায় কেনাকাটার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক এটাই কাম্য।
×