ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রাজধানীতে তিনদিনের পৌষমেলা শুরু শুক্রবার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

রাজধানীতে তিনদিনের পৌষমেলা শুরু শুক্রবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ষড়ঋতুর বাংলাদেশে রয়েছে ঋতুভিত্তিক নানা আনন্দ-উৎসব। সেই প্রেক্ষাপটে পিঠা-পুলি আর খেজুরের রসে জিভে জল আনা শীতকাল বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বাঙালীর মনে। তাই অন্য ঋতুগুলোর মতো এই ঋতুটি বরণেও থাকে নানা আনুষ্ঠানিকতা। সেই সুবাদে আগামী শুক্রবার থেকে রাজধানীতে শুরু হচ্ছে তিনদিনের পৌষমেলা। মেলায় লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে উপস্থাপিত হবে দেশজ পণ্যের সমাহার। সেই সঙ্গে নাগরিক পটভূমিতে তুলে ধরা হবে গ্রামীণ জীবনের নানা অনুষঙ্গ। থাকবে দলীয় সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য, একক সঙ্গীত, একক নৃত্য, একক আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তিসহ বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুক্রবার সকাল ৮টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে তিন দিনের এ মেলার উদ্ধোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মেলার আয়োজন করবে পৌষমেলা উদ্যাপন পরিষদ। মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে পৌষমেলা উদ্যাপন পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। মেলা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, পরিষদের সভাপতি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী। পৌষমেলার তাৎপর্য তুলে ধরে বিশ^জিৎ রায় বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের প্রাণের উৎসব পৌষ উৎসব। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা যেমন বাঙালীর হাজার বছরের লোক ঐতিহ্যকে তুলে ধরি। পক্ষান্তরে বাঙালী চেতনা ধ্বংসকারী সংস্কৃতিবিরোধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ গ্রহণ করি। তিনি আরও জানান, প্রতিবছর রমনার বটমূলেই এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে রমনায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ছাড়া সব অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবারই প্রথম বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। শামসুজ্জামান খান বলেন, পৌষমেলা হলো বাঙালীর ঐতিহ্যের প্রতীক। একটি অসাম্প্রদায়িক. মানবিক, গণতান্ত্রিক চেতনা প্রসারিত করার জন্য এই ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হবে। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। এই উৎসবগুলো আমাদের অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এর মাধ্যমে আমাদের ঐক্য গড়ে উঠে। এ সময় তিনি বলেন, সংস্কৃতির মাধ্যমেই তরুণদের মানবিক করে গড়ে তোলা যায়। বাঙালীর আত্মপরিচয়ের মূল ঠিকানা সম্পর্কে জানে না অনেক তরুণ। তারা ভুলতে বসেছে শেকড়ের কথা। দেশেও সংস্কৃতিচর্চাও ক্রমশ ম্রিয়মান হয়ে পড়ছে। আমরা এ মেলার মাধ্যমে সংস্কৃতি চর্চাকে জাগিয়ে তুলতে চাই। অনেক সাংস্কৃতিক উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। যেগুলো আমাদের ধরে রাখতে হবে। পৌষমেলার মাধ্যমে আমরা গ্রামীণ ঐতিহ্যকে নগর জীবনে তুলে ধরতে চাই। আগামী শুক্রবার বাংলা একাডেমি একটি ছোট্ট গ্রামে পরিণত হবে। শুক্রবার সকাল ৮টায় বাংলা একাডেমির নজরুল চত্বরে মেলার উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মেলায় দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি থাকছে পিঠা-পুলির স্টল। বিচিত্র সাজের, বাহারি গন্ধের পিঠা-পুলি, নলেন গুড় আর খেজুর রসে শিরনি পায়েস রাঁধতে গ্রামবাংলা থেকে উঠে আসবেন কারিগররা। প্রথম দিনের প্রথম পর্বে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, ধ্রুব, বহ্নিশিখা, স্ব-ভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, প্রিয়াঙ্কা গোপ, অনিমা মুক্তি গোমেজ, আবু বকর সিদ্দিক, বিমান চন্দ্র্র বিশ্বাস। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে স্পন্দন, নৃত্যজন ও ভাবনা। একক আবৃত্তি করবেন মোঃ আহ্্কামউল্লাহ্্, তামান্না তিথি, দলীয় আবৃত্তি করবে মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ উৎসবের সমাপ্তি ॥ দুই দিনব্যাপী উৎসবের মাধ্যমে স্মরণ করা বরেণ্য কথাশিল্পী শওকত ওসমানকে। সোমবার ছিল স্বদেশের কথা বলা এই লেখকের শততম জন্মবার্ষিকী। প্রগতির দিশারী এই সাহিত্যিকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে চলমান দুই দিনের এ উৎসবের শেষদিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন বিকেলে গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় শওকত ওসমান রচিত ছোটগল্প ‘দুই মুসাফির’ অবলম্বনে মাইনুল হাসিব নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘ফেরা’। এরপর সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যছন্দ। বেনজীর সালামের পরিচালনায় ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’ গানের সুরে নাচ করে একঝাঁক শিল্পী।। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও উদীচীর সাবেক সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় শওকত ওসমানকে নিবেদিত আলোচনাসভা। আলোচনায় অংশ নেন শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ, মঞ্চ অভিনেতা তবিবুল ইসলাম বাবু এবং শওকত ওসমানের ছেলে জাঁ নেসার ওসমান। কামাল লোহানী বলেন, শওকত ওসমানের নামে শুধু একটি মিলনায়তন করলেই হবে না, তার রচনা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ সময় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন অথবা বাংলা একাডেমির উদ্যোগে শওকত ওসমানের রচনাসমগ্র প্রকাশের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সমালোচনা করেন কামাল লোহানী। আলোচনায় সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, আজকের দিনে শওকত ওসমানের অভাব খুব বেশি করে অনুভূত হয়। দেশে যখন ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ক্রমশ ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে, তখন শওকত ওসমানের রচনাসমূহ সঠিকভাবে পাঠ করলে এর থেকে উত্তরণের পথ পাওয়া সম্ভব। অন্য বক্তারা বলেন, শওকত ওসমান মূলত কথাশিল্পী হিসেবে পরিচিত হলেও একইসঙ্গে তিনি ছিলেন একজন সফল প্রবন্ধকার, ছড়াকার, নাট্যকার বা এক অর্থে সব্যসাচী লেখক। শওকত ওসমান একজন আধুনিক সমাজ-সচেতন, অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী, মাবতাবাদী এবং প্রগতিশীল ঘরানার একজন সাহিত্য স্রষ্টা ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তারা। বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে তার অবস্থান চিরস্মরণীয়। আলোচনাপর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন। আলোচনা সভার পর আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আনান বাউল ও জাহিদ কামাল।
×