ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রস্তুতি শুরু, সময় বাড়ছে আধা ঘণ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রস্তুতি শুরু, সময় বাড়ছে আধা ঘণ্টা

মনোয়ার হোসেন ॥ চলছে নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির প্রথমার্ধ। আসছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রতিবছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭। ইতোমধ্যে বাঙালীর মননের সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবিময় মাসব্যাপী মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বইমেলার একাংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্ধারিত হয়েছে মেলার সীমানা। এ অংশটিতে বাঁশ গেড়ে খুঁটি পোঁতাসহ নানা তৎপরতায় এখন মেলার প্রাথমিক কাজ চলছে। মেলার অপর অংশ বাংলা একাডেমি আঙ্গিনায় চোখে পড়ে বইমেলাকেন্দ্রিক নানা তৎপরতা। বিগত বছরের নানা কিছুর সঙ্গে এবারের বইমেলার নান্দনিকতা বাড়াতে এবং পাঠকের সুবিধার্থে কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে আয়োজক বাংলা একাডেমি। ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত উদ্যান অংশের মেলায় প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে আলোকসজ্জা। কর্মজীবীসহ নানা শ্রেণী-পেশার পাঠকদের সুবিধার্থে মেলার সময় বাড়ানো হয়েছে আধা ঘণ্টা। প্রবেশের মূল দুই প্রবেশপথ দোয়েল চত্বর ও টিএসসি এলাকার দৃষ্টিনন্দন দুটি ফটকে স্থাপিত ইলেক্ট্রনিক বোর্ডের মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে মেলা সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশিকা। এছাড়া গত বছরের মতো এবারও মেলা উপলক্ষে একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খ্যাতনামা সাহিত্যিকরা আসবেন। বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, বরাবরের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থাসমূহের স্টল। ১২টি চত্বরে ভাগ করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সাজানো হবে স্টলগুলো। আর এই ১২টি চত্বরেই নান্দনিকতা ছড়িয়ে দিতে থাকবে আলোকসজ্জা। প্রতিটি চত্বরেই পৃথক রঙের মরিচ বাতি ও এলইডির বাতির সাহায্যে বর্ণিল রূপ দেয়া হবে। চত্বরগুলোর স্বতন্ত্র রঙ্গিন বাতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেসব চত্বরের অন্তর্ভুক্ত প্রকাশনা সংস্থাগুলোর স্টলসজ্জায়ও সেই বিশেষ রঙের প্রাধান্য দিচ্ছে একাডেমি। কবি-সাহিত্যিক-মনীষীসহ বিশিষ্টজনদের নামাঙ্কিত হবে এই ১২টি চত্বর। প্রতিটি চত্বরে ডিজিটাল স্ক্রিনে থাকবে স্টলের তালিকা ও নির্দেশিকা। এই চত্বরগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে শিশু চত্বর। গত বছরের মতো এবারও শিশুতোষ গ্রন্থ সংগ্রহের পাশাপাশি শিশুদের বিনোদন উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে এ চত্বর। এছাড়া অন্য ১১টি চত্বরে ঠাঁই পাবে সুপরিসর স্থান ও নান্দনিক সজ্জাবিশিষ্ট ১৩টি প্যাভিলিয়ন। উদ্যানের অভ্যন্তরে মেলায় ঘোরাঘুরি বা বই সংগ্রহের পর আনন্দের মাত্রাটা বাড়িয়ে দিতে বইপ্রেমীদের জন্য থাকবে পর্যটন কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ফুড কোর্ট। একই ধরনের ফুড কোর্ট থাকবে মেলার অপর অংশ বাংলা একাডেমিতেও। এই ফুড কোর্টগুলোয় খাবারের দাম যেন সহনীয় হয়Ñ সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে একাডেমি ও প্রকাশকদের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সুবিধার্থে হুইল চেয়ার থাকবে দোয়েল চত্বরে। এখানে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের মেলায় স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণের বিষয়ে সহযোগিতা করবেন। এছাড়া মেলার অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের বসার জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। প্যাভিলিয়নসহ এক ইউনিট, দুই ইউনিট, তিন ইউনিট ও চার ইউনিটের স্টল মিলে মেলার দুই অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি মিলিয়ে বরাদ্দ করা হবে মোট ৬৫০ ইউনিট। এর মধ্যে উদ্যান অংশে থাকবে ৫৫০ ইউনিট এবং একাডেমি অংশে থাকবে ১০০ ইউনিট। একাডেমির অংশে মূলত থাকবে বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্টল। বরাবরে মতো এবারও একাডেমির বহেরাতলায় থাকবে খুদে কাগজের বড় স্বপ্ন আঁকিয়েদের লিটল ম্যাগাজিন চত্বর। পাঠকদের সুবিধার্থে এবার একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে একটি বিশেষ স্টল। বিশেষ স্টল থেকে পাওয়া যাবে প্রতিদিন প্রকাশিত বইয়ের তালিকা। তালিকার পাশাপাশি প্রতিদিনের প্রকাশিত বইয়ের একটি কপিও থাকবে; যা থেকে পাঠকরা জেনে নিতে পারবেন তার পছন্দের বইটি পাওয়া যাবে কোন প্রকাশনীর স্টলে। তবে এখানে বইয়ের কোন কেনা-বেচা হবে না। ২০১৭ সালের একুশে বইমেলার সময়সীমা আধাঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। গতবার মেলা সময়সূচী ছিল বিকেল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। এবার ৩০ মিনিট বেড়ে মেলা খোলা থাকবে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। গত বছরসহ বিগত কয়েকটি বছরের বইমেলায় বৃষ্টির কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা। সেই বৃষ্টিজনিত ক্ষতি এড়াতে এবার প্রতিটি স্টলে ত্রিপলের বদলে দেওয়া হবে টিনের ছাউনি। সে সঙ্গে এবার অগ্নিবীমার পাশাপাশি সøাইক্লোন ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাজনিত সৃষ্ট সমস্যাও বীমার আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও এবারে মেলার স্টল বরাদ্দের সময়ে লেখকের সঙ্গে প্রকাশকদের চুক্তিপত্রের অনুলিপিও জমা দিতে হবে। সাম্প্রতিক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা বিভিন্ন জঙ্গী হামলা এবং উগ্রবাদীদের অশুভ তৎপরতার বিবেচনায় এবারের মেলায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবার মেলা প্রাঙ্গণ থেকে টিএসসি ও শামসুন্নাহার হল হয়ে শাহবাগ মোড় এবং অন্যদিকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। সে সঙ্গে বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আটটি আর্চওয়ে বসানো হবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের চেয়ে এবারের মেলায় ব্যবস্থাপনায় আমরা এগিয়ে আছি। আশা করছি, মেলার পাঁচদিন আগে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে স্টলের সাজসজ্জাসহ মেলার সব প্রস্তুত সম্পন্ন হবে। এটা হলে এবারের মেলা অনেক বেশি দর্শনীয় হবে। ১৭ জানুয়ারি লটারির মাধ্যমে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর বরাদ্দপ্রাপ্ত স্টলের নির্ধারিত স্থান বুঝিয়ে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গতবারের মতো এবারের মেলারও আরেক আর্কষণীয় হবে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। পয়লা ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া বইমেলার সঙ্গে এটিরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া, পুয়ের্তোরিকো, চীন, অস্ট্রিয়া, জাপান থেকে দশ কবি-সাহিত্যিক অংশ নেবেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দশজন করে খ্যাতনামা প্রাবন্ধিকগণ একটি বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেবেন।
×