ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডায়াবেটিস ও গর্ভাবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

ডায়াবেটিস ও গর্ভাবস্থা

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (এবংঃধঃরড়হধষ উরধনবঃবং গবষষরঃঁং ড়ৎ এউগ) : গর্ভাবস্থায় প্রথমবারের মতো ডায়াবেটিস ধরা পড়লে বা শুরু হলে তাকে গর্ভাকালীন ডায়াবেটিস বলে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব ইদানীংকালে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তা না হলে মা এবং হবু সন্তানের বিভিন্ন প্রকার জটিলতা দেখা দিতে পারে। জীবনাচারণ (ষরভবংঃুষব) পরিবর্তন করে যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হয় তাহলে ইনসুলিন দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। গর্ভাবস্থায় মুখে খাওয়ার ডায়াবেটিসের ওষুধ পরিহার করতে হয়। সন্তান প্রসবের পর এ ধরনের ডায়াবেটিস কোন প্রকার ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে। তবে এ ধরনের রোগীদের পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয় সকল গর্ভবতী মহিলাদের ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে তারও আগে গ্লুুকোজ টলারেন্স টেস্ট করে দেখতে হবে তার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা। গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট এর নিম্নরূপ রেজাল্টগুলোর মধ্যে যে কোন একটি অস্বাভাবিক রেজাল্ট পেলেই তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা যাবে। ক্স অভূক্ত অবস্থায় ৫.১ মিলিমোল/লিটার ক্স চিনি খাওয়ার এক ঘণ্টা পর ১০ মিলিমোল/লিটার ক্স চিনি খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮.৫ মিলিমোল/লিটার গর্ভাকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী ১. নিয়মিত প্রসূতি বিশেষজ্ঞগণের তত্ত্বাবধানে চেকআপ করাবেন ২. খাদ্য গ্রহণের পরিবর্তিত নিয়ম মেনে চলবেন (৭-৮ বেলা) ৩. বাড়িতে নির্দেশিত নিয়ম অনুযায়ী গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করবেন গ্লুকোজ পরিমাপের নির্দেশিত দিনসমূহ ক্স গর্ভকালীন ৬ মাস পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর ১ দিন গ্লুকোজ পরিমাপ করবেন ক্স ৬ মাসের পরবর্তী সময় হতে প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত সপ্তাহে ১ দিন (৭ দিন অন্তর অন্তর) গ্লুুকোজ পরিমাপের সময়সূচী (গ্লুকোমিটারের সাহায্যে) ক্স খালিপেটে ও নাস্তার ২ ঘণ্টা পর (২ বার) ক্স দুপুরের আহারের পূর্বে ও আহারের ২ ঘণ্টা পর (২ বার) ক্স রাতের আহারের পূর্বে ও আহারের ২ ঘণ্টা পর (২ বার) মোট ৬ বার। রক্তে গ্লুকোজের লক্ষ্যমাত্রা ক্স আহারের পূর্বে : ৪.০-৫.৫ মিলিমোল/লিটার ক্স আহারের ২ ঘণ্টা পরে : ৪.৫-৭.০ মিলিমোল/লিটার ৪. যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হন তাহলে ইনসুলিন গ্রহণ করাই শ্রেয়। ডায়াবেটিসে মুখে খাওয়ার ওষুধ গ্রহণ কোনভাবে বাঞ্ছনীয় নয়। ৫. প্রসব পরবর্তী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে আপনার সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে প্রসূতি, ভ্রƒণ এবং সদ্যপ্রসূত শিশুর নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। মায়ের সমস্যা ১. গর্ভপাত। ২. এক্লাম্পশিয়া/প্রি-এক্লাম্পশিয়া। ৩. গর্ভফুল স্ফীত হওয়া। ৪. ডায়াবেটিস সহজে নিয়ন্ত্রণে না আসা। ৫. চোখের সমস্যা (জবঃরহড়ঢ়ধঃযু) এবং কিডনির সমস্যা (ঘবঢ়যৎড়ঢ়ধঃযু) ত্বরান্বিত হওয়া। ৬. প্রত্যাশিত প্রসবের সময়ের আগে ডেলিভারি ব্যথা শুরু হওয়া। ৭. প্রসবের সময় বেশি লাগা ইত্যাদি। ভ্রƒণ এবং সদ্য প্রসূত শিশুর সমস্যা ভ্রƒণের/শিশুর ওজন মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া (গধপৎড়ংড়সরধ)। গর্ভাবস্থায় ভ্রƒণের বৃদ্ধি বিঘিœত হওয়া। জন্মের পর শিশুর রক্তের শর্করা বা সুগার কমে যাওয়া (ঐুঢ়ড়মষুপবসরধ)। জন্ডিস হওয়া। শিশুর শ্বাসকষ্ট হওয়া। শিশুর হৃৎপি-, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্রে জন্মগত ত্রুটি হওয়া। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস গর্ভাবস্থায় প্রথমবারের মতো ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে ‘জিডিএম’ বলে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চাই বিশেষ ধরনের প্রস্তুতি তা না হলে মা ও ভ্রƒণের হয় নানা রকম ক্ষতি। খাদ্যব্যবস্থা ও হাঁটাহাঁটির পরিবর্তনে যদি সুগার নিয়ন্ত্রণ না হয় যথাশীঘ্র ইনসুলিন নিতে করবেন না সংশয়। গর্ভাবস্থায় ইনসুলিনই একমাত্র মেডিসিন বিতর্ক আছে ব্যবহার নিয়ে গ্লিবেনক্লামাইড, মেটফরমিন। ডায়াবেটিস মহিলাদের সন্তান ধারণ ডায়াবেটিস মহিলার সন্তান ধারণে কোন বাধা নেই গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া চাই। মুখে খাওয়ার ওষুধগুলো ৩ মাস আগে বাদ দিন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন ইনজেকশন নিন। হিমোগ্লোবিন এ১সি যখন ৬.৫% -এর নিচে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে তখন সন্তান নেয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় সুগারের চাই কঠোর নিয়ন্ত্রণ তা’না হলে বিকলাঙ্গ শিশুর করবেন আমন্ত্রণ। খাওয়ার পূর্বে পাঁচ (মিলিমোল) -এর নিচে আর খাওয়ার পরে সাত (মিলিমোল) এ টার্গেটেই সুগার রাখবেন সারাদিন কিংবা রাত। বি:দ্র: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে মুখে খাওয়ার ওষুধ নিষিদ্ধ, নিয়মিত সুগার পরীক্ষা করতে হবে, ব্যায়ামে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, ইনসুলিন একমাত্র মেডিসিন যেটি গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা যায়। ডাঃ এম এ হালিম খান এমডিÑ এন্ডোক্রাইনোলজি ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ
×