ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুদীপ্ত ধ্রুব

বিশ্ব দরবারে বাংলার মুখ

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

বিশ্ব দরবারে বাংলার মুখ

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশীদের সাফল্যের গল্প প্রতি দিনই লেখা হচ্ছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে চলেছেন তারা। উদ্যোক্তা থেকে শুরু“করে শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী বহু ক্ষেত্রেই মেধাবী ও পরিশ্রমী বাংলাদেশীদের সাফল্যের গল্প প্রশংসিত হয়ে আসছে। ঠিক তেমনি একজন আমাদের দীপঙ্কর তালুকদার। আলবার্ট আইনস্টাইন একশ’ বছরের আগে বলেছিলেন মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ থাকার সম্ভাবনার কথা। আর একশ’ বছর পর অবশেষে বিজ্ঞানীরা তথ্য-প্রমাণ হাতে পেলেন, আর আইনস্টাইনের কথা সত্য প্রমাণিত হলো। গত বছর ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা বিশাল সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিলেন, দুটি কৃষ্ণগহ্বরের মিলনের ফলে ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে যে তরঙ্গ উঠেছিল, সেই তরঙ্গের সংকেত ধরা পড়েছে তাদের যন্ত্রে। ১৩০ কোটি বছর আগে আমাদের সূর্যের চেয়ে ২৯ গুণ বেশি পদার্থধারী একটি ব্ল্যাক হোল, সূর্যের চেয়ে ৩৬ গুণ বেশি পদার্থধারী একটি ব্ল্যাক হোল ঘিরে ঘুরপাক পরস্পরের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। পৃথিবী থেকে দেখা ব্রহ্মাণ্ডের দক্ষিণাংশের এই মহাজাগতিক ঘটনার শেষ সেকেন্ডের একটি ভগ্নাংশ ধরা পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা ও ওয়াশিংটনে রাখা যন্ত্রে। আর বাংলাদেশের মানুষদের জন্য গর্বের বিষয়, এই বিজ্ঞানী দলে ছিলেন বাংলাদেশের দুই কৃতী সন্তান তাদের একজন ড. দীপঙ্কর তালুকদার। ১৯৭৭ সালে দীপঙ্কর তালুকদারের জন্ম। তার বাবা প্রয়াত পরেশ তালুকদার। মা প্রয়াত পারুল রানী তালুকদার। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দীপঙ্কর ছোট। ১৯৯২ সালে বরগুনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৯৪ সালে বরগুনা সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে। সেখান থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হন। এরপর যুক্তরাজ্য থেকে পান কমনওয়েলথ বৃত্তি এ্যাডভান্সড ম্যাথমেটিকস। সেখানে উচ্চতর অধ্যয়ন করেছেন ক্যামব্রিজে (২০০৩)। এরপর কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক পান। সাড়া দেন ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়ার অংশ হিসেবে এক বছর কাটান জার্মানির হ্যানোভারের আলবার্ট আইনস্টাইন ইনস্টিটিউটে। সেখানে তার গবেষণার বিষয় ছিল, আকাশের স্থানীয় এ্যাস্ট্রো ফিজিক্যাল উৎসসমূহ থেকে কিভাবে দীর্ঘকাল মহাকর্ষ তরঙ্গ খোঁজা যায়। সেখান থেকে ফিরে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১২ সালে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি করেন। একই সঙ্গে কলেজ অব সায়েন্সের আউটস্ট্যান্ডিং গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট পুরস্কার পান। পিএইচডিতে দীপঙ্করের গবেষণার বিষয় ছিল, দুটি ব্ল্যাকহোল মিলিত হলে যে অশান্ত ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়, সেখান থেকে আসা বৃত্তায়িত মহাকর্ষ তরঙ্গের সংকেত কীভাবে শনাক্ত করা যাবে। ২০০৭ সাল থেকে দীপঙ্কর মহাকর্ষ তরঙ্গ গবেষণা শুরু করেন। লাইগো সায়েন্টিফিক কোলাবরেশনের সদস্য হন ২০০৮ সালে। বর্তমানে তিনি অরিগন বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইগো সায়েন্টিফিক কোলাবরেশনের হয়ে কাজ করছেন। লাইগো সায়েন্টিফিক কোলাবরেশনের সদস্য হন ২০০৮ সালে। বর্তমানে তিনি অরিগন বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইগো সায়েন্টিফিক কোলাবরেশনের হয়ে কাজ করছেন। যখন তিনি প্রথম সেখানে যোগ দেন, ওই কোলাবরেশনে তখন ৪০০ বিজ্ঞানী কাজ করতেন। এখন ১৫টি দেশের হাজারখানেক বিজ্ঞানী এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। সেই দলের একমাত্র বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. দীপঙ্কর। তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০০৯ সালে। ওই বছরই চট্টগ্রামের মেয়ে শম্পা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন। শম্পা বর্তমানে ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি করছেন। ছোটবেলা থেকেই দীপঙ্কর অদম্য মেধাবী আর পড়াশোনায় বরাবরই খুব মনোযোগী ছিলেন। দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা থেকে তিনি মেধা ও যোগ্যতা বলে আসীন হয়েছেন মহাকাশ গবেষণা সংস্থায়। বিশ্ব দরবারে যে কজন বিজ্ঞানী বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম।
×