ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তবে টার্মিনাল নির্মাণ কাজ দ্রুত না এগোলে ৩ বছরের মধ্যে সক্ষমতা হারাবে এ বন্দর

কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাফল্য

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাফল্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড করেছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। সদ্য সমাপ্ত বছরে দেশের সবচেয়ে বড় এ সমুদ্র বন্দরে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার টিইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্য) কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। ২০১৬ সালে এ বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে এক হাজার ৪৭টি জাহাজ যাতায়াত করে। ওই বছরে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২১৯ টিইউএস কন্টেনার হ্যান্ডেলিং হয়েছিল। ২০১৫ সালে জাহাজ যাতায়াত ও কন্টেনার হ্যান্ডেলিং উভয়ই বেড়েছে। ওই সময় ১ হাজার ১৯৩টি জাহাজ যাতায়াত এবং ২০ লাখ ২৪ হাজার ২০৭ টিইউএস কন্টেনার হ্যান্ডেলিং হয়। ২০১৬ সালে কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে ২৩ লাখ ৪৬ টিইউএস এ দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ২০১৬ সালের হিসাব থেকে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৩ টিইউএস; ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৫ টিইউএস; মার্চে ১ লাখ ৮৩ হাজার ১৪ টিইউএস; এপ্রিলে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৪ টিইউএস; মে মাসে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৯০ টিইউএস; জুনে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৮৮ টিইউএস; জুলাইতে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৫৪ টিইউএস; আগস্টে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫৮ টিইউএস; সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫২৯ টিইউএস; অক্টোবরে ১ লাখ ৪৩ হাজার ১ টিইউএস; নবেম্বরে ২ লাখ ১৭ হাজার ৫২৬ টিইউএস এবং ডিসেম্বর মাসে ২ লাখ ৭ হাজার ৫১৫ টিইউএস কন্টেনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, সদ্য সমাপ্ত বছরে চট্টগ্রাম বন্দর প্রাইম মুভার মালিকদের ধর্মঘট; লাইটারেজ জাহাজ মালিক শ্রমিকদের ধর্মঘট; কন্টেনার জট ও নির্ধারিত সময়ে পণ্য খালাস ব্যঘাত; লাইটারেজ জাহাজ সঙ্কট ইত্যাদি কারণে বন্দরের কাজ নানাভাবে ব্যাহত হয়। এরপরও কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। তবে বছরজুড়ে বন্দরের কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হলে সক্ষমতার চেয়েও বেশি কন্টেনার হ্যান্ডেলিং করা যেত। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম. খালিদ ইকবাল একটি অনলাইনকে বলেন, প্রতিবছর চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ে রেকর্ড করছে। যেটা আমাদের জন্য বড় একটি অর্জন। বন্দর নিয়ে মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টায় আছি। বন্দরের জন্য ৩০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই এর বাস্তব রূপ দেখা যাবে। তিনি আরও বলেন, বন্দরের কার্যক্রম আরও বেগবান করতে গত ৪ বছরে প্রায় ১৬০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বন্দরে এখনও ৩ হাজার লোকবলের ঘাটতি আছে; নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। বন্দরের কার্যপ্রক্রিয়া সহজ করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য নেদারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, গত বছরে ঘূর্ণিঝড় রেয়ানু, জাহাগ মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট, ঈদের ছুটি ইত্যাদি সময়ে বন্দরে জটের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সময়োচিত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে বন্দরের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। আগামী ১০ বছরে এখানে যে পরিমাণ আমদানি-রফতানি হবে- তা এ বন্দর দিয়ে হ্যান্ডেলিং সম্ভব হবে না উল্লেখ করে রিয়ার এ্যাডমিরাল এম. খালিদ ইকবাল বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট পেলেই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। এছাড়া বন্দরের কন্টেনার জট কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং (এইচপিসি)। এই পরিকল্পনার খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের চাহিদা হবে ২৬ লাখ ৪৬ হাজার টিইউএস। এর বিপরীতে বন্দরের সক্ষমতা থাকবে ২৩ লাখ ৮০ হাজার টিইউএস। অর্থাৎ আগামী ৩ বছরের মধ্যে সক্ষমতা হারাবে বন্দর। তবে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে বলে উল্লেখ করেছে এইচপিসি। আর ২০২৩ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনালের নির্মাণ শেষ হলে আগামী ৩০ বছর চাহিদা অনুযায়ী কন্টেনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে বলে মনে করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব টার্মিনাল নির্মাণের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে।
×