ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যানারি যাবে মার্চে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

ট্যানারি যাবে মার্চে

ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের ব্যাপারে ট্যানারি শিল্প মালিকরা যা করছেন, তা এক কথায় ক্ষমার অযোগ্য। এ ব্যাপারে শেষ সময়সীমা বেঁধে দেয়া ছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতেরও সর্বশেষ চূড়ান্ত নির্দেশ রয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, এরপর আর কোন অজুহাত কিংবা কোন অবস্থাতেই সময় বাড়ানো যাবে না। তবে দুঃখজনক হলো, একশ্রেণীর চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিক সরকার ও সর্বোচ্চ আদালতের এই চূড়ান্ত নির্দেশের প্রতি প্রায় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়েই যাচ্ছেন। হাজারীবাগে ছোট-বড় ১৫৪টি শিল্প ইউনিট রয়েছে, যেখানে কাঁচা চামড়া রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রক্রিয়াজাত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এর কোনটিতেই কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা ইটিপি নেই। ফলে এসব ট্যানারির যাবতীয় কঠিন ও তরল বর্জ্য গিয়ে পড়ে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে। এসব বর্জ্যে যা থাকে তা মানবদেহ, পশুপাখি সর্বোপরি প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে হাজারীবাগ ও এর চারপাশের ভয়াবহ পরিবেশ দূষণসহ জনস্বাস্থ্য হুমকিতে রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। তদুপরি প্রধানত হাজারীবাগের একক দূষণে রাজধানীর প্রাণ বুড়িগঙ্গা তার নাব্য হারিয়েছে অনেক আগেই। এই নদীতে এখন মৎস্য প্রজাতি তো দূরের কথা, এমনকি মশককুলও বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। ফলে জনসাধারণ, পরিবেশ সংগঠনসমূহ, সরকারসহ দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় সরকার। চামড়া শিল্প মালিকদের প্রায় অনড় অবস্থান ও শৈথিল্য প্রদর্শনের কারণে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয় ২০১৬-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উচ্চ আদালতও এ বিষয়ে জরিমানা নির্ধারণসহ চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছে। সেই মোতাবেক অর্ধশতাধিক ট্যানারি ইতোমধ্যে সাভারে স্থানান্তরের পর কাজ শুরু করলেও বাকিগুলোর কোন হেলদোল আছে বলে মনে হয় না। নানা টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণের ব্যাপারে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, এক মাস-দুই মাস সময় বেঁধে দিয়ে নয়, আমরা চাই পুরোপুরি স্থানান্তর। তবে সরকারের সঙ্গে ট্যানারি মালিকদের দুই সমিতির সঙ্গে বৈঠকের পর আগামী মার্চের মধ্যে পুরো ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্যানারি শিল্প মালিকদের দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত প্রায় সবই মেনে নিয়েছে। সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে জমি বরাদ্দসহ কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা ইটিপি স্থাপন করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণেরও কোন সমস্যা নেই। কিছু ট্যানারি সেখানে কাজ শুরুও করেছে। তবু বাকিরা কেন যেতে চাচ্ছেন না, তা বোধগম্য নয় অথচ সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পুরোপুরি চালু হলে অনেকটাই সহজসাধ্য হয়ে উঠবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার আরও সম্প্রসারণ করা। তবে কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে সাভারে। এই যেমন, সেখানে বর্জ্য শোধনাগারে লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। ফলে দূষিত লবণ পানি গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীতে। তবে অচিরেই সে সমস্যা সমাধান করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। সুতরাং কোন অবস্থাতেই আর টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ নয়। প্রয়োজনে চূড়ান্ত আলটিমেটাম দিয়ে হলেও হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প উচ্ছেদ করা জরুরী। তা না হলে রাজধানীর পরিবেশ দূষণসহ বাঁচানো যাবে না বুড়িগঙ্গাকে। এর পাশাপাশি সাভারে চামড়া শিল্প শ্রমিকদের পুনর্বাসনের কথাও ভাবতে হবে।
×