ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংসদ সদস্য খুন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

সংসদ সদস্য খুন

হঠাৎ করেই যেন রাজনৈতিক কিলিং শুরু হয়েছে। গাইবান্ধায় ও খুলনায় হত্যা ও হত্যা-প্রচেষ্টার ঘটনা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। নিজ বাসভবনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া রিভলবারের গুলিতে নিহত হয়েছেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি) এমপি নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায় তিনি তার বাসভবনের নিচতলার বৈঠকখানায় বসা ছিলেন। এ সময় তিন যুবক হেলমেট পরা অবস্থায় একটি মোটরসাইকেলে চড়ে বাসভবনের সামনে আসে। তাদের একজন সেখানে স্টার্ট দেয়া মোটরসাইকেলে বসে অপেক্ষা করছিল। বাকি দু’জন এমপির সঙ্গে কথা বলার অজুহাতে ঘরের ভেতরে ঢুকে। লিটনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। এই ধরনের মর্মান্তিক হত্যাকা-ে গোটা রাজনৈতিক অঙ্গন শঙ্কিত। একজন জনপ্রতিনিধি এভাবে সন্ত্রাসী হত্যাকা-ের শিকার হবেন তা প্রত্যাশিত নয়। নানা কারণে গাইবান্ধার এই সুন্দরগঞ্জ আলোচিত। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে এলাকাটি এক সময় সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছিল। বিশেষ করে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির ভিন্নমতের রাজনীতি, সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ জ্বালাও-পোড়াওয়ের নামে যে তা-ব চালায় তার ধারাবাহিকতা চলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরও। এমপি লিটন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সে তা-ব মোকাবেলা করেন। তারপর থেকে এলাকায় এক ধরনের শান্ত পরিবেশই বিরাজ করছিল। এই হত্যার মধ্য দিয়ে এলাকাটি আবারও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি মহল দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের হত্যার রাজনীতির পথ ধরেই সংসদ সদস্য লিটনকে তারা হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি এটি টার্গেট কিলিং। একই দিন খুলনায় স্থানীয় এক নেতাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মারা যান এক গৃহবধূ পরিকল্পিত খুনের ধারাবাহিকতায় সর্বসাম্প্রতিক শিকার হলেন এমপি লিটন। গত কয়েক মাস ধরে এ ধরনের হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন মূলত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ভিন্নমতাবলম্বী, বিদেশী নাগরিক বা ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসী লোকজন। আগের হত্যাকা-ের সঙ্গে ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্ঠী জড়িত রয়েছে সাধারণভাবে ধারণা করা হতো। কোন কোন হত্যাকা-ে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের কাছ থেকে ‘দায় স্বীকারের’ ঘটনাও ঘটে। তবে এমপি লিটন হত্যাকা-ে কোন মহল জড়িত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হঠাৎ করেই যেন দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চলছে। কোন কোন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতার সুযোগে সন্ত্রাসী চক্র মাথাচাড়া দেয়। সুন্দরগঞ্জও হতে পারে তার একটি। খুনী চক্রের এই বেপরোয়াভাব দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্মূল করাই হবে সঙ্গত। এসব হত্যাকা- যেন থামানো যায় তেমনি খুনীদের চিহ্নিত ও বিচারের মুখোমুখি করা যায় সে পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাই চায় প্রশাসনের শিথিলতা নয়, বরং প্রশাসন নিয়ে সব বিভ্রান্তি দূর হোক, এমপি লিটনের খুনীচক্র চিহ্নিত ও বিচারের মুখোমুখি হোক।
×