ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই ৬৪ জেলায় পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করবে

বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রতিযোগিতা কমিশনে লোকবল নিয়োগ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রতিযোগিতা কমিশনে লোকবল নিয়োগ

এম শাহজাহান ॥ প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর করতে নতুন বছরে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থ পুরোপুরি নিশ্চিত করতে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর করবে সরকার। এর পরই দেশের ৬৪টি জেলায় কমিশন পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করবে। এই আইন বাস্তবায়ন হলে পণ্য ও সেবা খাতে একচেটিয়া ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি বন্ধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, চার বছর আগে প্রতিযোগিতা আইন করা হলেও এতদিন তা কার্যকর হতে পারেনি। গত বছরের ১৯ এপ্রিল কমিশনের প্রধান চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ইকবাল খান চৌধুরীকে। এর পরে গত ২২ মে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপসচিব পদমর্যাদার একজন ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য এখন পর্যন্ত কোন লোকবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর করতে ইতোমধ্যে কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যানসহ আরও দুই সদস্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন এই কমিশনের অধীনে দেড় শতাধিক লোকবল নিয়োগ দেবে সরকার। তিনি বলেন, আইনটি কার্যকর করতে সরকার আন্তরিক। আইনটি কার্যকর করা গেলে একচেটিয়া ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। শুধু তাই নয়, যারা পণ্য ও সেবার মূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট করেন তাদের কারসাজি বন্ধ হবে। তাই আইনটি নতুন বছর থেকে সারাদেশে কার্যকর করা হবে। জানা গেছে, বাজার ব্যবস্থায় সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে চার বছর আগে ২০১২ সালে প্রণয়ন করা হয় প্রতিযোগিতা আইন। এ আইন বাস্তবায়নের জন্য ২০১৩ সালে গঠন করা হয় প্রতিযোগিতা কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করেনি ওই কমিশন। শুধু নামেই আছে। কমিশনে কয়েক কর্মকর্তা থাকলেও বাস্তবে এক চেয়ার ও এক টেবিলে চলছে অফিস। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিযোগিতা কমিশন না থাকায় সাধারণ মানুষকে সেবা ও পণ্যের অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত একচেটিয়া বা কয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থ নিয়ে কাজ করে কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মনে করছে, এ কারণে ঠকছেন ভোক্তা। গত রমজানে বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য ক্রেতাকে বাড়তি মূল্য গুনতে হয়েছে। গত বছর লবণ, চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজার বিশেষ কয়েক ব্যবসায়ীর দখলে থাকায় সারাবছর বাজার অস্থির ছিল। অথচ কমিশন কার্যকর থাকলে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হতো। নিয়ন্ত্রণে থাকত নিত্যপণ্যের দাম। ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী পণ্যের দাম যেমন সরকার বেঁধে দিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে সরকারকে পণ্যবাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা জরুরী। জানা গেছে, ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৭টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই ১৭টি পণ্যের একটি হলো মসলা জাতীয় পণ্য রসুন। গত কয়েক মাস ধরে কারণ ছাড়াই রসুনের দাম বাড়ছে। এছাড়া লবণ আমদানি করা হলেও তার সুফল পায়নি ভোক্তা। আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম বেশি নিচ্ছে। বর্তমান প্রতিকেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটাই বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকার কারণে নিত্যপণ্যের দরদাম নিয়ে এ ধরনের কারসাজি হচ্ছে। এজন্য দ্রব্যমূল নিয়ে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। দেশে যে প্রতিযোগিতা আইন রয়েছে সেটি এখন বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক চিহ্নিত ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হচ্ছে-পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচি, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পামতেল, চিনি, খাদ্য ও লবণ। এই ১৭টি পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি করা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও নিবন্ধন বাতিল এবং পণ্য বাজেয়াফত করার ঘোষণা রয়েছে। শুধু তাই নয়, সাবধানতা অবলম্বনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিপণনের সকল পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট আইন, আদেশ এবং বিধি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসবের কিছুই মানছে না। সময়, সুযোগ ও চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে হরহামেশা বাড়ানো হচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম।
×