ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষ মানুষের জন্য

নিহত সাংবাদিকের ছেলে এখন আর রিক্সা চালান না, সচ্ছলতা ফিরেছে পরিবারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

নিহত সাংবাদিকের ছেলে এখন আর রিক্সা চালান না, সচ্ছলতা ফিরেছে পরিবারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সাংবাদিকের ছেলে রিপন এখন আর রিক্সাচালক নন। সিঙ্গাপুরে হুন্দাই কোম্পানিতে চাকরি করছেন। মাসে মাসে টাকা পাঠাচ্ছেন মাকে। পরিবারের দারিদ্র্য ঘুচেছে। ভাঙ্গা ঘরের স্থানে নির্মিত হচ্ছে পাকা দালান। রিপন ও তার পরিবারের সবাই এখন বেশ ভাল আছে। ২০০১ সালের ১৭ এপ্রিল। খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক অনির্বাণ পত্রিকার ডুমুরিয়া প্রতিনিধি নহর আলীকে নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সঙ্গত কারণেই অসহায় হয়ে পড়ে নহর আলীর পরিবার। দুর্ভোগ নেমে আসে পরিবারের ওপর। নহর আলীর স্ত্রী আসমানী বেগম দুই ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন ও মেহেদী হাসান রানা এবং দুই মেয়ে রেহেনা পারভীন ও হীরা খাতুনকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন। বড় ছেলে রিপন লেখাপড়া ছেড়ে পা রাখেন রিক্সার প্যাডেলে। কিছু দিন খুলনায়, পরে ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। বিষয়টি এক সংবাদ কর্মীর নজরে এলে রিপনকে নিয়ে ২০১৪ সালের নবেম্বরে একটি জাতীয় পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হয়। ‘নিহত সাংবাদিকের ছেলে ঢাকায় রিক্সাচালক’ শিরোনামে প্রকাশিত রিাপোর্টটি সে সময় বেশ আলোচিত হয়। কয়েক সাংবাদিক মিলে তখন তার কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হয়। এগিয়ে আসেন শ্রম ও অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তার জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ বিনা খরচে রিপনকে সিঙ্গাপুরে পাঠায়। সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে রিপনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত ‘বাংলার কণ্ঠ’ নামে একটি বাংলা পত্রিকায় রিপনের সাক্ষাতকার ছাপা হয়। এতে রিপন জানান, তার বাবাকে হত্যার পর একজন ছাড়া খুলনার সাংবাদিকরাও ভয়ে তাদের খোঁজ নিতেন না। খোঁজ নিতেন খুলনা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি বেলাল হোসাইন। তিনিও পরে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ দেন। সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে এখন তিনি এবং তার পরিবার বেশ ভাল আছেন। নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। গত প্রায় এক বছরে আনুষঙ্গিক খরচের পর সাড়ে চার লক্ষাধিক টাকা দেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন রিপন। সেই টাকায় তাদের ডুমুরিয়ার বাড়িতে তিন রুমের ইটের পাকা ঘর নির্মাণ হচ্ছে। অভাব-অনটনে দিন কাটানো সাংবাদিক পরিবারের সবার মুখে এখন হাসি ফুটেছে। রিপন বাংলার কণ্ঠ পত্রিকাকে আরও জানান, তার বাবার মৃত্যুর পর চরম দারিদ্র্যতায় নিমজ্জিত পরিবারের সদস্যদের যারা এড়িয়ে চলত আজ তারাই এগিয়ে এসে তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ভালমন্দ শেয়ার করছেন। হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত অন্যান্য বাংলাদেশী জানান, কর্মঠ ও নিয়মনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কোম্পানির কাছে রিপন খুবই সমাদৃত। পরবর্তী বছরের জন্যও তার কাজের চুক্তির মেয়াদও নবায়ন করা হচ্ছে। রিপনের মা আসমানী বেগম টেলিফোনে জনকণ্ঠকে জানান, হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ তার ছেলেকে বিনা পয়সায় সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার পরিবারের সদস্যদের জন্য কাপড়চোপড়ও কিনে দিয়েছেন। এখন ছেলে সিঙ্গাপুর থেকে নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছে। তারা খুব ভাল আছেন। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ জানান, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি রিপনকে উচ্চতর কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। মানুষ যখন কোথাও সহযোগিতা না পায় তখন গণমাধ্যম তাদের পাশে দাঁড়ায়। অসহায় পরিবারের একজন রিক্সা চালিয়ে জীবনযাপন করবে এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজে যাদের সামর্থ্য আছে সবারই উচিত এমন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
×