ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় প্রথম টি২০

এবার টি২০ চ্যালেঞ্জের মুখে মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২ জানুয়ারি ২০১৭

এবার টি২০ চ্যালেঞ্জের মুখে মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ ॥ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এবার সামনে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ। এই স্বল্প ওভারের মিশনেই এখন নামার পালা মাশরাফিবাহিনীর। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় প্রথম টি২০ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের সময় পার্থক্য যেহেতু ৭ ঘণ্টা, নিউজিল্যান্ড এগিয়ে; তাই ম্যাচটি রাতের ম্যাচ হয়ে যাচ্ছে। ম্যাচটি নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে রবিবারই পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ দল। তবে দলের ক্রিকেটাররা এদিন অনুশীলন করেননি। নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে নেলসন থেকে নেপিয়ার ভ্রমণ এবং বিশ্রাম নিয়েই কাটিয়েছেন দলের ক্রিকেটাররা। আজ আবার অনুশীলনে নামবে দল। একদিন অনুশীলন করে টি২০ সিরিজে খেলতে নামবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ও ৮ জানুয়ারি তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ম্যাচ দুটি মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে অনুষ্ঠিত হবে। পুরনো বছরের শেষদিনে বড় ধরনের ধাক্কাই খেয়েছে বাংলাদেশ দল। গত আড়াই বছর হোয়াইটওয়াশ হওয়া যেন ভুলেই গিয়েছিল। এই সময় সাফল্যের চূড়ায় বাস করেছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের শেষদিনে এসে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলো। যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলকে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার স্বাদ দিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৭ রানে হারের পর তৃতীয় ওয়ানডেতে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারল। শুধু তাই নয় নতুন বছরটি শুরু হলো সেই হারের ক্ষত নিয়েই। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ড শক্তিশালী দল। খুবই শক্তিশালী। উপমহাদেশের শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা নিউজিল্যান্ডে গিয়ে হাবুডুবু খায়। তাই বলে নিউজিল্যান্ড অজেয় দল নয়। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা হয়ত সিরিজে হেরেছে। তবে সিরিজের সব ম্যাচ হারেনি। বাংলাদেশ দলতো একটি ম্যাচও জিততে পারল না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারল না। প্রায় সাত বছর পর নিউজিল্যান্ডে খেলতে গিয়ে হাবুডুবু খেল। যেমনটি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এরআগে দুটি সিরিজে হয়েছিল, তেমনটিই হলো। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৪ সালের আগস্টে যে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ, আড়াই বছর পর সেই হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদ আবার মিলল। এবার নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ হলেও ভক্ত সমর্থকদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা দিতে ভুল করেননি জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভেরিফাইড পেইজে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, তাসকিন আহমেদ ও সাব্বির রহমান রুম্মন। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিক প্রথম ওয়ানডেতে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে পড়েন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলতে পারেননি। দল তার অভাবে ভুগেছে। টি২০ সিরিজও খেলতে পারবেন না। টেস্ট সিরিজে ফেরার আশা আছে। মুশফিক শুভেচ্ছা বার্তায় লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ২০১৭ সালের প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার শুভাকাক্সক্ষীদের আমাকে ভালবাসার জন্য। দিন শেষে আমরা সবাই মানুষ, সবাই ভুল করি। এখান থেকেই শিখতে হবে এবং সংশোধন করতে হবে। নতুন বছরে এটাই আমার প্রত্যাশা আপনারা আমার ও দলের জন্য দোয়া করবেন যাতে আমরা সামনে উজ্জ্বল দিন পাই। তবে আসছে বছরে সবাই ভাল মানুষ হয়ে উঠুক এটাই আশাকরি। সবাইকে নতুন বছরের অগ্রিম শুভেচ্ছা।’ সাব্বির লিখেছেন, ‘আশা করছি সবার বছরটা ভালর থেকেও ভাল কাটুক। মুখে হাসি থাকুক। শুভ নববর্ষ ২০১৭।’ পেসার তাসকিন লিখেছেন, ‘শুভ নববর্ষ। নতুন বছরে অনেক অনেক দোয়া আশা করছি।’ নতুন বছরের শুভেচ্ছা দিলেন ক্রিকেটাররা। তবে পুরনো বছরের শেষদিনটাতেও যদি জয়ের দেখা মিলত, তাহলে নতুন বছরের প্রথম দিনটি হয়ত আনন্দে ভরে যেত। কিন্তু সেটি হয়নি। উল্টো দল নিয়ে চিরচেনা বিশ্লেষণ চলছে। একাদশে বদলগুলো কারও কাছে ঠিক মনে হয়নি। যেন পরীক্ষার সিরিজে গেছে বাংলাদেশ। এমন ভাবনাই হচ্ছে। তবে ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা যে ঠিক ছিল না, সেটিও সবার দৃষ্টিতে এসেছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই যেমন বলেছিলেন, ‘এক-দুইটা উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে মানসিকভাবে থিতু হয়ে যে ব্যাট করতে হবে, সেটা করতে পারিনি। ওরা (নিউজিল্যান্ড) যে মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করেছে, আমরা সেই মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতে পারিনি। আমার মনে হয় স্কিলের চেয়ে মানসিকভাবে আমরা ওই জায়গায় যেতে পারিনি। আমি মনে করি, স্কিলের দিক থেকে আমরা ওদের মতোই। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্যই আরও বড় কিছু আশাকরি। বল যখন নতুন থাকে তখন সুইং করে। ওই সময়টা যখন পার হয়ে যাবে তখন যে কেউ আশা করবে যে ওরা বড় ইনিংস খেলবে। টপঅর্ডারে রান করার পর মিডল অর্ডারের একটা বড় দায়িত্ব থাকে সেটাকে টেনে সামনে নিয়ে যাওয়ার। তারপর হয়তো বা সাত/আট নম্বর ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব থাকে রানটাকে আরেকটু বড় করার। তামিম-ইমরুল যেভাবে খেলছিল তাতে ক্ষেত্রটা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মিডল অর্ডার যেভাবে ধসে পড়বে তা কেউ ভাবেনি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের এখন মনোযোগ দিতে হবে, সুযোগ তৈরি হলে তা যে কোনভাবে কাজে লাগানর দিকে। সুযোগ হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না। ব্যক্তিগত কিছু পারফর্মেন্স হয়েছে। হয়তো প্রথম ম্যাচে সাকিব ভাল খেলেছে। তামিম তৃতীয় ওয়ানডেতে রান করল। ইমরুল আগের ম্যাচটায় রান পেয়েছে, তৃতীয় ওয়ানডেতেও ভাল করল। যেটা হলে দলের জন্য কার্যকর হতে পারত বা ওদের দলকে ভোগাতে পারত, তেমন পারফর্মেন্স হয়নি। যেটা হয়ত আমরা আমাদের ঘরের কন্ডিশনে করে আসছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্যই আরও বড় কিছু আশাকরি। তামিম-ইমরুল বা গত ম্যাচে সাব্বির-ইমরুল যখন ব্যাট করছিল, তখন কিন্তু ভাল অবস্থায় ছিল দল। সেখান থেকে এভাবে ধস নামা অবশ্যই হতাশার। বিশেষ করে মুশফিককে হারানোর পর আরও বেশি একতাবদ্ধ পারফর্মেন্স দরকার ছিল।’ সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে পারফর্মেন্স মিলেনি। আর তাই জয়ও ধরা দেয়নি। বাংলাদেশ দলতো ওয়ানডেতে আসলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি। এবার টি২০ সিরিজের মিশনে নামার পালা মাশরাফিবাহিনীর।
×