ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌর বিদ্যুতে প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২ জানুয়ারি ২০১৭

সৌর বিদ্যুতে প্রণোদনা

প্রতিমাসে প্রায় ৮০ হাজার পরিবারের ঘরে সোলার প্যানেল বসানোর কাজটি বর্তমানে চলমান। যেখানে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি নেই সেখানে গৃহস্থ ও কিষান বাড়ির ঘরের চালার ওপরে অথবা ইটের বাড়ির ঘরের ছাদে সূর্যের আলো ধরে রাখার প্যানেল স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অনেক আবাদী জমির ধারে ঘর বানিয়ে প্যানেল বসিয়ে সৌর বিদ্যুতে সেচ কাজও চলছে। সব মিলিয়ে সৌর বিদ্যুতে যে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এই কাজ আরও এগিয়ে নেয়া চাই, একথা আমরা এর আগেও বলেছি। সেই সঙ্গে এ খাতে প্রণোদনার ব্যবস্থা নেয়াও জরুরী, সেটাও আমরা বারবার বলে আসছি। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে বিগত সাত বছরে দেশে বিদ্যুতের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ঢাকার লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। দেশের বহু জেলায় গ্রাম পর্যায়ে নতুন করে বিদ্যুত বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চোখে পড়ার মতোই বিদ্যুত সেক্টরের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে জানা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ বিদ্যুত-সুবিধার আওতায় রয়েছে। কিন্তু সৌর বিদ্যুতেও যে দেশ এগিয়ে চলেছে, বলা যায় নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে, সেটা জানছে না বহু মানুষ। বিদ্যুত সংযোগের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকায় ঢাকার গ্রাহক সোলার প্যানেল বসালেও বিদ্যুত সংযোগ পাওয়ার পর সেই সৌর প্যানেল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অব্যবহৃত থাকছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসির প্রাথমিক জরিপে বেরিয়ে এসেছে বাসাবাড়ির ছাদে বিদ্যুত সংযোগের জন্য বসানো সোলার প্যানেলের ৭০ শতাংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এটি মারাত্মক অপচয়। এই অপচয় থেকে বেরিয়ে আসার পথও মিলেছে, সরকার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন সোলার প্যানেলকে অফ গ্রিড থেকে অন গ্রিডে রূপান্তর করা হবে। এজন্য গ্রাহকের আঙ্গিনায় ইনভারটার বসিয়ে দেয়ারও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে সৌর প্যানেলের বিদ্যুত গ্রিডের বিদ্যুতের সঙ্গে একই সঙ্গে ব্যবহার উপযোগী হবে। গ্রাহক সূর্যের আলো থাকা সাপেক্ষে গ্রিডের বিদ্যুতের সঙ্গে সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করতে পারবেন। নিজস্ব প্রয়োজন না থাকলে সৌর বিদ্যুত গ্রিডে গিয়ে যোগ হবে। এতে গ্রাহক উল্টো অর্থ পাবেন। অর্থাৎ ডিপিডিসির কাছে ওই বিদ্যুত স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিক্রি হয়ে যাবে। নিজের ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুত গ্রিডে দিয়ে যাতে গ্রাহক অর্থ পায়Ñ এজন্য একটি আইন করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে ইতোমধ্যে জমাও দেয়া হয়েছে। সৌর বিদ্যুতে প্রণোদনা এখন সময়ের দাবি। সোলার প্যানেল বসানোর সরঞ্জাম এবং স্থাপনা ব্যয় এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এই খাতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্যও বিজ্ঞানীদের উৎসাহী করে তোলা চাই। দেশ উপযোগী সাশ্রয়ী মূল্যে সোলার বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব হলে সেটি হবে বড় ধরনের সাফল্য। সে কারণে সম্ভাব্য খাতগুলোয় প্রণোদনা দেয়া দরকার। এই বিনিয়োগ থেকে স্থায়ীভাবে প্রাপ্তি ঘটবে। ব্যক্তি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন মিটিয়ে এই সৌর বিদ্যুত গণমানুষের ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা যাবে। তাই সবদিক বিবেচনা করে মানুষের মধ্যে সৌর বিদ্যুত সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হলে তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
×