ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বই বিতরণ

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২ জানুয়ারি ২০১৭

বই বিতরণ

বইয়ের চাইতে মূল্যবান আর কী হতে পারে, এর চেয়ে ভাল উপহারও আর হয় না। যথারীতি এ বছরও প্রথম দিনই দেশের স্কুলে স্কুলে নতুন পাঠ্যবই পৌঁছানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিন ‘বই উৎসব’ করার রেওয়াজটি চালু থাকলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করে বলেছেন, ‘২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা ২শ’ ৪৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছি।’ বিভিন্ন সূচকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও একটি ক্ষেত্রে অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তা হচ্ছে বিনা মূল্যের বই বিতরণ। প্রতিবছর বাংলাদেশ তাদের নিজেদের করা রেকর্ড নিজেরাই ভাঙছে। প্রতিবছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। আর বইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। সারাবিশ্ব যা কখনও ভাবতেও পারেনি বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে। সাত বছর ধরেই একই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হাতেও বিনামূল্যের বই তুলে দেয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ওরাও ও গারো জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় প্রস্তুত হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই ও শিক্ষা উপকরণ। এসবই অগ্রগতির উদাহরণ। তবে পাশাপাশি আমাদের এই কথাটিও বলতে হবে যে প্রকাশনা সৌকর্য ও তার উচ্চমান যেন রক্ষা করা হয়। শিশুদের জন্য টেকসই ভাল কাগজে, মানসম্মত ছাপা ও বাঁধাইয়ে বই উপহার দেয়া হলে তারা খুব খুশি হবে। যুগোপযোগী এবং কালোত্তীর্ণ বিষয় আশয় নিয়ে আরও ভাল লেখা পাঠ্যবইয়ে স্থান দেয়া জরুরী। নতুন বছরের প্রথম দিন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফলতা দেখিয়েছে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকরাও এতে আনন্দিত। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য জ্ঞান তথা শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য যে কয়টি শর্ত পূরণ জরুরী তার ভেতর রয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠে উদ্বুদ্ধ করা এবং সময়মতো তাদের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে তাদের উদ্দীপনা ধরে রাখা। ধারাবাহিকভাবে বছরের প্রথম দিন তাদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়ার মতো দুরূহ কাজটি এবারও সুসম্পন্ন হওয়ার সংবাদে মানুষ স্বস্তিবোধ করছে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত কয়েকটি ক্যাটাগরির কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অর্ধেক নতুন ও অর্ধেক পুরনো পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়া হতো। তবে এসব বই সময়মতো শিক্ষার্থীরা পেত না। সব বই পেতে মার্চ-এপ্রিল পার হয়ে যেত। এতে ক্লাস শুরু হতেও দেরি হতো। এ ছাড়া প্রতিবারই অসাধু প্রেস মালিকদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ত পাঠ্যবই ছাপার কাজ। সময়মতো বই না পাওয়ায় এবং উচ্চদরে বাজার থেকে বই কিনতে না পেরে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে ঝরে পড়ত। পরবর্তীকালে ঝরে পড়া রোধ, শতভাগ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনা, দরিদ্র-নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার আওতায় আনতে মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যবই নিশ্চিত করতে বছরের শুরুতে ১ জানুয়ারি ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ পালনের উদ্যোগ নেয়। এতে সুফল মিলেছে। কমেছে ঝরে পড়ার হার। বেড়েছে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের অন্তর্ভুক্তির হার। ‘নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে ফুলের মতো ফুটব, বর্ণমালার গরব নিয়ে আকাশজুড়ে উঠব’Ñ এমন সেøাগান উদ্দীপনামূলক। তবে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে শুধু বই তুলে দিয়ে চূড়ান্ত আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। টেক্সটের ভুলত্রুটি থেকে শতভাগ মুক্ত থাকা চাই। সর্বোপরি শিশুরা পাঠকক্ষে এসব পাঠ্যবই যথাযথভাবে শিক্ষণের সুযোগ পেল কি-না সেটা মনিটরিং করা দরকার। দক্ষ শিক্ষকের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
×