ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাকারিয়া স্বপন

চিন্তার নতুন দিগন্ত!

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২ জানুয়ারি ২০১৭

চিন্তার নতুন দিগন্ত!

ড. স্টিফেন কোভের লেখা ‘দি সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি ইফেক্টিভ পিপল’ বইটি কেবল যে আমাদের কিছু অভ্যাস শিখিয়েই ছেড়ে দিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর ভেতরে রয়েছে গভীর এক দর্শন, যা আপনার ভেতরকে গুছিয়ে দেবে। আমি আমার এই পরিণত বয়সে এসে বুঝতে পেরেছি, আমাদের শিশু যেভাবে বেড়ে ওঠে তার সবচেয়ে বড় ফারাকটি হলো দর্শন। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের যেভাবে গণিত শিখাই, অঙ্কের মারপ্যাঁচ শিখাই, মানুষকে ঠকানোর পদ্ধতি শিখাই, সেভাবে তার জীবনের দর্শন শিখাই না। সেটা যেমন স্কুলে করি না, কলেজে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে না, আর বাসায় তো অবশ্যই না। আমাদের সেই সময় কোথায়! এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে আমাদের সমাজে। তার কিছু ফলাফল আমরা পাচ্ছি। যেমন, বর্তমানে আমাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা আছে- দ্রুত ধনী হয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। সেটা যে কোন উপায়েই হোক না কেন- ধনী আমাকে হতেই হবে। অনেকেই মনে করছে এই দ্রুত ধনী হয়ে যাওয়ার নাম হলো সফলতা। বাংলাদেশে অবশ্য বেশিরভাগ মানুষই সাফল্যের অর্থ বুঝে থাকে সে কতটা ধনী হতে পারল, তার কতটা সম্পদ তৈরি হলো, তা দিয়ে। আর মিডিয়াগুলোও ধনী মানুষের গল্প শোনাতে থাকে সফল মানুষের তালিকায়। আমরা সবাই ভাবতে থাকি, ধনী হওয়ার অপর নাম সাফল্য। কিন্তু সমাজে আমার আর কোন ভূমিকা আছে কি না, তা হয়ত পরোয়া করি না। সমাজ তো আমাদের নয়, সমাজ হলো সরকারের। যা করবে, সরকার করবে। এটাই আমাদের মানসিকতা এবং এর ফলে বর্তমান আমাদের চারপাশে এক চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ রেস্টলেস হয়ে উঠেছে। আমাদের জীবনের সবকিছুর একটি ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি থাকে, পরিবর্তন থাকে। আমরা যারা সেই ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনকে পাশ কাটিয়ে হুট করেই ধনী হয়ে যাচ্ছি, তখন তার অন্য মানসিক উন্নয়নগুলো হয়ে ওঠে না। যেমন, আমাদের অনেকেই হয়ত কোনরকম কাজ না করে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে গিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে তাকে সফল মনে হলেও পরবর্তী সময়ে তাকে ঝামেলায় পড়তে হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই সম্পদ ধরে রাখা যায় না। পুরো জীবন ধরেই আমাদের ক্রমানুসারে বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে যেতে হয়। এটাই আমাদের বেড়ে ওঠা এবং বৃদ্ধি পাওয়া। একটি শিশু উল্টাতে শেখে, বসতে শেখে, হামাগুড়ি দিতে শেখে এবং তারপর হাঁটতে শেখে, দৌড়াতে শেখে। প্রতিটি ধাপই তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি ধাপই কিছু সময় নিয়ে নেয়। এর থেকে কোন একটি ধাপকেও কিন্তু বাদ দেয়া যাবে না। জীবনের প্রতিটি স্তরের জন্য এটা প্রযোজ্য, আমাদের সকল উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য- আপনি গিটার বাজাতে শেখেন, ক্রিকেট খেলা শেখেন, কিংবা ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন দক্ষতা শেখেন। এটা প্রতিটি মানুষের জন্য প্রযোজ্য, প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, পরিবারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। আমাদের বেশিরভাগ মানুষই এই পরিবর্তনের ধাপগুলোকে শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে দেখতে অভ্যস্ত। আমরা যেভাবে বেড়ে উঠি, সেটা আমরা চোখে দেখতে পাই; তাই এটাকে সহজেই আমরা মেলাতে পারি। কিন্তু আমরা যা দেখতে পাই না সেটার কী হবে? আমাদের মানসিক উন্নয়ন? মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন? এমনকি নিজেদের চরিত্র গঠন? এর কিছুই তো আমরা চোখে দেখতে পাই না। কিন্তু এখানেও কি একই সূত্র খাটবে? অবশ্যই খাটবে এবং এখানে যেহেতু বিষয়টি চোখে দেয়া যায় না, তাই এটা আরও বেশি কঠিন এবং জটিল। এর ধাপগুলো পরিমাপ করা কঠিন। তাই আপনি বলতে পারবেন না যে, আপনার শিশুটির এই মানিসক উন্নয়ন সঠিকভাবে হয়েছে কি না। সে তার প্রতিটি ধাপ সফলভাবে উতরে এসেছে কি না এবং আমাদের ভেতর খুব সহজাত একটি প্রবৃত্তি হলো শর্টকাট খোঁজা- কয়েকটি ধাপ একসঙ্গে পার হয়ে দ্রুত উপরে উঠে যাওয়া এবং আমরা এভাবে ধাপ পার হয়েও একই রকম ফলাফল চাই। সেটা কি হওয়ার কথা? আমরা যদি উন্নয়নের প্রাকৃতিক এই ধাপগুলোকে দ্রুত টপকে যাই, তাহলে কী হতে পারে কেউ চিন্তা করে দেখেছেন কখনও? আপনি সবেমাত্র টেনিস খেলা শিখছেন; আর আপনি সবাইকে চমকে দিতে কয়েকটি ধাপ টপকে গেলেন প্রফেশনালদের সঙ্গে খেলতে? ফলাফল কী হবে? আপনি যতই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন না কেন, আপনাকে গো-হারা হারতে হবে। একইভাবে আপনি ভাব ধরলেন যে, আপনি ভাল গিটার বাজাতে পারেন। তারপর আপনার বন্ধুরা একদিন জোর করে তুলে দিল স্টেজে। কী হবে ফলাফল? উত্তরগুলো আমরা জানি। আপনি যে ধাপে যেটুকু সময় দেয়ার প্রয়োজন ছিল, সেটা করেননি। আপনার সঠিক উন্নয়ন হয়নি। এটা প্রকৃতির নিয়মের বাইরে এবং প্রকৃতির এই নিয়ম ভাংলে আপনি শুধু বিপদেই পড়তে পারেন এবং একটা সময়ে আপনি হতাশ হয়ে যাবেন। এই পৃথিবীর যে কোন বিষয়ে আপনি যদি ১০-এর ভেতর ২ পান, আর যদি ৫ বা ৬-এ যেতে চান, তাহলে আপনাকে ৩ এবং ৪ হয়েই যেতে হবে। হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় প্রথম পদক্ষেপটি থেকে এবং আপনি একটি একটি পা ফেলে যাত্রায় এগিয়ে যাবেন। আপনি যদি নিজের শিক্ষককে জানতে না দেন আপনার গ্রেড কত, আপনি ঠিক কোন্ ধাপে আছেন- আপনি কখনই বিকশিত হতে শিখতে পারবেন না। আপনি দীর্ঘ সময় ধরে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে চলতে পারবেন না। একটা সময়ে গিয়ে আপনি ধরা পড়ে যাবেনই। আমি কী জানি না, এটা বুঝতে পারাটাই শিক্ষার মূল ধাপ। আপনি যখন বুঝতে পারবেন আপনি কোন্ বিষয়টি জানেন না, তখনই কেবল সেটা শিখতে পারবেন। আপনি যদি ধরেই নেন সব জানেন- তাহলে আর আপনার শেখাটা হলো না। নিজেই ঠকে গেলেন। আমাদের দেশে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আছে লজ্জায় কিছু জিজ্ঞেস করে না। সে যে কিছু একটা পারে না সেটা সে মেনে নিতে চায় না। অথচ সে এসেছে শিখতে। তার তো সব জানার কথা নয়। এই লজ্জা তাকে শিক্ষা থেকে দূরে ঠেলে দেয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই প্রথমে মানতে হবে সে এটা জানে না; সে এখানে জানতে এসেছে। আমাদের বাচ্চারা ভয় পায়- পরিবার থেকে, স্কুল থেকে, শিক্ষকদের কাছ থেকে। তার অজ্ঞানতাকে সবাই তামাশা করতে পারে- এই ভয়ে সে আর মুখ খোলে না। কিন্তু যারা এটাকে সহজভাবে নিতে পারে এবং প্রতিটি পদে শিখে ফেলে, তারাই আসলে এগিয়ে যায়। জীবনযুদ্ধে তারাই বিজয়ী হয়। সমস্যাটাকে যেভাবে দেখছি সেটাই সমস্যা যখন কোন ব্যক্তির কিংবা পরিবারে নয়ত প্রতিষ্ঠানের ভাল কিছু ঘটতে থাকে, তখন আশপাশের অসংখ্য মানুষের ভেতর এক ধরনের ঔৎসুক্য তৈরি হয়। যদিও এই ভাল কিছুর পেছনে হয়ত কঠিন কোন নীতি বা পরিশ্রম রয়েছে; কিন্তু মানুষ এর ভেতর এক ধরনের গোপন রহস্যের গন্ধ পায়। তারা এসে এই সফলতার প্রশংসা করে। কিন্তু পরক্ষণেই জিজ্ঞেস করে, এই সাফল্যের গোপন রহস্যটা কী? তারা জানতে চায় ‘আপনি এটা কিভাবে করলেন? আমাকে একটু টেকনিকটা শিখিয়ে দিন।’ তারা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যে কথাটি বলতে চায় তা হলো, ‘আমাকে কিছু কুইকফিক্স পরামর্শ দিন যার মাধ্যমে আমি দ্রুত আপনার মতো হয়ে যেতে পারি।’ এরা তাদের এই চাহিদা মেটাতে কিছু মানুষকে পেয়েও যাবে, যারা কুইকফিক্সের পদ্ধতি বাতলে দেবে। ক্ষেত্র বিশেষে সেগুলো সাময়িক কাজও করবে। নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে তারা কিছু সমস্যার সাময়িক সমাধান পেয়ে যাবে। এটা অনেকটা কঠিন রোগের ক্ষেত্রে ব্যান্ড-এইড লাগানোর মতো বিষয়। ভেতরের কঠিন যে সমস্যাটি রয়ে গেছে সেটা কিন্তু থেকেই যায় এবং কিছুদিন পর নতুনরূপে নতুন উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। যত বেশি মানুষ কুইকফিক্সের দিকে যাবে এবং তাদের ব্যথাকে প্রশমিত করতে চাইবে, তারা তত বেশি তাদের সেই সমস্যাটিকে ভেতরে জিইয়ে রাখবে। তার দুরারোগ্য ব্যাধি তাতে সারবে না। আমরা যেভাবে সমস্যাটাকে দেখেছি, সেটাই আসলে সমস্যা। আমাদের কর্মীদের কাছ থেকে আরও বেশি আনুগত্য চাই। আমরা চাই তারা আরও মন দিয়ে কাজ করুক। তারা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করুক। আমি অফিসে থাকি আর না-ই থাকি, তারা যেন নিজের কাজটি শেষ করে ফেলে। আমরা চাই ২৪ ঘণ্টার এই দিনের ভেতর দিয়ে আরও বেশি কাজ শেষ করতে। হাতের সময়টাকে আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে। তার জন্য টাইম-ম্যানেজমেন্ট টুলস ব্যবহার করি। সেগুলো হয়ত আমাদের কিছুটা সাহায্য করে; কিন্তু সেটা কি আপনি যে শান্তিপূর্ণ জীবন চান তা নিশ্চিত করে? বিয়ে নিয়ে সমস্যা আছে প্রায় প্রতিটি মানুষের। একটা সময়ে গিয়ে তারা টান হারিয়ে ফেলেন। কাউন্সিলিং করেন। তারা কুইকফিক্স চান। এখনই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আসলে কি এখনই সব ঠিক হয়ে যায়? একটু ঠা-া মাথায় যদি চিন্তা করে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন, আমরা প্রচলিত চিন্তায় যেভাবে সমস্যাগুলোকে দেখি সেই দেখাতেই সমস্যা রয়েছে। আমরা মূল সমস্যায় যেতে পারি না। প্রতিটি মানুষের একেকটি প্যারাডাইম আছে। তারা সেই প্যারাডাইম থেকে তাদের সমস্যাটাকে দেখে এবং তার সমাধান খোঁজে। যারা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান চান, সেই নেতৃত্ব কখনই তাদের প্রতিষ্ঠানে মটিভেশনাল স্পীকার নিয়ে আসেন না। এই ধরনের বক্তৃতা সাময়িক উৎসাহ যোগায়। দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে না। দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সমস্যাগুলোর ভেতরে প্রবেশ করা, তার জন্য সঠিক চিকিৎসা দেয়া। তারা সেই সমস্ত প্রসেস তৈরি করে দেন, যার মাধ্যমে কর্মীরা সঠিকভাবে গড়ে উঠবে এবং এখানেও খুব দ্রুত কোন ফলাফল পাওয়া যাবে না। তাদেরও সেই ধাপগুলো পার হয়ে আসতে হবে। চিন্তার নতুন দিগন্ত আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘বেশিরভাগ সমস্যাই আমরা একই ধরনের ধ্যান-ধারণা দিয়ে সমাধান করতে পারব না, যেই ধ্যান-ধারণা সমস্যাটি তৈরির সময় ছিল।’ আমরা যদি একটু নিজেদের দিকে তাকাই, আমাদের চারপাশে তাকাই তাহলে দেখতে পাব জীবন চলার পথে আমরা কত রকমের সমস্যা তৈরি করছি এবং এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই গভীর ও মৌলিক সমস্যা। এগুলো যখন তৈরি হয়েছিল তখন সেগুলো ভাসা ভাসা কোন বিষয় থেকেই জন্ম হয়েছিল। সমস্যা তৈরি হতে পারে ভাসা ভাসা বিষয় থেকে। সমাধান কিন্তু সেই একই জ্ঞান দিয়ে হবে না। একই রকম ভাসা ভাসা দায়সারাভাবে সমাধান সম্ভব নয়। আমাদের নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে, গভীরভাবে ভাবতে পারতে হবে। আমাদের সেই নতুনভাবে চিন্তার পথটাই দেখিয়ে দিচ্ছে ‘দি সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি ইফেক্টিভ পিপল।’ এর মাধ্যমে আপনার নিজের সঙ্গে নিজের এবং নিজের সঙ্গে অপরের কর্মকা- আরও বেশি ইফেক্টিভভাবে করতে পারবেন। বিষয়টি প্রথমে আপনাকে গুছিয়ে দেবে। তারপর আপনার সেই গুণের ওপর ভিত্তি করে অন্যদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে ঠিক করে দেবে। এর প্রতিটি বিষয় নীতিনির্ভর। এখানে বলা হয়েছে, আপনি যদি খুব সুখী একটি বিবাহিত জীবন পেতে চান তাহলে আপনি এমন একজন মানুষ হন যিনি ইতিবাচক শক্তি তৈরি করতে পারেন এবং নেতিবাচক শক্তিকে দূরে রাখতে পারেন। আপনি যদি আপনার টিনএজার সন্তানদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক চান, তাহলে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ বোঝাপড়া, হৃদয় দিয়ে তাদের কথা শোনা এবং শর্তহীন ভালবাসা নিশ্চিত করুন। আপনি যদি অফিসে স্বাধীনতা চান তাহলে আরও বেশি দায়িত্বশীল হোন, অন্যকে সাহায্য করুন এবং কন্ট্রিবিউট করুন। আপনি যদি বিশ্বাসী হতে চান তাহলে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠুন। বিগত কয়েক দশক ধরে অসংখ্য মানুষ, প্রতিষ্ঠান, পরিবার থেকে দেখা গেছে, আপনি যদি ইফেক্টিভ হতে চান তাহলে এর সবচেয়ে ভাল উপায় হলো আগে নিজের ভেতরটাকে ঠিক করা, তারপর বাইরে বের হওয়া। কিংবা আগে নিজের অন্তরের বিষয়গুলোকে ঠিক করে তারপর বাইরের ওপর নির্ভরশীল বিষয়গুলোতে ফোকাস করা। তাতে সফলতা আসে। নিজের ভেতর প্রচ- একটি শক্তিশালী ভিত্তি থাকলে বাইরের চাপ নেয়ার মতো ক্ষমতা কাজে লাগে। অন্যদিকে যারাই বাইরের বা অন্যের সাহায্য নিয়ে সফল হতে গিয়েছেন, তারা সেটা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেননি। তারা বাইরের সহযোগিতা নিয়েছেন, কারণ মনে করেছেন নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত, নিজেদের করার কিছুই নেই। তারা অন্য মানুষের খুত বের করেন, সমালোচনা করেন। তারা নিজেরাই যে নিজের জীবনকে জটিল করে ফেলেছেন সেটা ধরতে পারেন না। তাদের ভেতরে শক্ত কোন ভিত থাকে না। আপনি যদি নিজের ভেতরে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়তে চান তাহলে আমরা যে সাতটি অভ্যাস নিয়ে কথা বলেছি সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারেন। শুভ হোক ২০১৭ এটাই ছিল ২০১৬ সালের আমার শেষ লেখা। লেখাটি প্রকাশ হবে ২০১৭ সালের দ্বিতীয় দিন। সময়টা অন্য যে কোন সপ্তাহের মতো নয়। আমাদের সবার জীবন থেকে শেষ হয়ে গেল আরেকটি বছর। এই গ্রহের যা বয়স, এই বিশ্বব্রহ্মা-ের যা বয়স তাতে এই একটি বছর কোন সময়ই নয়; খুব ক্ষুদ্র সেই সময়। বিশাল সমুদ্রের এক ফোঁটা পানির চেয়েও ক্ষুদ্র। কিন্তু আপনার জীবনের জন্য ক্ষুদ্র নয়। আপনার জীবন খুব সংক্ষিপ্ত। সেই অল্প সময়ের ভেতরই আপনি একটি সুখী যাত্রা করতে চান। জীবন হলো একটি চলন্ত ট্রেনের মতো। বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী ওঠে; আবার নির্দিষ্ট স্টেশনে নেমে যাত্রাবিরতি করে। চলতি পথে দেখা হয় অনেক যাত্রীর সঙ্গে। পরিচয় হয়, খানিকটা সময় পার হয়। এর বাইরে আর কিছুই নয়। সেই যাত্রাটা কতটুকু অর্থবহ হলো, সেটাই হলো মূল কথা। আশা করছি আপনার জীবনে সাতটি অভ্যাস ঠিকভাবে তৈরি করতে পারলে বাকি যাত্রাটুকু অনেক উপোভোগ্য হবে। শুভ নববর্ষ! ২০১৭ সালটি আপনার জন্য শুভ হোক। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ [email protected]
×